যশোরে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা
নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে না। বিগত সরকারের চিহ্নিত ক্যাডারদের কাছে ছিল আধুনিক অস্ত্র। যা দিয়ে তারা মানুষ হত্যাসহ টেন্ডারবাজি করেছে। কিন্তু সেইসব অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের কোন তৎপরতা নেই। আগামী নির্বাচন আসলে অস্ত্রের ঝনঝনানি হবে। তখন পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। এজন্য অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।
রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) কালেক্টরেট সভাকক্ষ অমিত্রাক্ষরে অনুষ্ঠিত জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এসব কথা বলেন সদস্যরা। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম।
সভায় উল্লেখ করা হয়, যশোর জেলায় এক মাসে ১০টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৩ জন ও আহত হয়েছেন ৯জন। সেই সাথে চুরি সংঘটিত হয়েছে ৩৬টি। জেলায় সড়ক দুর্ঘটনা, শহরে যানজট ও চুরি বেড়ে যাওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সদস্যরা বলেন, দূর্গাপূজায় কঠোর পদক্ষেপ নেয়ায় শহরে যানজট কম ছিল। সেই পদক্ষেপ ধরে রাখতে না পারায় আবার যানজট বেড়েছে। পুরো শহরজুড়ে চলছে অবৈধ অটো রিক্সা ও ইজিবাইক। মাদকাসক্ত যুবকরা বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর কারনে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে।
এসময় জেলা প্রশাসক আরো বলেন, সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃৃবন্দের সহযোগিতায় দূর্গাৎসব শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে। যশোর জেলা সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে। এ বিষয়ে পৌরসভা, ট্রাফিক পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে সভা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সেই সাথে মোবাইল কোর্ট আরো বেশি জোরদার করার জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেন। এসময় তিনি বলেন বেশি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা হলে অপরাধ কমবে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইরুফা সুলতানার উপস্থাপন করা তথ্যে জানানো হয়, খুলনা বিভাগে মোট ৩৩টি সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে। এর মধ্যে যশোর জেলায় সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে ১০টি। যা অন্য জেলার চেয়ে বেশি। নিহত হওয়ার সংখ্যা ৩০ জনের মধ্যে যশোরে ১৩ জন, আহত ২৯ জনের মধ্যে ৯ জন। এছাড়া বাগেরহাটে ৭টি সড়ক দুর্ঘটনা আহত ৬, নিহত ১, সাতক্ষীরায় ৪টি সড়ক দুর্ঘটনা আহত ৩, নিহত ৪, নড়াইলে ২টি সড়ক দুর্ঘটনা আহত ২, নিহত ২, মাগুরায় ৩টি সড়ক দুর্ঘটনা আহত ৩, ঝিনাইদহে ৩টি সড়ক দুর্ঘটনা আহত ২, নিহত ৩, কুষ্টিয়ায় ৩টি সড়ক দুর্ঘটনা আহত ৩, নিহত ১, চুয়াডাঙ্গায় ১টি সড়ক দুর্ঘটনা আহত ১, নিহত ৬জন।
জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, দলের কোন কর্মী যদি অপরাধের সাথে জড়িত থাকে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সেই সাথে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলা হলেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। বর্তমানে জেলায় চুরি বেড়েছে। এর সাথে মাদকাসক্ত ও বেকার যুবক জড়িত। এ ব্যাপারে পুলিশি তৎপরতা বাড়াতে হবে। কোন রাজনৈতিক দল এদের সাপোর্ট দেবে না। মাদকাসক্ত যুবকরা বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। দুর্গাপূজায় যানজট নিরসনে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ায় যানজট কম ছিল। এ পদক্ষেপ ভেঙ্গে পড়ায় শহরে যানজট বেড়েছে। ইজিবাইক, অটোরিক্সা কোথা থেকে তৈরি হচ্ছে, তার তথ্য নিয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। সেই সাথে অ্যাম্বুলেন্সের হুইসেল ও মাইকিং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। এটা কেন বন্ধ হচ্ছেনা বলেও তিনি প্রশ্ন করেন।
যশোর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, প্রতি মাসের আইনশৃঙ্খলা সভায় রাস্তার উপর বাস থামিয়ে রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়। অথচ এটা বন্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয় না। একদিকে রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী, অন্যদিকে রাস্তার ৮০ শতাংশ জায়গা জুড়ে বাস রাখায় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। বাস মালিকদের সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ের সমাধান করা উচিত।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, শহরে অটোরিক্সা ও ইজিবাইকের কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। আর এগুলো যেসব জায়গা চার্জ দেয় সেটা বৈধ কিনা খোঁজ নেয়া দরকার। তিনি বলেন, জমিজমা সংক্রান্ত ঘটনায় স্থানীয়দের সালিশ করার দায়িত্ব দেয়া হয়। থানায় অভিযোগ নেয়া হয় না। এতে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
জেলা জামায়াতের আমির গোলাম রসুল বলেন, জমি সংক্রান্ত সালিশে বাণিজ্য করা হচ্ছে। যাদের টাকা কম আছে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে আইনের মাধমে ব্যবস্থা নিতে হবে। রাস্তার উপর বাস রাখা বন্ধের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলেন।
প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন বলেন, যশোরের রাস্তা খারাপ থাকায় দুর্ঘটনা ঘটছে। এজন্য চলাচলে সতর্ক থাকতে হবে। অটোরিক্সা ও ইজিবাইকের বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিজিবির সহকারী পরিচালক সোহেল আল মুজাহিদ বলেন, সীমান্ত দিয়ে মাদক ও অস্ত্র দেশে আসতে না পারে, এজন্য পেট্রোলিং জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি গোয়েন্দারাও কাজ করছে। এ কাজে সীমান্তবাসীদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
যুব জামাতের সেক্রেটারি কামরুল ইসলাম বলেন, এখনো অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। নির্বাচন আসলে অস্ত্রের ঝনঝনানি হবে। আগামী পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। এজন্য অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।
এসময় আরও বক্তব্য রাখেন আইন শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য লোকসমাজ পত্রিকার প্রকাশক শান্তনু ইসলাম সুমিত, ফিরোজ বুলবুল কলি, প্রেসক্লাব যশোরের সাবেক সহসভাপতি নূর ইসলাম প্রমুখ।

 
									 
					