নিধন কর্মসূচি ব্যর্থ করে ক্ষুদ্র কীটের দাপট
সালমান হাসান: প্রজনন মৌসুম না হলেও যশোরে শীতে বেড়েছে মশার বংশবিস্তার। প্রকোপ বাড়ায় রাতের মত দিনের বেলায়ও মশারা হুল ফোটায়। ফলে ক্ষুদ্র কীট মশার উৎপাতে চরম অতিষ্ঠ শহরবাসী। অথচ পৌরসভার মশক নিধন কর্মসূচি শেষের একমাসও পেরোয়নি। গত ২৩ নভেম্বর যশোর পৌরসভায় মাসব্যাপী মশক নিধন শুরু হয়। কিন্তু এরই মধ্যে মশার দৌরাত্ম্য আবারো বেড়েছে অস্বাভাবিক মাত্রায়।
কীটতত্ত্বে অভিজ্ঞদের অভিমত, মশার বাড়া কমা নির্ভর করে মূলত আবহাওয়ার ওপর। শীতে মশার প্রজনন এক প্রকার বিরতি দশায় থাকলেও গরমে পুনরায় শুরু হয়। উষ্ণতা বাড়লে শীতের প্রকৃতিতে নিষ্ক্রিয় ডিম ফুটতে থাকে। তবে বৃষ্টি হলে মশার ফার্টিলিটি রেট (প্রজনন হার) বেড়ে যায়। এছাড়াও মশক নিধনে কীটনাশকের ‘ল্যাথাল ডোজ’ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মাত্রা ঠিক না হলে মশারা মরে না। এক্ষেত্রে লার্ভা (শুককীট) বা অ্যাডাল্ট (পূর্ণবয়স্ক) কোনটির নিধন হলো সেটিও গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু যশোরে ঘটছে ঠিক তার উল্টোটা। শীতের মধ্যেও প্রকোপ বেড়েছে। বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে সর্বত্র চলছে মশার দাপট। পৌরসভার মাসব্যাপী চালানো নিধন কর্মসূচির পরও উপদ্রব একটুকুও কমেনি। বরং মশার দৌরাত্ম্য আরো বেড়েছে।
যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের প্রাণি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক মহসীন উদ্দিন মনে করেন, মশক নিধনের ক্ষেত্রে অনেক সময় কীটনাশকের ‘ল্যাথাল ডোজ’ বা মারণ মাত্রার সঠিক প্রয়োগ হয় না। এতে না মরে মশারা উল্টো কীটনাশক ‘রেজিসট্যান্স’ (সহনশীল) হয়ে যায়। তার মতে, নিধন কার্যক্রমের পর মশার ঘনত্ব পরিমাপ করে দেখা দরকার। তাহলে মশার মারতে ব্যবহৃত ওষুধের কার্যকারিতা ও মঠিক মাত্রাও বোঝা সম্ভব। তিনি বলেন, শীতের শুরুর দিকে বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর বৃষ্টি হলে মশার ফার্টিলিটি রেট (প্রজনন হার) যায়। সেই কারণেও মশার পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে।
তবে মশার দৌরাত্ম্য পরিমাপের সক্ষমতা নেই বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা উত্তম কুমার কুন্ডু। তিনি বলেন, অত্যন্ত ভালো মানের ও দামী কীটনাশক ব্যবহার করে মাসব্যাপী মশক নিধন চালানো হয়েছে। ২টি ফগার ও ২৭টি হ্যান্ড মেশিন দিয়ে মশা নিধন চালানো হয়। এক মাস ধরে পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডে মশক নিধনের এই কার্যক্রম চলে। মশার বংশ বিস্তার ফের বৃদ্ধির কারণে ফের নিধন কর্মসূচি হাতে নেয়া ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি জানান, বিষয়টি পৌর পরিষদের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। তবে আপাতত হচ্ছে না।
‘দিন রাতের কোন ঠিক নাই। মশায় সব সময় কামড়ায়’ তিক্ততাভরে এমনটিই বলেন যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের শিক্ষার্থী ফাহমিদ ইকবাল। তার ভাষ্য, রাতের মত দিনেও মশার কয়েল জ¦ালিয়ে রাখতে হয়। টাঙাতে হয় মশারিও। তার সাথে সুর মিলিয়ে শহরের খড়কি এলাকার আরেক শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম বলেন, মশার উৎপাতে শুয়েও শান্তি নেই, বসেও শান্তি নেই। দিন বা রাত যখনই বিছানায় যাই হয় মশার কয়েল জ¦ালাই না হয় মশারি টাঙাই। দিনের বেলাতেও অনেক সময় মশারি টাঙিয়ে পড়াশোনায় বসেন বলে জানান তিনি। চারখাম্বার বাসিন্দা প্রবীর দাস জানান, কোন কিছুতেই দমন হচ্ছেনা মশা। কয়েল জ¦ালিয়ে রেখেও নিস্তার নেই। সুযোগ পেলেই হুল ফুটিয়ে দিচ্ছে।
যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের প্রাণি বিদ্যা বিভাগের প্রধান মদন কুমার সাহা জানান, অপরিচ্ছন্ন ড্রেন-নালা-নর্দমা মশার বংশ বিস্তারের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে। তাই এগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে যাতে পানির প্রবাহ ঠিক থাকে।