লাবুয়াল হক রিপন
যশোরে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ময়মুর হোসেন মনু খুনের রহস্য আজও উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। একের পর তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হলেও খুনিদের সনাক্ত ও গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। এতে করে ন্যায় বিচার পাওয়ার আশংকা করছেন নিহতের পরিবার।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সদরের পাঁচবাড়িয়া গ্রামের একটি ডোবা থেকে ওই শিক্ষকের লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহতের ভাই মামলার বাদী নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, যশোর শহরের বকচর প্রাইমারি স্কুলের পাশের জনৈক মিজানুর রহমানের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন ময়মুর হোসেন মনু। ময়মুর হোসেন যশোর সদর উপজেলার মুনসেফপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে চাকরি করতেন। সেখান থেকে অবসরের পর একটি ইন্সুরেন্সে কাজ করার জন্য তাকে প্রস্তাব দেন তার আত্মীয় বাঘারপাড়া উপজেলার কেশবপুর গ্রামের হাসান আলী বিশ^াস। সেখানে ময়মুর হোসেন ২০২০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা হাসান আলীর মাধ্যমে বিনিয়োগ করেন।
কিন্তু হাসান আলী ইন্সুরেন্সে ময়মুরকে গ্রাহক না করে নিজের স্ত্রী ও মেয়েকে গ্রাহক করেন। ফলে ইন্সুরেন্সে লভ্যাংশটি হাসান আলী তার স্ত্রী ও মেয়ের একাউন্টে জমা হয়। কিছুদিন পরে জানতে পেরে হাসান আলীর সাথে ময়মুরের মনোমালিন্য হয়। বিনিয়োগকৃত টাকা ফেরৎ চান ময়মুর।
কিন্তু টাকা ফেরৎ দিতে নানা টালবাহানা করেন হাসান আলী। এক পর্যায় স্থানীয়ভাবে সালিশ বিচারও হয়। তবে হাসান আলী নিকটাত্মীয় হওয়ায় ময়মুর তাকে তেমন কিছু বলতে পারছিলেন না। পাওনা টাকা আদায়ে বারবার হাসান আলীর কাছে গেলে বিভিন্ন সময় হুমকি দিতেন। ২০২১ সালের ১০ মে ওই টাকার বিপরীতে হাসান আলী রূপালী ব্যাংক খাজুরা শাখার একটি চেক দেন ময়মুর হোসেনকে। ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় হাসান আলীকে চাপ দিতে থাকেন ময়মুর হোসেন। টাকাগুলো আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ময়মুরকে হত্যার পরিকল্পনা করে হাসান আলী। গত ১০ সেপ্টেম্বর বিকেলে পাওনা টাকা আনার জন্য মোবাইল করে খাজুরা বাজারে যেতে বলেন।
এরপর থেকে ময়মুরের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় বিভিন্নস্থানে খোঁজখবর নিয়ে তার কোন সন্ধান না পেয়ে ১৩ সেপ্টেম্বর তার স্ত্রী শিরিনা খাতুন কোতোয়ালি থানায় একটি জিডি করেন। জিডি করার এক মাস পরে একই বছরের ১০ অক্টোবর সদর উপজেলার যশোর-মাগুরা মহাসড়কের পাঁচবাড়িয়া-বালিয়াডাঙ্গার একটি ডোবার মধ্যে থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে।
এই ঘটনায় নিহতের ভাই নজরুল ইসলাম অজ্ঞাতনামা আসামি দিয়ে ১২ অক্টোবর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে তৎকালীন কোতোয়ালি থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেসন্স) পলাশ বিশ্বাস তদন্ত করছিলেন। তার অন্যত্র বদলি হওয়ায় বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন এসআই তাপস কুমার আঢ্য।
এদিকে মামলার বাদী নজরুল ইসলাম আরো জানিয়েছেন, থানা পুলিশ ৮ মাসেও হত্যার কারণ উদঘাটন এবং খুনিদের সনাক্ত করতে পারেনি। ফলে ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এছাড়া মামলার বাদী অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআইতে) দেয়ার জন্য যশোরের পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করেছেন।
অন্যদিকে, নিহতের স্ত্রী শিরিনা খাতুনের দাবি হাসান আলী বিশ্বাস পাওনা ৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ময়মুর হোসেনকে খুন করেছে।
এসআই তাপস কুমার আঢ্য বলেছেন, ডাক্তারি পরীক্ষায় হত্যা নাকি অন্য কিছু আইডেন্টিফাই করতে পারেনি। হাসান আলী বিশ্বাস ও ছেলে টিটোসহ তিনজনকে এরআগে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। হয়তোবা তারাই খুন করতে পারে। কারণ মৃত্যুর আগে ময়মুর হোসেনের সাথে হাসান আলীর একাধিকবার ফোনে কথা হয়েছে।