এ্যান্টনি অপু
প্রশ্নফাঁসের সাথে জড়িত একজন পিএসসির ডেসপাস রাইটার খলিলুর রহমানের গ্রামের বাড়ি যশোরে। কিন্তু এখানে তার কোন গাড়ি-বাড়ি কিংবা সম্পত্তি নেই।
খলিলের পৈত্রিক বাড়িতে অনুসন্ধান :
অভিযুক্ত ডেসপাস রাইটার খলিলের পৈত্রিক বাড়ি যশোরের কেশবপুরের মঙ্গলকোট পাচরাই ঘাগা গ্রামে। সরজমিনে খলিলের পৈত্রিক বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে একটি টিনের কুড়ে ঘরে খলিলের চাচা নিছার গাজী (৬৫), তার বৃদ্ধ স্ত্রী পারুল বেগম ও ছেলে সাকিব শায়ানকে নিয়ে (২৪) বসবাস করছেন। খলিলুর রহমানের বাবা নিজাম গাজী পিএসসি বোর্ড খুলনা শাখায় চাকরি করতেন। খলিলের বাবারা তিন ভাই এবং তিন বোন। খলিলুর রহমানের বাবা সাত বছর আগে মারা গিয়েছেন।
খলিলুর রহমানের স্বজনরা জানান, খুলনায় খলিলুর রহমানের মায়ের পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমি রয়েছে। সেখানেও টিনের ছাউনির একতলা পাকা বাড়ি। খুলনার রায়ের মহল মোল্যা পাড়া রোডের ওই বাড়িতেই ছোট থেকে বড় হয়েছেন খুলিলুর। খলিলুরের বৈবাহিক জীবনে কোন সন্তানাদিও নেই। তিনি দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে বাবার কোঠায় পিএসসিতে ডেসপার রাইটার হিসেবে চাকরি পান। খলিলুরের বাব-চাচাদের সর্বোমোট জমি রয়েছে ২ বিঘা ৮৪ শতক। এই জমির আজ পর্যন্ত কোন ভাগ বাটোয়ারাও হয়নি।
এদিকে সরেজমিনে খলিলের পৈত্রিক এলাকায় অনুসন্ধান করে তেমন কোন সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে পিএসসির প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় জড়িত খলিলের দুর্নীতির অর্থ কোথায় কি কাজে ব্যবহার হলো এবং আদৌ সে এ দুর্নীতির সাথে জড়িত আছেন কিনা তা জানেন না তার স্বজনরা। তবে খলিলের স্বজনদের দাবি খলিল এধরণের কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত নয়। সঠিক তদন্ত হলে খলিল নির্দোষ প্রমাণিত হবে এমনটাই ধারণা করছেন খলিলের স্বজন ও প্রতিবেশীরা।
খলিলের চাচা নিছার গাজী জানান, খলিলের বাবা নিজাম গাজী (নিছার গাজীর বড় ভাই) অত্যন্ত সৎ মন-মানসিকতার মানুষ ছিলেন। তিনি মশিউর রহমান নামে একজনের বাড়িতে থাকতেন। সেখানে থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। খলিলের চাচা নিছার গাজীর দাবি, তার ভাই নিজাম গাজী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। তবে সে স্বেচ্ছায় বীর মুক্তিযোদ্ধা পদবি নেননি। অল্প শিক্ষিত হলেও দেশ স্বাধীন হওয়ার পর খলিলের বাবা নিজাম গাজী তার সততার জোরে পিএসসি বোর্ডের খুলনা শাখায় চাকরি পান। বাবার কোঠায় পিএসসিতে চাকরি পান ছেলে খলিলও।
নিছার গাজী বলেন, আমার ভাইপো খলিল এমন দুর্নীতি করতে পারে এটা আমার বিশ্বাস হয় না। ওর বাবা মানে আমার ভাই অনেক সৎ মানুষ ছিল। তিনি মাঝেমধ্যে আমার বাড়িতে আসতেন বেড়াতে। তার মাকে নিয়ে খুলনা বাসায় থাকতেন।’
তিনি বলেন, ‘খলিল যদি দুর্নীতি করেন তাহলে ওর পরিবারের অবস্থা এতো খারাপ হবে কেন?, ওর চাচাদের মানে আমাদের অবস্থাও তো ভালো না। আমার বাবার দুই বিঘা ৮৪ শতক জমি আজও ভাগাভাগি হয়নি। একটা পুকুর আর ধানি জমি হারি দিয়ে খাচ্ছি।’
