নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রতিদিন তার হাতের নিপুণ ছোঁয়ায় বের হতো দৈনিক কল্যাণ। পত্রিকার অঙ্গসজ্জা করতেন নিষ্টার সাথে। সন্ধ্যার পর অফিসে ঢুকেই নিত্যদিনের কাজগুলো করতেন নিজ দক্ষতায়। যখন এ খবর লেখা হচ্ছে তার একদিন আগের রাতেই (সোমবার) তিনি চলে গেছেন দুনিয়া ছেড়ে। বলছিলাম দৈনিক কল্যাণের গ্রাফিক্স ডিজাইনার আবু সাঈদ সাগরের কথা। হৃদরোগের সাথে ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে এ জগতের সব ব্যস্ততা; জমানো ব্যাথা আর না বলা কথা রেখে পরকালে পাড়ি জমান তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল (৪৬)। তিনি স্ত্রী, পুত্রসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার বাসা যশোর শহরের পূর্ব বারান্দিপাড়া আমতলা মোড়ে। মঙ্গলবার বাদ জোহর শহরের বারান্দীপাড়া কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত জানাজা শেষে বারান্দী পূর্বপাড়া কবরস্থানে সাগরকে দাফন করা হয়। প্রিয়জনের বিদায়ে স্বজন, সহকর্মী, সাংবাদিক সমাজসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অঝরে কেঁদেছেন। বুকে পাথরসম ব্যাথা নিয়ে জানাজায় ইমামতি করেন সাগরের জমজ ভাই গ্রামের কাগজের চিফ কম্পিউটার অপারেটর আবু সাআদ শাওন।
এদিকে, প্রাণচঞ্চল ও কর্মক্ষেত্র মাতিয়ে রাখা সাগরের চলে যাওয়ার পরদিন মঙ্গলবার ‘জুলাই অভ্যুত্থান বার্ষিকী উপলক্ষে’ বন্ধ ছিল পত্রিকা অফিস। বুধবার অফিসে এসেই সবার চোখ পড়ছিল সাগরের চেয়ার। নির্বাক চোখে চেয়ে চেয়ে দেখা আর তার শূন্যতা অনুভব করা ছাড়া যেন কিছুই করার ছিল না সহকর্মীদের। দৈনিক কল্যাণের স্টাফদের যে চেয়ার তাতে বসতে কষ্ট হতো গ্রাফিক্স ডিজাইনার সাগরের। এজন্য তিনি একটা কুসন কাভারে তুলা ভরে ব্যবহার করে বসতেন। তাই অফিসের ওই চেয়ারটি একান্ত সাগরের চেয়ার হিসেবে পরিচিত পেয়েছিল। চিরচেনা সেই চেয়ারে আর বসবেন না যশোরের সংবাদপত্র জগতের প্রিয় মুখ দৈনিক কল্যাণের গ্রাফিক্স ডিজাইনার সাগর।
এক বুক দুঃখ আর বেদনা নিয়ে মঙ্গলবার তাকে চিরবিদায় জানিয়েছে যশোরের সংবাদপত্রসেবীরা। সাথে ছিল নানা বন্ধু-স্বজন-পরিবার-পরিজন-শুভানুধ্যায়ীরা।
এর আগে মৃত্যুসংবাদ পৌঁছানোর পর সোমবার গভীর রাত থেকেই সাগরের বাড়িতে ভিড় করেন শুভাকাক্সক্ষীরা। হঠাৎ সাগরের চলে যাওয়া যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না কেউ। তাঁর অকাল প্রয়াণে পরিবার ও সহকর্মীরা হয়ে পড়েন শোকাভিভূত। সাগরের একমাত্র পুত্র রাজিন মাহমুদ কাঁদতে কাঁদতে তার বাবার জন্য সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করে।
জানাজায় অংশগ্রহণ করেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
জানাজার পূর্বে সাগরের কর্মদক্ষতার প্রশংসা করেন যশোর সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি ও দৈনিক কল্যাণ সম্পাদক-প্রকাশক বীর মুক্তিযোদ্ধা একরাম-উদ-দ্দৌলা। তিনি বলেন, একজন কাজ পাগল মানুষ ছিলেন সাগর। শুধু কল্যাণ নয়, যেখানেই তিনি কাজ করেছেন, দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। সাগরের চলে যাওয়াতে যশোরের মুদ্রণ জগতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তা সহজে পূরণ হবার নয়।
জানাজার শুরুতে বক্তব্য দেন গ্রামের কাগজ সম্পাদক মবিনুল ইসলাম মবিন। তিনি বলেন, শাওন ও সাগর দুই ভাইয়ের হাত ধরেই গ্রামের কাগজের পথচলা শুরু হয়েছিল। কম্পিউটার বিভাগে সাগর ছিলেন নীরব যোদ্ধা।
জানাজায় অংশ নেন কল্যাণের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এহসান-উদ-দ্দৌলা মিথুন, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক এজাজ উদ্দিন টিপু, বাংলার ভোর পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক সৈয়দ আবুল কালাম শামছুদ্দীন জ্যোতি, বিবর্তন যশোরের সভাপতি নওরোজ আলম খান চপল, যশোর জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওমর ফারুক তারেক, ছাপাখানা মালিক সমিতির নেতা আবুল কাশেম, যশোর জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও গ্রামের কাগজের বিশেষ প্রতিনিধি দেওয়ান মোর্শেদ আলম, গ্রামের কাগজের সহকারী সম্পাদক জাহিদ আহমেদ লিটনসহ সামাজিক, রাজনৈতিক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই সন্ধ্যায় অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়িতে গিয়ে আবারো অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং হাসপাতালে ভর্তি হন সাগর। পরে তকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নেয়া হয় ঢাকায়। সর্বশেষ সোমবার রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের স্ট্রোক ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবু সাঈদ সাগর ইন্তেকাল করেন। এদিকে তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন দৈনিক কল্যাণে কর্মরতরা।