রায়হান সিদ্দিক: প্রতিবছর ঘটা করে পরিবেশ দিবস পালিত হলেও জনসচেতনতা বাড়ছে না। এ ব্যাপারে সবাই যেন উন্নাসিক।
সময়ের বিবর্তনে পরিবর্তন হয়েছে যশোর জেলার অবকাঠামো। কিন্তু ভঙ্গুর অবস্থা জেলার পরিবেশ পরিচ্ছন্নতার। যশোর পৌরসভার প্রাণকেন্দ্র শহরের মণিহার চত্বরে গেলে বোঝা যায় পরিবেশ নিয়ে কতটুকু সচেতন এখানকার মানুষ। মণিহার চত্বর থেকে খুলনা রোডে যেতেই বাম হাতে বিজয় স্তম্ভের প্রাচির ঘেষে রয়েছে ২টি ডাস্টবিন যা ময়লায় পরিপূর্ণ। ডাস্টবিনের নিচেও ময়লার স্তূপ । তাছাড়া সড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনার স্তুপের দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ পথচারী। স্থানীয়রাসহ এখানে অবস্থিত ফল ব্যবসায়ী ও হোটেল ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যে আবর্জনা ফেলে আসছে। এর জন্য পৌর প্রশাসনের গাফিলতি ও দায়িত্বহীনতাকে দোষারূপ করছেন এলাকাবাসী।
ডাস্টবিনের গা ঘেষেই রয়েছে সিএনজি স্ট্যান্ড যেখান থেকে প্রতিদিন শত শত মানুষ জেলার বিভিন্ন রুটে যাতায়ত করে। সিএনজি ড্রাইভার হায়দার আলী জানান, প্রকট দুর্গন্ধে যাত্রীরা অতিষ্ট। অনেক সময় গন্ধ সহ্য করতে না পেরে যাত্রীরা গাড়ি থেকে নেমে যায়। দীর্ঘদিন ধরেই এভাবে চলছে। বার বার পৌর কর্তৃপক্ষকে বলেও কোন সমাধান মেলেনি।
ফল ব্যবসায়ী মতিয়ার রহমান জানান, ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট কোন জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে এখানে ফেলতে হয়। কিন্তু পৌরসভা থেকে যদি নিয়মিত ময়লা নিয়ে যেত তাহলে কোন সমস্যা হতো না। ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে দোকানে বসে ব্যবসা করতে পারিনা। আমার মত সব ব্যবসায়ীদের একই অবস্থা।
বৃষ্টির সময় আবর্জনার পঁচা পানি পথচারীদের ভোগান্তি আরো বাড়িয়ে দেয়। এতে দুর্গন্ধের মাত্রা বেড়ে যায়। এখানে পচা ফল, নষ্ট সবজি, বাসাবাড়ির সব ধরনের ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এতে যাত্রী সাধারণ ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের পথ চলা কষ্টকর।
শুধু মণিহার চত্বর না পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডের একই হাল। পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড লোন অফিস পাড়ায় রয়েছে দুটি বিদ্যালয়। এর মধ্যে প্রাচীন বিদ্যালয় সম্মিলনী ইনস্টিটিউশনের প্রাচীর ঘেঁষেই রয়েছে ডাস্টবিন যা নিয়মিত পরিস্কারের অভাবে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। রাস্তার উপর ছড়ানো ছিটানো ময়লার ভেতর দিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীদের।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিহির ঘোষ জানান, দীর্ঘদিন পৌরকর্তৃপক্ষকে বলেও ডাস্টবিনটি সরানো সম্ভব হয়নি। তাছাড়া স্থানীয়রাও যে যার ইচ্ছামত ময়লা ফেলে। পরিস্কারের অভাবে উৎকট গন্ধে স্কুলের বাচ্চারা অতিষ্ঠ।
পরিবেশ নিয়ে সাধারণ মানুষ কতটুকু সচেতন এবং বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সরকারি এমএম কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সোলজার রহমান জানান, সাধারণ মানুষ আবহমানকাল থেকে যে অভ্যাসে অভ্যস্ত তা থেকে এখনো বেরিয়ে আসতে পারেনি। তাছাড়া জনগণকে সচেতন করার জন্য পরিকল্পিত কোন ব্যবস্থাও গ্রহণ করছে জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসন। যার কারনে এই ভঙ্গুর দশা। এই অবস্থা থেকে বের হতে হলে প্রত্যেককে নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী একজন শ্রমিক ৮ঘন্টা কাজ করবে কিন্তু আমাদের পৌরসভায় যারা পরিচ্ছন্ন কর্মি সর্বোচ্চ ২ থেকে ৪ ঘন্টা কাজ করে এবং পৌরকর্তৃপক্ষ সঠিকভাবে তাদের পরিচালিত করতে পারছে না। অথচ ২০১৮ সালে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। যার মাধ্যমে বাছাইকৃত ময়লা আবর্জনা রিসাইক্লিন করে শুকানোর পর নেটিং করে একটি অংশ দিয়ে সার ও আরেকটি অংশ দিয়ে বায়োগ্যাস তৈরি করা হয়। যদি পৌরকর্তৃপক্ষ সঠিকভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে পারতো তাহলে আমাদের শহর শতভাগ পরিচ্ছন্ন হতো বরং বাইরে থেকে আমাদের বর্জ্য ক্রয় করতে হতো।
এবিষয়ে পৌরসভার সচিব আজমল হোসেন জানান, প্রতিদিনই পৌরসভার গাড়ি ডাস্টবিন থেকে ময়লা তুলে আনে। অনেক সময় দেখা যায় পৌরসভার গাড়ি চলে যাওয়ার পর স্থানীয়রা ময়লা ফেলে যা পরদিন সকালে ছাড়া পরিস্কার করা হয় না। আর মণিহার চত্বরে যে ডাস্টবিন গুলো আছে সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় বলে জানি। তবে যদি কোথাও পৌরসভা থেকে পরিচ্ছন্ন কর্মি না যায় তা হলে অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নিবো। তিনি আরও বলেন, একই সাথে পৌরবাসীর কাছে অনুরোধ তারা যেন ডাস্টবিন ছাড়া অন্যত্র ময়লা আবর্জনা না ফেলে।
১৯৭২ সালে জাতিসংঘের মানবিক পরিবেশ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচীর (ইউএনইপি) উদ্যোগে প্রতি বছর সারাবিশ্বের একশ’টিরও বেশি দেশে ৫জুন ‘ বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘একটাই পৃথিবী: প্রকৃতির ঐক্যতানে টেকসই জীবন ’