নিজস্ব প্রতিবেদক
সেঞ্চুরি করলো যশোরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আইডিয়ার ‘ফ্রাইডে মিল’। শুক্রবার দুপুরে শ্রমজীবী, দরিদ্র, অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিতদের মুখে তুলে দিয়ে সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা পালন করলেন শততম সপ্তাহ। এদিন যশোর ছাড়িয়ে সংগঠনটির সাথে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবীরা ২৪টি জেলায় খাবার বিতরণ করে এই ফ্রাইডে মিল’র শততম সপ্তাহ উদযাপন করেছে। তিন সহ স্রারাধিক মানুষকে এদিন দুপুরে পোলাও-মাংস দিয়ে আহার করানো হয়েছে।
সংস্থার স্বেচ্ছাসেবীরা জানান, যশোর শহরের খড়কী এলাকায় অবস্থিত আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থা’র সাপ্তাহিক একটি প্রকল্প আইডিয়া ফ্রাইডে মিল। যেখানে প্রতি শুক্রবার পবিত্র জুমা’র নামাজের পরে সংস্থার সদস্য স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থীরা নিজেদের হাতে রান্না করা পোলাও-মাংস নিয়ে রাস্তায় থাকা দরিদ্র, অসহায়, ছিন্নমূল মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়। কখনো বা নিয়ে যায় বৃদ্ধাশ্রমে অথবা বস্তিতে, কখনো শ’খানেক এতিম শিশু, শ্রমজীবী মানুষকে দাওয়াত করে আনে আইডিয়া প্রাঙ্গণে। এভাবেই চলেছে একাধারে ৯৯টি সপ্তাহ। ৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ছিল ফ্রাইডে মিল’র শততম সপ্তাহ। এদিন যশোরসহ ঢাকা, খুলনা, কুষ্টিয়া, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, টাঙ্গাইল, খাগড়াছড়ি, বরিশাল, ময়মনসিংহ, সিলেট, রংপুর, বরগুনাসহ মোট ২৪টি জেলায় স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে উদযাপিত হলো আইডিয়ার ১০০তম ফ্রাইডে মিল। এদিন ২৪টি জেলায় আইডিয়া ফ্রাইডে মিল্; শিরোনামে পোলাও-মাংস-ডিম বিতরণ করা হয়েছে দরিদ্র, অসহায়, ছিন্নমূল মানুষের মানুষের মাঝে।
আইডিয়া’র প্রধান উপদেষ্টা যশোর সরকারি এমএম কলেজের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক শাহীন বলেন, আইডিয়া ফ্রাইডে মিল আমাদের তৃপ্তিরই আরেক নাম। ৯৯ সপ্তাহ আগে মাত্র এক হাজার টাকা দিয়ে শিক্ষার্থীদের বলেছিলাম সপ্তাহে পবিত্র জুম’আর এই একদিন কিছু মানুষের কাছে ভালো খাবার পৌঁছে তো আমরা দিতেই পারি। এভাবেই শুরু। এরপর সুহৃদ, বন্ধু পরিজন এর সাথে যুক্ত হয়েছেন এবং এর বহর বেড়েই চলেছে। এবার ১০০তম সপ্তাহে তাই মহাসমারোহে পালিত হলো এই আয়োজন। কেয়ামত পর্যন্ত আইডিয়া ফ্রাইডে মিল যেন না থামে সেটাই আমাদের ইচ্ছা। আমরা চাই, সাধ্য অনুযায়ী সবাই নিজেদের আশেপাশে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করুক। সপ্তাহে একটা দিন সবার সাধ্যের মধ্যে অল্প করে এগিয়ে আসা এই মানুষগুলোর জীবনে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। ৯৯টি সপ্তাহের মাঝে অনেক ঝড়-বিপদ, ব্যস্ততা এসেছে-একটা সপ্তাহও আইডিয়ান্রা এই প্রকল্প থামায়নি।
