নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর শহরের যানজট দূর করতে ফুটপাতে উচ্ছেদ অভিযান চলছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কোন ছাড় দেয়া হবে না। বুধবার সকালে জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম এ কথা বলেন। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কালেক্টরেট সভাকক্ষ অমিত্রাক্ষরে অনুষ্ঠিত সভায় তিনি আরো বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে মামলার সংখ্যা বেশি হওয়া মানে আইন শৃংখলার অবনতি না। জেলায় অপহরণ বেড়েছে। যেটা আমাদের জন্য এলার্মিং। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে উঠতি বয়সী কিশোর গ্যাংদের আড্ডাবাজি বন্ধের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সসভায় অপরাধ চিত্রে দেখা গেছে, মে মাসে জেলায় খুন, মানবপাচার, অপহরণ, গাড়ি চুরি, অন্যান্য চুরি, সড়ক দূর্ঘটনা, অস্ত্র আইনে মামলা, বিষ্ফোরক দ্রব্যে মামলাসহ চেরাচালান বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে কমেছে দস্যুতা, অন্যান্য ভাবে নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন, মাদকদ্রব্য ও অন্যান্যভাবে মামলা।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদারের সঞ্চালনায় জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ও যশোর পৌরসভার প্রশাসক রফিকুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার, সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা, যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন সাফায়েত, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন, জেলা জামায়াত ইসলামীর আমির অধ্যাপক গোলাম রসুল, যশোর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান খান, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, লোকসমাজ পত্রিকার সম্পাদক শান্তনু ইসলাম সুমিত প্রমুখ।
সভায় বর্তমান সময়ে শহরে চলমান উচ্ছেদ অভিযান, যানজট সমস্যা, আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান ও নেতাকর্মীদের এলাকায় বিচরণ, হাসপাতাল ক্লিনিকের বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা বিষয়ে আলোকপাত করেন উপস্থিত সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক দলের ব্যক্তিবর্গরা।
লোক সমাজ পত্রিকার সম্পাদক শান্তনু ইসলাম সুমিত ও যশোর চেম্বর অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান খান হাসপাতাল ও ক্লিনিকের অব্যবস্থাপনার কথা তুলে ধরেন। তারা বলেন, হাসপাতালগুলোতে দালাল ও সিন্ডিকেট দূর করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। অনেক সময় প্রাইভেট ক্লিনিকে প্যাথলজি থাকে না। এতে করে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ে। মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করা হচ্ছে। এছাড়া, ফুটপাত দখল মুক্ত করার বিষয়ে সাধুবাদ জানান তারা।
সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়ম মেনে যশোরের ৮০ শতাংশ হাসপাতাল চলে না। মালিকরা বিভিন্ন ভাবে স্বাস্থ্য বিভাগকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, যশোরে গত মাসে আইন শৃংখলার ব্যাপক অবনতি হয়েছে। এর জন্য পুলিশ প্রশাসনের স্থিতিশীলতাকে দায়ি করবো। থানা, ক্যাম্পের অনেক এসআই-ওসি আওয়ামী লীগের দোসর। তারা বর্তমান সময়ের এই পরিবর্তনকে মানতে পারছে না। সন্ত্রাসীদের গডফাদাররা এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে।
জেলা জামায়াত ইসলামীর আমির গোলাম রসূল বলেন, জেলায় যানজট প্রকট আকার ধারণ করেছে। কোতোয়ালি থানা থেকে মনিহার পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে বড় বড় ব্যবসায়ীরা জিনিস পত্রে রাস্তা দখল করে রেখেছে। শুধু ফুটপাত উচ্ছেদ করলে হবে না। এই সব ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আওয়ামী লীগের দোসরদের ধরতে প্রশাসনের কাছে আমরা তালিকা দিয়েছিলাম। তারপরও কোনো কাজ ঠিক মত হচ্ছে না।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ও যশোর পৌরসভার প্রশাসক রফিকুল হাসান বলেন, ফুটপাত উচ্ছেদ করতে গিয়ে আমরা মিশ্র প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। কাজ করলেও দোষ, না করলেও দোষ। বীরমুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন মনি সড়কে দোকান বসানোর কারণে প্রতিনিয়ত ছিনতাই, ইভটিজিং হয়। এসব কারা নিয়ন্ত্রণ করবে। দড়াটানার ভৈরব হোটেল নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ৩ বার ভেঙ্গেছি। আর কত বার ভাঙ্গা যায়। আমরাও তো মানুষ। আমরা উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে যাবো। দড়াটানার ফল মার্কেট নিয়ে রাজনৈতিক দলের নেতারা, সাংবাদিকরা বলছেন তাদের জন্য সুযোগ দিতে। আমরা কেন ফুটপাত দখলের সুযোগ দেবো। ব্যবসা করতে হলে তারা স্থায়ী দোকান ভাড়া নিয়ে করুক।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার বলেন, জেলার রাজনৈতিক ব্যক্তিরা সচেতন হলে অপরাধ কম হবে। মে মাসে যে খুন হয়েছে রাজনৈতিক অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে। আমরা কাজ করি বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। আমাদের পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আপনারা যেমন নজর রাখছেন, জবাবদিহি আশা করেন তেমনি অন্যান্য স্টেক হোল্ডারের সাথে কথা বলেন। আপনাদের অনেক লোক বিচার প্রাকটিস করেন। বিগত দিনে চেয়ারম্যানদের দ্বারা তো আপনারা ক্ষতিগ্রস্ত, তাহলে আপনারা কেন মামলা করেন না? যার নামে মামলা নেই তাকে কিভাবে গ্রেফতার করবে পুলিশ। এছাড়া কোনা পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে আপনারা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারেন।