রায়হান সিদ্দিক
দূষণ আর দখলে ২০০ বছরের ঐতিহ্য হারিয়েছে যশোরের লালদীঘি। লালদীঘি বাঁচাও আন্দোলন কিংবা সাময়িক সংস্কার কোন কিছুই কাজে আসেনি। বর্তমানে দীঘিটি ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি দীঘির চারপাশে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী দোকানপাট ও যানবাহন পার্কিং। ফলে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে দীঘিটি।
এই পরিস্থিতি নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে পৌরসভা। সংস্কার ও সংরক্ষণে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এরমধ্যে ১ কোটি টাকা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং দেড় কোটি টাকা পৌরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে।
যশোর পৌর শহরের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ লালদীঘি। শহরের গাড়িখানা সড়কের পাশে পৌরসভার উদ্যোগে এক একর ১২ শতাংশ জমিতে ওই দীঘি খনন করা হয়। যার পানি এক সময় বহু মানুষের নিত্যদিনের নানা কাজের প্রয়োজন মিটিয়েছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জন ছাড়াও সূর্যপূজাও হয় এই দীঘিতে। শহরের কোথাও আগুন লাগলে পানির সবচেয়ে বড় উৎসই ছিল এই লালদীঘি। যদিও বর্তমান চিত্রটি একেবারেই ভিন্ন।
পৌরবাসীর অভিযোগ, সংস্কার আর সংরক্ষণের অভাবে দীঘিটি জৌলুস হারিয়েছে। এখন দীঘির পাড়ে বাতাসাও দূষিত হয়ে গেছে। নোংরা পানিতে জন্ম নিচ্ছে মশা। এছাড়াও দীঘির চারপাশে ময়লার স্তুপ রয়েছে; যা কালেভদ্রে দু একবার পরিস্কার করা হয়। তাছাড়া কিছু অসেচতন মানুষ এই দীঘির পাড়ে অবস্থিত রাজু মঞ্চের নিচে মলমূত্র ত্যাগ করছেন। ফলে দূর্গন্ধে এখন দীঘির পাড়ে যাওয়ায় মুশকিল।
যশোর নাগরিক সংঘরের সদস্য সালমান হাসান রাজীব বলেন, লালদীঘির বর্তমান অবস্থা দেখলে মনে হয় আগামী কয়েক বছরের ভেতরে এই দীঘির আর কোন অস্তিত্ব থাকবে না। ময়লা আবর্জনা ফেলতে ফেলতে দীঘির তলাও ভরাট হয়ে গেছে। লালদীঘির চারপাশে কয়েকশ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এখানে মাঝেমধ্যে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তখন পানির ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও লালদীঘি কোন কাজে আসে না।
তিনি আরও বলেন, পৌর কর্তৃপক্ষের অবহেলায় কোটি টাকার প্রকল্প নষ্ট হয়েছে। এখন লালদীঘির যতটুকু সদৃশ্য রয়েছে সেটুকুও সংরক্ষণে ব্যর্থ পৌর কর্তৃপক্ষ।
লালদীঘি পাড়ে অবস্থিত ব্রাদার্স টিটো হোমের সত্ত্বাধিকারী ও যশোর নাগরিক সংঘের আহ্বায়ক আলী আজম টিটো বলেন, লালদীঘি নিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের কোন সুষ্ঠু পরিকল্পনা দৃশ্যমান আমরা দেখতে পায়নি। প্রতিদিন ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে এখানে। এখানকার পরিবেশ সম্পূর্ণভাবে এখন অস্বাস্থ্যকর। কোন মানুষ এখানে ১০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকলে সে অসুস্থ হয়ে পরবে। অথচ লালদীঘির চারপাশ যদি পরিকল্পিতভাবে সাজানো হতো তাহলে শহরের সাধারণ মানুষ স্বস্তি পেতো।
প্রাণবন্ত লালদীঘিকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে। কুচক্রি মহলের লোভের শিকার হয়েছে ঐতিহ্যবাহী এই জলাশয়টি। দ্রুত সংস্কারণ না করলে অচিরেই এর অস্তিত্ব হারাবে বলে মন্তব্য করেছেন পৌর নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব জিল্লুর রহমান ভিটু। তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় লালদীঘি ভরাটের জন্য অনেকেই চেষ্টা করেছেন। কিন্তু যশোরবাসীর আন্দোলনের মুখে সেটি সম্ভব হয়নি। তবে কুচক্রিরা থেমে নেই। ছলেবলে কৌশলে ভরাটের অপচেষ্টা তারা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, কয়েক বছর আগে প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যায়ে লালদীঘি সংস্কারের কাজ করেছে পৌরসভা। সেসময় দীঘি পাড়ের চারপাশের পাড় কংক্রিটে বাধাই করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল দীঘির পাড়ের ফুটপাতে স্বাস্থ্য সচেতন নাগরিকেরা হাঁটাচলা করতে পারবেন। একইসাথে পাড়ের চারপাশে নাগরিকদের বসার জন্য কংক্রিটের একাধিক নান্দনিক চৌকি নির্মাণ করা হয়। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে এখানে কোন কিছুই অবশিষ্ট নেই।
এদিকে পৌর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে লালদীঘ সংস্কারে ইতিমধ্যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নতুন প্রকল্পে সংস্কার ও সংরক্ষণে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা বাজেট পাস হয়েছে। এরমধ্যে ১ কোটি টাকা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া হয়েছে। বাকি দেড় কোটি টাকা পৌরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে দেয়া হবে। এবিষয়ে পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোকসিমুল বারী অপু বলেন, লালদীঘির শোভাবর্ধনের জন্য ইতিমধ্যে আমরা সরকারের কাছ থেকে ফান্ড পেয়েছি। চলতি বছরের আগস্ট মাস টেন্ডার হয়ে যাবে। আশা করছি অক্টোবর থেকে সংস্কারের কাজ শুরু হয়ে যাবে।
