অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ায় স্বস্তি ফেরেনি এলাকাবাসীর
নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরের অভয়নগর উপজেলার শিল্প ও বাণিজ্যিক নগরী নওয়াপাড়ায় দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও অস্ত্রের মহড়া চালিয়ে বেড়ানো কুখ্যাত মাদক সিন্ডিকেট প্রধান রুহুল আমিন বিশ্বাস (৪০) অবশেষে পুলিশের হাতে আটক।
গত মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) রাত সাড়ে দশটার দিকে অভয়নগর থানা পুলিশ নওয়াপাড়া পাইকারি মাছবাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে।
পুলিশ জানায়, আটক রুহুল আমিন মৃত ইব্রাহীম বিশ্বাসের ছেলে। সে দীর্ঘদিন ধরে নওয়াপাড়া স্টেশন ও পাইকারি মাছবাজার এলাকায় একাধিক মাদক স্পট খুলে প্রকাশ্যে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল। স্থানীয়দের অভিযোগ—রুহুল ও তার অনুসারীরা এলাকায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, বোমাবাজি ও অস্ত্রের মহড়ার মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল।
উল্লেখ্য, গত ১৮ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় একটি ভিডিও, যেখানে দেখা যায় সংঘবদ্ধ একদল যুবক দেশি ও বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র হাতে প্রকাশ্যে মহড়া দিচ্ছে। ভিডিওটির নেতৃত্বে ছিলেন রুহুল আমিন বিশ্বাস।
ভিডিও ফুটেজে আরও দেখা যায়, রুহুলের সহযোগী আসাদুল ওরফে আসাদ একটি বিদেশি পিস্তল হাতে দাঁড়িয়ে আছে, পাশে ইউসুপ, তাজুসহ আরও কয়েকজন দেশি অস্ত্র হাতে উল্লাস করছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়তেই নওয়াপাড়ায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। আতঙ্কিত হয়ে পড়ে সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আনেন। পরে অভয়নগর থানার দুটি বিশেষ টিম অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার রাতে রুহুলকে আটক করে।
পুরোনো মামলায় গ্রেফতার, অস্ত্র উদ্ধার হয়নি
অভয়নগর থানা সূত্র জানায় নওয়াপাড়া পীরবাড়ির বাসিন্দা কামরান ও নওশের আলী শেখের ওপর সন্ত্রাসী হামলার মামলায় আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানায় রুহুলকে আটক করা হয়। তবে তার কাছ থেকে কোনো অস্ত্র উদ্ধার করা যায়নি।
আতঙ্কের শহর নওয়াপাড়ার পাইকারি মাছবাজার, স্টেশন রোড ও আশপাশের এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় রয়েছে মাদক ও অস্ত্র সিন্ডিকেট। স্থানীয়দের অভিযোগ—রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে গড়ে ওঠা এই সিন্ডিকেটগুলো মাদক ব্যবসার পাশাপাশি এলাকায় ভয় ও প্রভাব বিস্তার করতে অস্ত্র ব্যবহার করে।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, “রুহুলের ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পেত না। পুলিশ আসলেও কেউ সাক্ষী দিতে চাইত না।”
আরেকজন বাসিন্দা জানান, “প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে ঘোরা, মারামারি, হামলা, বোমাবাজি—এসব ছিলো রুহুলের নিত্যদিনের ঘটনা। পুলিশ এবার যদি কঠোর ব্যবস্থা নেয়, তাহলে হয়তো শান্তি ফিরবে।”
অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ায় স্বস্তিহীনতা সাধারণ মানুষ সাময়িক স্বস্তি পেলেও এখনো ভয় কাটেনি। তাদের আশঙ্কা—রুহুলের হাতে থাকা অস্ত্রগুলো উদ্ধার না হলে ও তার বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার না করলে অচিরেই পরিস্থিতি আগের অবস্থায় ফিরে যাবে।
জামিনে বেরিয়ে এলেই আবারও আগের মতো দাপট দেখাবে। পুলিশকে এবার শেষ পর্যন্ত যেতে হবে।
এবিষয় অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম রবিউল ইসলাম বলেন, রুহুলকে পুরনো একটি মারামারি মামলা আটক করা হয়েছে। এছাড়া তার কাছ থেকে কোন অস্ত্র উদ্ধার হয়নি।”
“অস্ত্র হাতে মহড়ার ভিডিওটি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, কয়েক মাস আগের ভিডিও ওটি তখনও তাকে আটক করা হয়েছিল। এবার আবার গ্রেফতার করা হয়েছে।
গোপন সূত্রের মধ্যে জানা যায়, ওসি তাকে আটকের কথা বললেও আগে মারামারি মামলায় আটক হয় নি। পরে কোটে আত্মসমর্পণ করে জামিনে বেরিয়ে আসে রুহুল।
