শাহারুল ইসলাম ফারদিন
বহুল প্রচলিত অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসার বাইরে হোমিওপ্যাথি, ইউনানি এবং আয়ুর্বেদিক এই তিন ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে অল্টারনেটিভ মেডিসিন বলা হয়। এই চিকিৎসা ব্যবস্থা কয়েক হাজার বছরের পুরানো। দেশে ঐতিহ্যগতভাবে এই চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রচলিত। সরকার এখন এর উপর আরো জোর দিচ্ছে। যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালেও এ চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। সপ্তাহের শুক্রবার বাদে ছয়দিন নিয়মিত রোগীদের সেবা দেওয়া হয় এখানে। সেই সাথে ফ্রি ওষুধ দেওয়া হয় বলে জানান হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশীদ।
তিনি আরও জানান, প্রতিদিন গড়ে ৩৫ জন রোগীকে অল্টারনেটিভ চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। পুরুষের চেয়ে নারী রোগীর সংখ্যা বেশি। সবচেয়ে বেশি রোগী আসে গাইনী, চর্ম, স্কিন, ইউরিন ইনফেকশন ও অ্যাসিডিটির। এখান থেকে বেশ কিছু ওষুধও ফ্রি প্রদান করা হয়। গত তিন মাসে প্রায় তিন হাজার রোগী হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
প্রশাসনিক ভবনের নিচ তলায় অল্টারনেটিভ চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। সোমবার সেবা নিতে আসেন সদরের চুড়ামনকাঠি বেলেরমাঠ গ্রামের আজিজুর রহমানের স্ত্রী সুখজান বিবি। তিনি জানান, এলোপ্যাথি ওষুধ সেবনে তার অনিহা। তাই তিনি বেশ কয়েক সপ্তাহ যাবৎ চর্ম সমস্যা নিয়ে এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এতে তিনি উপকৃত হচ্ছেন বলে জানান। বাঘারপাড়া উপজেলার পুলেরহাট গ্রামের শুকুমার দাসের স্ত্রী রত্না জানান, তিনি গাইনী সমস্য নিয়ে এসেছেন সেবা নিতে। এর আগে অনান্য সেবা তিনি নিয়েছেন। কোনো কোনো সময় তেমন কাজ হয় না বলে জানান রত্না।
হাসপাতালের অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ারের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. শারমিন সুলতানা বলেন, হোমিওপ্যাথি, ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। হাসপাতালে চলমান চিকিৎসা ব্যবস্থার পাশাপাশি বিকল্প চিকিৎসাসেবার মাধ্যমেই সহজে আরোগ্য লাভ করা যায়। কিন্তু এ তথ্য অনেকেরই অজানা। সরকার এ তিন ধরনের চিকিৎসাসেবার মানোন্নয়নে অনেক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।
হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. গোলাম মোতুর্জা বলেন, কিন্তু বিকল্প চিকিৎসার নামে প্রতারণার অভিযোগও অনেক। বিশেষ করে যৌন চিকিৎসার নামে এক শ্রেণির চিকিৎসক মানুষের সাথে প্রতারণা করছে। এ জেলাই মঘা ইউনানি ও হারবাল চিকিৎসার নামে বেশ কয়েকটি চিকিৎসা কেন্দ্র আছে। এমনকি ওইসব কেন্দ্রে ‘সর্বরোগের মহৌষধ’ দেয়ার কথাও বলা হয়। বিভিন্ন প্রাণির তেলসহ অদ্ভুত সব দাওয়াই দেয়া হয়। এগুলো প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই না। এইসব ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠান চিকিৎসাব্যবস্থার সুনাম নষ্ট করছে। তা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।
তিনি আরও বলেন, অনেকেই চিকিৎসকের যোগ্যতা ছাড়া বা ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে এ সব প্রতিষ্ঠান খোলেন। এর বিরুদ্ধে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ মাঝেমধ্যে ব্যবস্থা নেয়। তবে মনিটরিং আরো জোরদার করা প্রয়োজন। তাছাড়া মানুষকেও সচেতন করতে হবে। সচেতন হতে হবে। জানতে হবে অল্টারনেটিভ মেডিসিন একটি স্বীকৃত চিকিৎসা ব্যবস্থা।
হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক রোগীদের সাধ্যমতো সেবাদানের চেষ্টা করছেন বলে জানান হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, এই চিকিৎসার ইতিবাচক দিক হলো এর কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। যেটুকু আছে, তা ক্ষতিকারক নয়। এই চিকিৎসার খরচও অ্যালোপ্যাথিকের চেয়ে অনেক কম। এখন অল্টারনেটিভ চিকিৎসা ব্যবস্থা এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষ এখন চায় ন্যাচারাল ও পার্শ-প্রতিক্রিয়াহীন চিকিৎসা। তিনি আরোও বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, এলোপ্যাথি ওষুধ সেবনে রোগ না সারলে অনেকে অল্টারনেটিভ চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন এবং সুফলও বয়ে আনে এ চিকিৎসা ব্যবস্থায়।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ^াস বলেন, বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি বর্তমানে সামগ্রিক চিকিৎসাব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। প্রচলিত চিকিৎসাব্যবস্থার সঙ্গে আয়ুর্বেদিক, ইউনানি ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতি দিনদিন জনপ্রিয় হচ্ছে।