কামরুল ইসলাম, অভয়নগর
ঠিাকাদার নির্মাণকাজ বন্ধ রেখে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করায় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে অভয়নগরে সড়কে বাঁশ বেঁধে যানচলাচল আটকে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এর আগে জনদুর্ভোগের বিবরণ তুলে ধরে দৈনিক কল্যাণ পত্রিকায় দুইবার সংবাদ প্রকাশিত হয়।
প্রায় ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে যশোরের অভয়নগর উপজেলার ভাঙ্গাগেট বাদামতলা-আমতলা ভায়া মরিচা নাউলী বাজার সড়ক ২১ কিলোমিটার উন্নয়ন কাজ চলছে। সড়কের প্রস্থ ১২ ফুট থেকে বাড়িয়ে ১৮ ফুট করা হচ্ছে। ছয় মাস আগে সড়কের কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ঠিকাদার সড়কের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। সড়কের বেশিরভাগ জায়গায় খোয়া উঠে গেছে। সড়ক জুড়ে ছড়িয়ে থাকা খোয়া এবং খোয়া ভেঙ্গে সৃষ্টি হওয়া লাল ধুলোবালুতে যানবাহন ও লোকজন চলাচল করতে পারছে না। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী হাজার হাজার মানুষ। ঠিকাদার কাজ বন্ধ রাখায় এলাকার বিক্ষুব্ধ লোকজন শনিবার সকালে আড়াআড়ি ভাবে বাঁশ বেঁধে সড়কটি দিয়ে সকল প্রকার যানবাহন ও পথচারীদের চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে আটকা পড়েছেন শতাধিক যানবাহন।
অভয়নগর এলজিইডি সূত্র জানা গেছে, এশীয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) পল্লী সংযোগ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের (আরসিআইপি) আওতায় ভাঙ্গাগেট বাদামতলা-আমতলা ভায়া মরিচা নাউলী বাজার সড়কের অভয়নগর উপজেলার শংকরপাশা গ্রামের ফেরিঘাটের মোড় থেকে আমতলা বাজার পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার ৯৩৪ মিটার উন্নয়নের কাজ চলছে। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬ কোটি ৮ লাখ ২ হাজার ৯৩১ টাকা। ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম এম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড কাজটি করছে। ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল থেকে সড়কটির কাজ শুরু হয়েছে। গত বছরের (২০২২) ১০ অক্টোবর কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে। পরে কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি করার সুপারিশ করে অভয়নগর এলজিইডি। কিন্তু কাজের মেয়াদ বেড়েছে কি না তার কোনো তথ্য নেই দপ্তরটির কাছে। সূত্র জানায়, সড়কটির প্রস্থ ছিল ১২ ফুট। দুই পাশে তিন ফুট করে ছয়ফুট বাড়িয়ে সড়কটি ১৮ ফুট করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ঠিকাদারকে ৮ কোটি ২৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকার বিল দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:সরকারি রাস্তা কেটে ঘেরে তোলা হচ্ছে পানি
গতকাল সকাল নয়টার দিকে এলাকার শতাধিক মানুষ উপজেলার শংকরপাশা গ্রামের মোড়ে সমবেত হন। এরপর তারা সড়কের ওপর আড়াআড়িভাবে বাঁশ বেঁধে দেন। এরপর তারা সড়কটির পাশে অবস্থান নেন। এতে সড়কটি দিয়ে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বিক্ষুব্ধ লোকজন জানান, সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এই সড়ক দিয়ে নড়াইল এবং গোপালগঞ্জ হয়ে রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করে এলাকার লোকজন। তাছাড়া নড়াইল এবং অভয়নগর উপজেলার চার ইউনিয়নের লোকজন শিল্প ও বাণিজ্য শহর নওয়াপাড়ায় যাতায়াত করেন। ঠিকাদার প্রায় এক বছর ধরে কাজ না করে ফেলে রাখায় সড়কটি দিয়ে চলাচল করা যাচ্ছে না। সড়কটির ধুলোবালুতে এলাকার ঘরবাড়ি, গাছপালা ও খেতের ফসল লাল হয়ে আছে। এলাকার মানুষের বিশেষ করে নারী ও শিশুদের কাশি ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিচ্ছে।
শংকরপাশা গ্রামের কৃষক আবু সাঈদ মুন্সী বলেন, ‘রাস্তা দিয়ে চলাচল করার মতো অবস্থা নেই। ধুলোবালিতে বাড়ি ঘর, খেতের ফসল ও গাছপালা নষ্ট হচ্ছে। কাশি ও শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। বাধ্য হয়ে আমরা রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছি। দুপুর পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ থাকবে।’
একই গ্রামের কৃষক নূর মোহাম্মদ মোল্যা বলেন, ‘এক বছর ধরে ঠিকাদার রাস্তার কাজ ফেলে রেখেছে। রাস্তা দিয়ে কোনোভাবেই চলাচল করা যাচ্ছে। ধুলোবালিতে বাড়িতে থাকা যাচ্ছে না। সব কিছুর রঙ পাল্টে লাল হয়ে গেছে। দুপুরের মধ্যে প্রশাসনের লোকজন এখানে না আসলে অবরোধ চালিয়ে যাওয়া হবে।’
উপজেলা প্রকৌশলী এস এম ইয়াফি বলেন, ‘ঠিকাদার সড়কটির কাজ না করায় চলাচলে মানুষের চরম ভোগান্তি হচ্ছে। কাজ করার জন্য ঠিকাদারকে চারটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। এরপর এলজিইডি যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী ঠিকাদারকে কাজ শুরু করার জন্য চূড়ান্ত চিঠি দিয়েছেন। তারপরও তিনি কাজ শুরু করেনিনি। ঠিকাদারের কাজ বাতিলের জন্য প্রশাসনিক অনুমতি চেয়ে প্রধান কার্যালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অনুমতি পেলে ঠিকাদারের কাজ বাতিল করা হবে।’
আরও পড়ুন: প্রতারণা পথ বদলিয়েছে আলোচিত সুমন তানভীর