বিনোদন ডেস্ক:
কিংবদন্তি অভিনেতা জসিমের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। চলচ্চিত্র জীবন শুরু করেছিলেন জুনিয়র আর্টিস্ট হিসেবে। অক্লান্ত পরিশ্রম করতেন তিনি। লাইনে দাঁড়িয়ে পারিশ্রমিক পেয়েছেন ১০ টাকা। সে জায়গা থেকে হয়ে ওঠেন বাংলা চলচ্চিত্রের প্রিয় নায়ক।
তার পুরো নাম আবুল খায়ের জসিম উদ্দিন। কিন্তু জসিম নামেই ব্যাপক জনপ্রিয় তিনি। জসিম ভেবেছিলেন ফাইট ডিরেক্টর হিসেবে ক্যারিয়ার গড়বেন। পাশাপাশি ফাইটার হিসেবে কাজ করবেন। কিন্তু সেখান থেকে নায়ক হিসেবে নিজের পরিচিতি গড়ে তোলেন। জীবনের শেষ সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছিলেন জসিম।
জসিম বলেছিলেন, অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা ছিল শুরু থেকেই। অভিনয় না করলেও পর্দার বাইরে আজীবন ফাইট ডিরেক্টর হিসেবে থাকতে চেয়েছিলেন। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই ফাইট ডিরেক্টর হিসেবে ক্যারিয়ারের শুরু করেছিলেন। তিনি ন্যাশনাল কোচিং সেন্টার থেকে মার্শাল-জুডো শিখেছেন।
সিনেমার ফাইট ডিরেক্টর হিসেবে জসিম নিজেকে মেলে ধরেছিলেন মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে। পশ্চিমা সিনেমা থেকে ধারণা নিয়ে ফাইট প্রয়োগ করতেন তিনি। এক সময় পর্দার নাম করা ভিলেন ছিলেন জসিম। বেশ কিছু সিনেমায় ভিলেনের ভূমিকায় দেখা গেছে তাকে। পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু ‘অমর শরীফ’ সিনেমায় জসিমকে নায়ক হিসেবে বেছে নিলেন। সেই সময় সিনেমা এত জনপ্রিয় হয়েছিল যে তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন নায়ক জসিম।
জসিম ১৪ আগস্ট, ১৯৫০ সালে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বক্সনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে একজন সৈনিক হিসেবে তিনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। দুই নম্বর সেক্টরে মেজর হায়দারের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে লড়েছেন তিনি।
জসিমের বড় পর্দায় অভিষেক হয় ১৯৭২ সালে ‘দেবর’ সিনেমার মাধ্যমে। জনপ্রিয়তা পান বলিউডের ‘শোলে’ সিনেমার রিমেক ‘দোস্ত দুশমন’-এ অভিনয়ের মাধ্যমে। এরপর একের পর এক সিনেমায় অভিনয় করে সিনেপ্রেমীদের মনে জায়গা করে নেন তিনি।
প্রায় তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন জসিম। আশি ও নব্বই দশকের প্রায় সব জনপ্রিয় নায়িকাদের সঙ্গেই জুটি বেঁধেছেন। তবে শাবানা আর রোজিনার সঙ্গে তার জুটি দর্শক মহলে বেশি সমাদৃত ছিল।
জসিম অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘তুফান’, ‘জবাব’, ‘নাগ নাগিনী’, ‘বদলা’, ‘বারুদ’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, ‘লালু মাস্তান’, ‘নবাবজাদা’, ‘অভিযান’, ‘কালিয়া’, ‘বাংলার নায়ক’, ‘গরিবের ওস্তাদ’, ‘ভাইবোন’, ‘মেয়েরাও মানুষ’, ‘পরিবার’, ‘রাজা বাবু’, ‘বুকের ধন’, ‘স্বামী কেন আসামী’, ‘লাল গোলাপ’, ‘দাগী’, ‘টাইগার’, ‘হাবিলদার’, ‘ভালোবাসার ঘর’ প্রভৃতি।
ঢাকাই সিনেমার নায়কদের মধ্যে জসিমই একমাত্র নায়ক, যার নামে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থার (বিএফডিসি)তে একটি ফ্লোরের নামকরণ করা হয়েছে।
জসিম ব্যক্তি জীবনে দুই বিয়ে করেছিলেন। তার প্রথম স্ত্রী ছিলেন নায়িকা সুচরিতা। পরবর্তীতে ঢাকার প্রথম সবাক সিনেমার নায়িকা পূর্ণিমা সেনগুপ্তার মেয়ে নাসরিনকে বিয়ে করেন।
সকল জনপ্রিয় নায়িকার বিপরীতে অভিনয় করেছেন এই অ্যাকশন অভিনেতা। তবে শাবানা ও রোজিনার সাথে তার জুটিই সবচেয়ে দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেছিল।
জসিম ১৯৯৮ সালের ৮ই অক্টোবর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন।

 
									 
					