খলিলের চাচা আরও বলেন, ‘খলিলরা দুই ভাই ও এক বোন। খলিলের বড় ভাই পিএসসি বোর্ডের রাজশাহী শাখায় চাকরী করে। তার বোনের বিয়ে হয়ে গেছে।’
খলিলের চাচী পারুল বেগম বলেন, ‘আশপাশের মানুষ টেলিভিশন আর পত্রিকায় দেখে আমাদের বাড়ি এসে বলছে যে খলিলকে প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় পুলিশ ধরেছে। আমরা এর আগে কিছুই জানতাম না। এ খবর শোনার পর থেকে গলা দিয়ে ভাত নামছে না। খলিল অনেক ভালো ছেলে, ওকে আমি নিজের ছেলের মতো দেখি, আল্লাহ জানে কিভাবে কি হলো, তবে ও এমন কাজের সাথে জড়িত থাকতে পারে না।’
খলিলের চাচাতো ভাই সাকিব শায়ান বলেন, ‘দুই বছর আগে এমন এক অভিযোগে খলিলের চাকরী চলে যায়। পরবর্তীতে তদন্তে খলিল নির্দোশ প্রমাণিত হয়। এরপর আবরাও চাকরীতে ফিরে যায়। আমরা মনে করি প্রশাসন সঠিকভাবে তদন্ত করলে আমার ভাই নির্দোশ প্রমাণিত হবে।’
খলিলের প্রতিবেশীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, খলিল মাঝেমধ্যে তার পৈত্রিক বাড়ি (চাচাদের বাসায়) বেড়াতে আসতো। এর আগে খলিলের চালচলন বা আচারণে এমন কোন খারাপ বিষয় তারা লক্ষ্য করেনি। গোটা এলাকায় খলিলের বাবা ও খলিল সৎ প্রকৃতির মানুষ বলে দাবি স্থানীয়দের।
খলিলের প্রতিবেশী স্থানীয় যুবলীগকর্মী জিহাদুল ইসলাম বলেন, ‘খলিলকে আমরা অনেকদিন ধরে চিনি। ছোটবেলা থেকে ওর সম্পর্কে জানি। ওর বাবা যেমন ও তেমনি। খলিল পিএসসির প্রশ্নফাঁসের সাথে জড়িত থাকতে পারে না। আজ যদি সে জড়িত থাকে তাহলে খলিলের দুর্নিতির অর্থ কোথায় গেল? খলিলের বাড়ির অবস্থা এমন কেন?, আমরা সরকারের কাছে সঠিক তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।
মহিবুল ইসলাম নামে আরেক প্রতিবেশী বলেন, ‘খলিলের বাবা সৎ মানুষ ছিলেন। খলিলও যখম বাড়ি আসতো তখন আমাদের সাথে খুব ভালভাবেই মিশতো, আমাদের কখনোও মনে হয় না ও এমন কাজ করতে পারে। হয়তো ও ফেঁসে গেছে। আমরা ওর নিশ্বর্ত মুক্তি চাই।’
মঙ্গলকোট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের বিশ্বাস বলেন’ আমি খলিলুর রহমানকে চিনি না, তার বাড়ি এখানে তাও জানি না। বিভিন্ন সাংবাদিকরা এবং সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানতে পারলাম।
অভিযোগ উঠেছে খলিলুর রহমান গত ৫ জুলাই রেলওয়ের সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (নন ক্যাডার) পদের নিয়োগ পরীক্ষাসহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দীর্ঘদিন ধরে ফাঁস করে আসছিলেন। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকার মিরপুর পীরেরবাগ এলাকা থেকে খলিলকে আটক করা হয়। সিআইডি জানিয়েছে খলিলকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তাকে এসব পরীক্ষার জন্য প্রার্থী সরবরাহ করতেন পিএসসির সহকারী পরিচালক আলমগীর। আলমগীর রেলওয়ের সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের (নন ক্যাডার) নিয়োগ পরীক্ষাসহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দীর্ঘদিন ধরে ফাঁস করেছেন।