কল্যাণ ডেস্ক
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সৃষ্ট সংকট থেকে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে নানামুখী প্রনোদনা দিয়েছে সরকার। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণ পরিশোধেও বিভিন্ন ছাড় দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২২ সালের শুরুতে তা তুলে নেয়ার পর ধারাবাহিকভাবে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে আটটি ব্যাংক।
এর মধ্যে চারটি সরকারি ও বেসরকারি চারটি ব্যাংক রয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে এসব ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ১৯ হাজার ৪৭ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ঘাটতির তালিকায় রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী, বেসিক, রূপালী ও বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক; বেসরকারি বাংলাদেশ কমার্স, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট, ন্যাশনাল ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের নাম।
গত বছরের শেষ প্রান্তিক সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ৮৪ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা। কিন্তু সংরক্ষণ করেছে ৭৩ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। কোনো কোনো ব্যাংক প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ নিরাপত্তা সঞ্চিতি হিসেবে রেখে দেয়ায় সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে ঘাটতির পরিমাণ কিছুটা কম। ফলে ব্যাংক খাতের সার্বিকভাবে নিরাপত্তা সঞ্চিতি ঘাটতি ১১ হাজার ৯ কোটি টাকা।
সরকারি চার ব্যাংক
রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ১১ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি ঘাটতি বেসিক ব্যাংকে ৪ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে ঘাটতি ছিল ৪ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা। এর পরই অগ্রণী ব্যাংকের ঘাটতি ৪ হাজার ৪২২ কোটি টাকা।
সেপ্টেম্বরে যা ছিল ৩ হাজার ৫২১ কোটি টাকা। তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে রূপালী ব্যাংক। ২ হাজার ৮১৪ কোটি টাকার ঘাটতিতে পড়েছে ব্যাংকটি। তিন মাস আগে ঘাটতি ছিল ৩ হাজার ১৩ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে নতুন করে ঘাটতির তালিকায় যুক্ত হয়েছে কৃষি ব্যাংকের নাম।
বিশেষায়িত এ ব্যাংকের ঘাটতি ৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। আর তিন মাস আগে জনতা ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৫৯৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ছিল। কিন্তু বছর শেষে ব্যাংকটি ঘাটতি পূরণ করেছে।
ন্যাশনাল ব্যাংকেরই ঘাটতি ৬৬১৮ কোটি টাকা
বেসরকারি চার ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি কিছুটা কমে হয়েছে ৭ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে এ চার ব্যাংকের ঘাটতি ছিল ৮ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু ন্যাশনাল ব্যাংকেরই ঘাটতি ৬ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা। তিন মাস আগে যা ছিল ৭ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন: জাপানের ক্রমবর্ধমান বিদেশি শ্রমবাজারের সুযোগ নিতে পারবে বাংলাদেশ?
দ্বিতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৩৪৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে। এ ছাড়া মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ১৭১ কোটি ১৬ লাখ টাকা ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ১৩৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে।
মোট ঋণ ১৪ লাখ কোটি টাকা
গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট ঋণ ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের মোট ঋণ ছিল ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর সময়ে তিন মাসে খেলাপি ঋণ কমেছে ১৩ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা।
নিয়ম অনুযায়ী, সব ধরনের ব্যাংক যেসব ঋণ দেয় তার গুণমান বিবেচনায় নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রভিশন হিসেবে জমা রাখতে হয়। কোনো ঋণ শেষ পর্যন্ত মন্দ ঋণে পরিণত হলে তাতে যেন ব্যাংক আর্থিকভাবে ঝুঁকিতে না পড়ে, সেজন্য এ প্রভিশন সংরক্ষণের নিয়ম রাখা হয়েছে।
ব্যাংকের অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে পাঁচ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্ন বা সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কু-ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়।
আরও পড়ুন: রপ্তানি পোশাক চুরির হিড়িক ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে
১ Comment
Pingback: সেবা খাতের আয় প্রত্যাবাসনে বিধিবিধান শিথিল করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক