জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: যশোর শহরের ফুটপাত ও পৌর সড়কের একাংশ ফের আগের চেহারায় ফিরেছে। মাসব্যাপী অভিযানে যেসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছিল, তার বেশিরভাগ দখল হয়ে গেছে।
উচ্ছেদকৃতরা স্ব-স্ব স্থানে ফিরে ফুটপাত ও সড়কের একাংশজুড়ে পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। এর ফলে শহরে যানজট ও জনদুর্ভোগের আশঙ্কা বেড়ে গেছে। একই সাথে পৌর কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের শ্রম ও অর্থ সবই পানিতে গেছে। এ নিয়ে সচেতন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
যশোর পৌরসভার হিসাব মতে, পানি নিষ্কাশন ও পথচারীদের নির্বিঘেœ চলাচলের জন্য প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয় করে নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দিত ড্রেন ও কংক্রিটের সড়ক। সড়কের প্রশস্ততা বাড়িয়ে দুই লেনের ডিভাইন সড়ক হয়েছে। শহরকে পরিচ্ছন্ন ও দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে ডিভাইন সড়কে দেশি-বিদেশি নানা ফুল-ফল ও বনজ গাছ রোপণ করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণে কর্তৃপক্ষের নজরদারি একদমই নেই। যে কারণে সৌন্দর্য ঢাকা পড়ে গেছে টোঙ দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে। পথচারীদের জন্য নির্মিত ড্রেনের ওপর চেয়ার-বেঞ্চ বসিয়ে দেদার ব্যবসা হচ্ছে ভাজা-পোড়া, চটপটি, তৈরি পোশাক, ভাঙড়ি পণ্য ও ফলমূলসহ হরেক রকমের পণ্য।
এসব অবৈধ স্থাপনা নিয়ে দৈনিক কল্যাণে একাধিকবার সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সড়ক ও অবৈধ দখলদারদের নাম উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশের একপর্যায়ে গত অক্টোবর মাসে শুরু হয় উচ্ছেদ কার্যক্রম। যশোর পৌর কর্তৃপক্ষ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ যৌথভাবে আড়াই সহ¯্রাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে।
উচ্ছেদ অভিযানে প্রায় এক মাস ব্যয় হয় কর্তৃপক্ষের। কর্তৃপক্ষের হিসাবমতে, ১৩ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত দেড় সহ¯্রাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। ড্রেন ও ফুটপাত থেকে উচ্ছেদ করা হয় কয়েকশ’ হকার।
২৪ নভেম্বর যশোরে প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে সামনে রেখে পৌর কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে ফের অভিযান শুরু হয়। এ সময়ে দড়াটানা, মুজিব সড়ক, নেতাজী সুভাস বসু লেন, মণিহার এলাকা, রেলরোড, নীলরতন সড়কসহ শহরজুড়ে আরও সহ¯্রাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।
এসব অভিযানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পৌরসভার প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী কেএম আবু নওশাদ ও সহকারী প্রকৌশলী বিএম কামাল আহমেদ নেতৃত্ব দেন। পৌরসভার লোকজন এবং পুলিশ উচ্ছেদ কার্যক্রমে সহায়তা করেন।
এদিকে, শহরের মাইকপট্টি ও বড় বাজারের যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দোকানের পণ্য সড়কে সাজিয়ে ব্যবসা করে আসছিল তাও উচ্ছেদ করে পৌর কর্তৃপক্ষ।
তবে উচ্ছেদের আওতায় পড়েনি দড়াটানার ফলের দোকানগুলো। ভৈরব নদের দিকে দোকানগুলোকে সর্বোচ্চ দুই ফুট সরিয়ে দেয়া হয়। এ নিয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে বিভিন্ন মহলে। অন্যদিকে, রামকৃষ্ণ আশ্রম থেকে শুরু করে সরকারি মুরগি ফার্ম পর্যন্ত ড্রেনের দখল নিয়ে যারা দীর্ঘদিন ধরে ভাংড়ি ব্যবসা, ভাংড়ির আড়ালে মাদকের কারবার করে আসছেন তাদের গায়েও আঁচড় পড়েনি।
শুক্রবার যশোর শহর ঘুরে দেখা গেছে সর্বত্রই ফিরেছে আগের চেহারায়। উচ্ছেদ হওয়ারা ফের স্ব-স্ব স্থানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছেন।
এ বিষয়ে পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) বিএম কামাল আহম্মেদ বলেন, সবকিছু নজরদারির মধ্যে আছে। ফের দখলকারীদের ভোগ করতে হবে কঠোর শাস্তি।