ময়নাতদন্ত রিপোর্টের অপেক্ষায় পুলিশ
লাবুয়াল হক রিপন
মৃত্যুর আগে আগুনে পুড়িয়ে মারার পুরো তথ্য দিলেও এহসানুল ইসলাম অর্কিড ‘হত্যা’ মামলা রেকর্ড হয়নি। ময়নাতদন্তের অপেক্ষায় ইতোমধ্যে সাত মাস পার হয়েছে। কিন্তু ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পায়নি পুলিশ। এজন্য তদন্তও এগোয়নি। গ্রেফতারও হয়নি জড়িতরা। আইনি ব্যবস্থা নিতে পুলিশ গড়িমসি করছে বলে দাবি করেছেন নিহতের মা আরজিনা সুলতানা।
এহসানুল ইসলাম অর্কিড ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের ব্যবসায়ী ও কাঁঠালবাগান এলাকার ওসমান গণির ছেলে। চলতি বছরের ৪ মার্চ যশোর শহরের পুরাতন কসবা ঘোষপাড়ায় তার গায়ে আগুন দেয়া হয়। ১০ মার্চ ঢাকা মেডিকেলে মারা যান তিনি।
জানা গেছে, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ এলাকার সাবেক এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের পরিবারের সাথে অনেক আগে থেকেই বিরোধ চলে আসছিলো ওসমান গণি পরিবারের। তারই জের ধরে আব্দুল গণির ছেলে অর্কিডদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দেয়া হয়। এমপি আনারের ভাতিজা কালীগঞ্জ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান রিংকুর স্ত্রী তারিন খাতুনকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে প্রেম করে ভাগিয়ে নিয়ে যান অর্কিড। পরে আবার রিংকু তার স্ত্রী তারিনকে ফেরত নিয়ে আসেন। এতে তাদের মধ্যে বিরোধ চরমে উঠে। রিংকু অব্যাহতভাবে হত্যার হুমকি দেয়ায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অর্কিড ফরিদপুরে বসবাস করতে থাকেন। কিন্তু পরিকল্পনা থেমে থাকেনি। গত ৪ মার্চ রাতে তারিনকে দিয়ে অর্কিডের কাছে ফোন দেয়ায় রিংকু। মোবাইলে বলা হয় পরদিন ভোরে ৫ লাখ টাকা নিয়ে যশোরে আসতে হবে। না হলে তোমার নামে মিথ্যা অভিযোগে মামলা দিবো এবং মানসম্মান ধুলো মিশিয়ে দিবো। বাধ্য হয়ে ৫ মার্চ সকালে যশোর শহরের পুরাতন কসবা রায়পাড়া বটতলা মসজিদের কাছে রিংকুর পরামর্শে মীমাংসার কথা বলে অর্কিডকে ডাকেন তারিন। পুরাতন কসবা ঘোষপাড়ার কাছে রায়পাড়া মসজিদের পাশে আসার পরে কিছু বুঝে ওঠার আগেই রিংকু, তারিন ও তাদের সাথে থাকা ফয়সাল অর্কিডকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করেন। অর্কিডের কাছে থাকা তিন লাখ ৪০ হাজার টাকাও ছিনিয়ে নেন। এরপর অর্কিডের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। রিংকুর শাশুড়ি রুনা বেগম গুরুতর অবস্থায় সেখান থেকে অর্কিডকে যশোরের কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা না করিয়ে কালীগঞ্জের পূর্বাশা বাস কাউন্টারের সামনে রেখে চলে আসেন। বাড়িতে খবর পেয়ে অর্কিডকে প্রথমে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে রেফার করা হয়।
অর্কিডের স্বজনরা জানান, মৃত্যুর আগে অর্কিড ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ভিডিও করে গেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সেই ভিডিওতে অর্কিড জানিয়েছিলেন, তার শরীরে রিংকু, তারিন ও ফয়সাল পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।
এই ব্যাপারে অর্কিডের চাচা আমিনুর রহমান জানান, অনেক আগে থেকেই এমপি আনারের পরিবারের সাথে আমাদের বিরোধ রয়েছে। এই ঘটনার আগে রিংকু ও তার লোকজন অর্কিডকে অপহরণ করে নিয়ে ৫দিন আটক রেখেছিলো।
অর্কিডের স্ত্রী তানজিলা আফরিন অর্পা বলেন, আমার স্বামীর শরীরে আগুন ধরিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যার সঙ্গে সাবেক এমপি আনারের ভাইপো মনিরুজ্জামান রিংকু, তার স্ত্রী তারিন, ফয়সালরা সরাসরি জড়িত। পরকীয়া বলে প্রকৃত হত্যাকাণ্ডকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সবকিছুর প্রমাণ থাকলেও পুলিশ মামলা নিতে চাচ্ছে না।
অর্কিডের বাবা ওসমান গনি বলেন, আমার একমাত্র ছেলেকে সাবেক এমপি আনারের ভাইপো রিংকু, তার স্ত্রী তারিন ও ফয়সাল হত্যা করেছে। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।
অর্কিডের মা আরজিনা সুলতানা অভিযোগ করে বলেন, আগুন দিয়ে পোড়ানোর পর ছেলের চিকিৎসার জন্য উদ্ধার করে নিয়ে আসার সময় জোরপূর্বক ভিডিও করে নেয় রিংকু ও তারিন। না হলে তারা আমার সন্তানকে নিয়ে আসতে দিচ্ছিল না। কিন্তু প্রকৃত তথ্য দিয়ে মৃত্যুর আগে সবকথা বলে গেছেন তার সন্তান। যা তাদের কাছে রেকর্ড রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা এই ব্যাপারে যশোর কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ ভুল বুঝিয়ে আমাদের দিয়ে সাদা কাগজে সই করে রেখে এখন অপমৃত্যু মামলা দেখাচ্ছে। অর্কিড হত্যার ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়েও তিনি সংশয় প্রকাশ করেছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার এসআই আলমগীর হোসেন বলেছেন, এখনও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। আমরা আইনগত প্রক্রিয়ার মধ্যেই আছি।