আইডিয়া ফ্রাইডে মিল’র কো-অর্ডিনেটর ও আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থা’র সাবেক সভাপতি শাহারিয়ার ইয়াসমিন মীম বলেন, প্রতি শুক্রবার আইডিয়ান্ স্বেচ্ছাসেবীরা নিজেরা দুপুরে খাওয়ার আগে খাবার পৌঁছে দিয়ে আসে অনাহারী মানুষের কাছে। একাধারে ১০০তম সপ্তাহ শেষ হলো, এরমধ্যে কোনো শুক্রবার বাদ যায়নি। অনেকে তাদের সন্তানের জন্মদিন পালন কিংবা প্রিয়জনের মৃত্যুবার্ষিকীর জন্যও এই প্রকল্পে যুক্ত হয়েছেন। আর এই প্রকল্প পরিচালনার একটি বিশেষ আর্থিক অংশ আসে শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত ‘আইডিয়া পিঠা পার্ক’র লভ্যাংশের ৩৫ শতাংশ থেকে।শততম সপ্তাহে আইডিয়ার ভার্চুয়াল অঙ্গসংগঠন ‘বাংলাদেশ শিক্ষার্থী ও উদ্যোক্তা গ্রুপ-উইনি’র মধ্য দিয়ে ফ্রাইডে মিল ছড়িয়ে পরেছে ২৪টি জেলায়। এর মধ্যে মল্লিকা আফরোজ’র নেতৃত্বে ঢাকায়, প্রিয়ন্তী প্রীতির নেতৃত্বে খুলনা, পারভেজ’র নেতৃত্বে জাহাঙ্গীরনগর, খাগড়াছড়িতে সুইট, নাইমুল ইসলাম’র নেতৃত্বে সিলেট, মাসুদ রেজা ও তানজিরা খাতুন’র নেতৃত্বে বরিশাল, জহিরুল ইসলাম’র নেতৃত্বে মৌলভীবাজার, রাজশাহীতে তাজু আহমেদ, পিরোজপুরে সাদিয়া, ফরিদপুরে প্রিয়াঙ্কা অধিকারী, মাগুরাতে নিশির শিকদার, চট্টগ্রামে সাজিদুল রকি, কুষ্টিয়াতে হাসিব, আবু রায়হান টাঙ্গাইল, কমিতা ত্রিপুরার নেতৃত্বে বান্দরবান, কুমিল্লাতে শাফিন মাহমুদ, কক্সবাজারে আসিফ আনাম, সাতক্ষীরায় ইউসুফ আলী, নওগাঁতে অনামিকা, পটুয়াখালীতে জারিন তাসনিম, ঝিনাইদহে কাজী ফারাহ এবং উর্মির নেতৃত্বে নড়াইল ফ্রাইডে মিল’র খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে একই সময়ে তৃপ্তির আহার গ্রহণ করেছেন ২৪ জেলার তিন সহস্রাধিক মানুষ।
আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থার সভাপতি সোমা খান বলেন, এই অনুভূতি সত্যিই অভূতপূর্ব। নিজেরা বাজার করে, রান্না করে যখন হঠাৎ কোনো অনাহারির সামনে খাবার দিই, খুশিতে অনেকে কেঁদে দেয়। অনেকে কবে পোলাও-মাংসের স্বাদ পেয়েছে তা বলতে পারে না। ফ্রাইডে মিল’র খাবার পেয়ে দরিদ্র, ছিন্নমূল মানুষ যে হাসি দেয়; সে হাসি যেন স্বর্গীয় হাসি।
এদিকে, ফ্রাইডে মিল’র সেঞ্চুরি উপলক্ষে যশোরে আইডিয়া প্রাঙ্গনে ‘আইডিয়া ফ্রাইডে মিল, শততম সপ্তাহের কথামালা’ শিরোনামে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ভিন্নধর্মী এই আয়োজনের সম্মানিত অতিথি ছিলেন শ্রমজীবী মুন্তাজ আলী, গৃহকর্মী আসুরা বেগম, রিকশাচালক জহির ইসলাম ও ঘরামী আবুল কাশেম বরুস। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান উপদেষ্টা হামিদুল হক শাহীন। এই আয়োজনে মধ্যাহ্নভোজে দাওয়াতপ্রাপ্ত ছিলেন ১৭০ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশু, বৃদ্ধ, শ্রমজীবী মানুষ।
