যশোর মেডিকেল কলেজের হিসাব রক্ষক কোটি কোটি টাকা মালিক, অনুসন্ধানে দুদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর মেডিকেল কলেজের হিসাব রক্ষক (সদ্য অবসরে যাওয়া) জয়নাল আবেদীন অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। চাকরি করাকালীন অবৈধ অর্থ উপার্জন করে তিনি যশোর পৌর এলাকার অন্তত ৪টি স্থানে মূল্যবান জমি ক্রয় করেছেন। যার দাম অন্তত ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা। এ সব বিষয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এদিকে জয়নালের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে যখন দুদক কাজ করছে; তখন তিনি হজ পালনে সৌদি আরবে গেছেন।
সূত্র মতে, ১৯৮৮ সালে যশোর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অধীন ‘স্টোর কিপার’ পদে যোগদান করেন জয়নাল আবেদীন। পরবর্তীতে ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে ২০১২ সালে স্ববেতনে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হিসাব সহকারী পদে যোগ দেন। ২০২৪ সালের এপ্রিলে অবসরে গেছেন তিনি। মেডিকেল কলেজে হিসাব রক্ষক না থাকায় তিনি এক যুগ হিসাব বিভাগের পুরো দায়িত্বে পালন করেন। ফলে পেছনে তাকানোর সময় ছিল না তার। দুই হাত দিয়ে শুধু অর্থ উপার্জন করেছেন। নিয়োগ বাণিজ্য, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, বিভিন্ন তদবির ও টেন্ডারবাণিজ্যে তিনিই ছিলেন মূল হোতা। অবৈধ অর্থ উপার্জন করে নিজ নামে ও স্বজনদের নামে কিনেছেন দামি জমি, করেছেন আলিশান বাড়ি।
জানা যায়, যশোর শহরের রেজপাড়া বনানী রোডে ৫ কাঠা জমি ক্রয় করে বর্তমানে সেখানে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। এর বাজার মূল্য আড়াই কোটি টাকা। এ বাড়ির হোল্ডিং নং-৬৪২। আর শহরের নাজির শংকরপুর জিরোপয়েন্ট মোড়ে কিনেছেন ১০ কাঠা জমি। সেখানে সুউচ্চ প্রাচীর দিয়ে বর্তমানে ১টি পাকাঘর নির্মাণ করে রেখেছেন। যার বাজার মূল্য দুই কোটি ত্রিশ লাখ টাকা। এছাড়া যশোর পৌরসভার ষষ্ঠীতলায় সুরেন্দ্রনাথ রোডে তার রয়েছে ৪তলা বিশিষ্ট ১টি ভবন। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৪ চার কোটি টাকা। হোল্ডিং নং-৯৬২। অন্যদিকে, খুলনা-বেনাপোল মহাসড়ক সংলগ্ন মুড়ালি মোড় (শংকরপুর বাস টার্মিনালের মাঝামাঝি জায়গায়) করিম ফিলিং স্টেশনের নিকট প্রায় ৩০ কাঠা জমি ক্রয় করেছেন। বর্তমানে সেখানে সুউচ্চ সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে আমগাছ রোপণ করা রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ৩ কোটি বিশ লাখ টাকা। চাঁচড়া মোড় শ্রমিক ভবনের পার্শ্ববর্তী এলাকায়ও তিনি জমি ক্রয় করেছেন। সেখানে তার ক্রয় করা জমির পরিমাণ ৮ কাঠা। রাজধানীর বুকেও তার প্লট-ফ্ল্যাট আছে জনশ্রুতি রয়েছে। হিসাব সহকারীর মতো চাকরি করে এতো সম্পদের মালিক কীভাবে হলেন তা নিয়ে তার পরিচিতজনরা প্রায়ই গল্প করেন। তাদের অনেকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন টেন্ডার, বিভিন্ন সামগ্রী ক্রয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে এ যাবৎ ২৩৫ জন লোকের চাকরি দিয়েছেন। সর্বশেষ যশোর মেডিকেল কলেজে নিয়োগ বাণিজ্য প্রকাশ্যে আসে। একপর্যায়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। যা স্থানীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল।
এদিকে, সরকারি স্বল্প বেতনে চাকরি করা একজন কর্মচারী অঢেল সম্পদের মালিক হওয়ায় সম্প্রতি দুদকের সচিব বরাবর তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে লিখিতভাবে দাবি জানানো হয়। (অভিযোগ দেয়া ব্যক্তির সুরক্ষায় নাম উল্লেখ করা হয়নি)। যা আমলে নিয়েছে দুদক। সম্প্রতি দুদকের যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়কে এ বিষয়ে খোঁজখবর নিতে বলা হয়।
জানতে চাইলে দুদকের যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক কৃষ্ণপদ বলেন, যশোর মেডিকেল কলেজের হিসাব রক্ষক (সদ্য অবসরে যাওয়া) জয়নাল আবেদীনের সম্পদ অর্জনের বিষয় অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
এদিকে জয়নালের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে যখন দুদক কাজ করছে; ঠিক তখন তিনি হজ পালনে সৌদি আরবে রয়েছেন বলে তার নিকটজনরা জানিয়েছেন। তারপরও তার বক্তব্য নিতে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন দিয়েছিল দৈনিক কল্যাণ। কিন্তু তিনি রিসিভ করেননি।