এসএস জ্যোতি: বাজারে কোনো পণ্যেই স্বস্তি মিলছে না। কোথাওবা আছে পণ্য সংকট। মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য নিয়ে। দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতির মধ্যে দুর্ভিক্ষের আশংকার কথা শোনার পর বাজারে পণ্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। সবচেয়ে বেশি নাজেহাল নিম্ম ও নিম্ম-মধ্যবিত্তরা।
শুক্রবার সরেজমিনে একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে প্রায় সবধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে আবার বাড়তি দামেও মিলছে না কোনো কোনো পণ্য। এ তালিকায় রয়েছে চিনি, সয়াবিন তেল, আটা ও ময়দা। পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানগুলোতেও বেশি দামেও মিলছে না এসব পণ্য।
ক্রেতারা কোনো একটি দোকানে আটা-ময়দা পেলেও হয়তো চিনি পাচ্ছেন না। আবার কোথাও গিয়ে চিনি মিললেও সেখানে মিলছে না সয়াবিন তেল কিংবা আটা। পাড়া মহল্লার দোকানগুলোতে খোলা পণ্য থাকলেও প্যাকেটজাত পণ্য নেই। বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চাহিদা অনুযায়ী পণ্য দিচ্ছে না। ৫ বস্তা চাইলে দিচ্ছে এক বস্তা। তাও আবার কোনরকম চালান বা ভাউচার ছাড়া তাদের নির্ধারিত দরে। এলসি বন্ধের অযুহাতে প্রতিদিন দাম বাড়ছে।
উপশহর বি-ব্লক বাজারের দু-একটি দোকান বাদে অধিকাংশ দোকানেই কোনো না কোনো পণ্য নেই। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি সংকট সয়াবিন তেল ও চিনির। খোলা তেল যা আছে বোতলজাত তেলের সংকট মাত্রাছাড়া।
মুদি দোকানি সুমন বলেন, কয়েকদিন থেকে কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা আসছেন না। মাঝে মধ্যে এলেও কাক্সিক্ষত পণ্য দিতে পারছেন না। বিশেষ করে তেল দেয়া প্রায় বন্ধ রেখেছে কোম্পানিগুলো। যাদের কাছে আগের কেনা তেল রয়েছে, তারা কিছু কিছু করে বিক্রি করছেন এখন।
বাজারে আসা মার্কেটিং কর্মী কবির বলেন, তেল, চিনি ও আটা-ময়দা যেসব পণ্যের সংকট রয়েছে, সেগুলোর বাজার কয়েকটি কোম্পানির দখলে। তারা বিশ্ববাজার এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে অজুহাত করে বাজারে সিন্ডিকেট তৈরি করেছে।
তিনি বলেন, এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে সরকার কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছে না বলেই তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। এ পরিস্থিতিতে ভোক্তারা একদম নাজেহাল।
এদিকে খুচরা বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। আর প্রতি কেজি খোলা আটা ৬৫ টাকার নিচে মিলছে না।
শুধু আটা নয়, একইভাবে ময়দার দামও বেড়েছে বাজারে। খোলা ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকার মধ্যে।
দোকানিরা বলছেন, প্যাকেটজাত আটার সরবরাহ কিছুটা কম। এক সপ্তাহ আগে খুচরা ব্যবসায়ীরা ডিলারদের কাছ থেকে যেসব আটা ও ময়দা সংগ্রহ করেছেন, সেগুলোই বিক্রি করছেন দোকানিরা। অন্যদিকে পাইকারি বাজারে খোলা আটা-ময়দার চড়া দামের কারণে অনেকে রাখছেন না।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকা কেজি দরে। ডিমের দামও কমেনি।
এদিকে প্রতি বছর এ সময়টাতে বাজারে সবজির দাম কিছুটা কম থাকে। শীতকালে বাঁধাকপি, ফুলকপি ও মূলার দাম তুলনামূলক কিছুটা কম থাকায় ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি থাকে এই দুটি সবজিতেই। তবে এবার শীতকালীন সবজি বাজারে ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম নিম্মআয়ের মানুষের নাগালের বাইরে। বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মুলার দামও ২৫-৩০ টাকা। এছাড়া পটল ৫০ টাকা, বেগুন ৫০-৬০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা, টমেটো ১০০-১২০ টাকা, কাঁচামরিচ ৫০-৬০ টাকা, ধনিয়াপাতা ৮০-১০০ টাকা, আলু ২৫-২৮ টাকা, শিম ৫০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, উচ্ছে ৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, মিচুড়ি ৮০ টাকা ও চিচিঙ্গা ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি আঁটি লাল শাক ও পালং শাক ১৫-২৫ টাকা করে ও প্রতি পিস লাউ ৩০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জানতে চাইলে স্টেশন কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা আকাশ বলেন, সব জিনিসেরই দাম বাড়ছে, এর প্রভাব সবজির বাজারেও রয়েছে। এবার শীতে যে খুব বেশি সবজির দাম কমবে সেটা আশা করা যায় না। আর বেশি দামে কিনে তো কম দামে বিক্রি করা যায় না।
এদিকে বাজার ঘুরে দেখা যায়, কিছু সবজির দাম স্বাভাবিক থাকলেও কিছু সবজির দাম বাড়তি দেখা গেছে।