নিজস্ব প্রতিবেদক: পদ্মাসেতু হওয়ার পর যশোর বিভিন্ন দিক থেকে দেশের অন্যতম বিজনেস হাব হতে যাচ্ছে। ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে আয়োজিত এনবিএফআই মেলা-২০২২ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। বণিক বার্তার আয়োজনে বুধবার দুপুর ১২টায় যশোরের ওরিয়ন ইনটারন্যাশনাল হোটেলে দিনব্যাপী এ মেলার উদ্বোধন করেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। ঢাকার বাইরে প্রথমবারের মতো যশোরে দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, যশোর দেশের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক এলাকা। এ জেলার শাক-সবজি, বিভিন্ন ধরনের ফল, ফুল, মিষ্টি, খেজুরের রস বিখ্যাত। পদ্মাসেতু হওয়ায় অর্থনৈতিক সুযোগ আরও বেড়েছে। অব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে বণিক বার্তার এ আয়োজন মূলত সামাজিক দায়বদ্ধতারই বহিঃপ্রকাশ। ব্যবসা মূলত ঢাকা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক হয়ে আছে। এতে বৈচিত্র্য আনা দরকার। আর্থিক খাত হলো আমাদের শিরা-উপশিরা। আর এই আর্থিক খাতের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো অব্যাংকিং আর্থিক খাত। জামানতের বাইরে ব্যবসার সম্ভাবতা ও ঐতিহ্য চিন্তা করে অব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো লোন দিয়ে থাকে। ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা ঋণখেলাপি। বড় বড় কোম্পানিগুলো ঋণখেলাপি করে।
কিন্তু অব্যংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এ ঝুঁকি কম। এখানে কম সুদে লোন দেয়া হয়। যশোরে বিনিয়োগে অনেক সুযোগ রয়েছে। কৃষি খাতে বিনিয়োগের অপার সুযোগ রয়েছে। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত দেশের ৬০ ভাগ শাক-সবজির যোগান দেয়। এসব কারণে সব ব্যাংকের শাখা এই জেলায় আছে। এসএমই খাতে সবচেয়ে বেশি সেবা দেয় অব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আশা করবো এ জেলায় ব্যাবসায়ীরা বিনিয়োগ বাড়াবে। বাংলাদেশ এখন বিভিন্ন সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দেশ। ভারতের চেয়ে মাথাপিছু আয় ও শিক্ষার হার আমাদের বেশি। শিশুমৃত্যুর হার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম। বনিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) ডা. নাসির উদ্দিন বলেন, যশোর ব্রিটিশ বাংলার প্রথম স্বাধীন জেলা।
কিছুদিন আগেও প্রধানমন্ত্রী যশোরকে টার্গেট করেছেন অর্থনৈতিক বিস্তারের ক্ষেত্রে। যশোরকে আমরা আগামীর বিজনেস হাব হিসেবে ধরে রেখেছি। যারা বিনিয়োগ করবেন যশোরকে মাথায় রাখবেন। খুলনা বিভাগের অর্থনীতি যশোরকে ঘিরেই। যশোরের সবজি ও ফল ঢাকার ৭০ ভাগ কাভার করে। ফুলের রাজধানী যশোর। যশোরে বৈশাখ মাসে ৬-৮ কোটি টাকার ফুলের বিজনেস হয়। ব্যাংকের যে সমস্যা আছে নন ব্যাংকিং এ আসলে সেগুলো অনেকটা কমে যায়। জনগণের জন্য সুদহার আরও কমিয়ে আনার আহ্বান জানাচ্ছি। তাহলে দক্ষিণ-পশ্চিম আরও এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। যশোর ছাড়াও অন্যান্য জেলাগুলোতে এ মেলার আয়োজন করলে পুরো দেশ এগিয়ে যাবে।
যশোর-৬ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীরে সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কি পর্যায়ে লোন দিবে, কাদের দিবে সেটা পরিষ্কার করতে হবে। যশোরের মানুষ খেলাপি করে না। যশোরের মানুষ ভালো। আতিথেয়তা ও কমিটমেন্ট পূরণে বদ্ধ পরিকর। ব্যাংকগুলোতে যখন লোন নিতে যাই তাহলে জামানত দিতে হয়। নতুবা লোন পাওয়া যায় না। লোনের বিষয়টা পরিষ্কার করলে আরও সুবিধা হবে। রাজধানীর পর যশোরে প্রায় সব ব্যাংকের শাখা আছে। এখানকার সবজি সারা দেশে যায়। পদ্মা সেতু বা রেলই নয়, রূপসা সেতু, কালনা সেতু এসব যশোরের অহংকার। আমরা তিন ঘণ্টায় ঢাকা পৌছে যাচ্ছি। আগে সবজি পৌঁছাতে অনেক খরচ হতো। এখন দ্রুত পৌছে যায়, কম খরচে। বঙ্গবন্ধু যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে চেয়েছেন। সেটা তার কন্যা পূরণ করছেন। আজ বাংলাদেশ উন্নত বাংলাদেশ। খুলনা বিভাগীয় শহর হলেও বিজনেসে লিড দিচ্ছে যশোর।
বক্তব্য রাখেন যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল হাসান, বিএলএফসিএ এর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংক খুলনা অফিসের নির্বাহী পরিচালক এস. এম. হাসান রেজা, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও খাজা শাহরিয়ার, ডিবিএইচ ফাইন্যান্স পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও নাসিমুল বাতেন, লংকা এলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কান্তি কুমার সাহা, ইউনাইটেড ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আবুল আহসান, আইডিএলসি ফাইনান্স এর ডিএমডি সৈয়দ জাভেদ নূর প্রমুখ।
এছাড়া দুপুর আড়াইটায় দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালযয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন এবং বাংলাদেশ ব্যাংক খুলনা অফিসের নির্বাহী পরিচালক এস. এম. হাসান রেজা। সঞ্চালনা করেন বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ। উপস্থিত ছিলেন যশোর সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি ও দৈনিক কল্যাণ সম্পাদক একরাম-উদ-দ্দৌলাসহ জেলার বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা।
আরও পড়ুন: দ্রুত এগোচ্ছে যশোর-ঢাকা রেলপথ নির্মাণ