নিজস্ব প্রতিবেদক: ইউনিয়ন পর্যায়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন নিয়ে বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। একটি ইউনিয়নের কমিটি গঠন নিয়ে পদবঞ্চিত এক নেতা আদালতে মামলার প্রস্তুতি নিয়েছেন। ওই নেতা গত বুধবার যশোর জেলা ও বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির পাঁচ শীর্ষ নেতাকে উকিল নোটিশও দিয়েছেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে তৃনমূলে বিএনপির কমিটি পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে সম্প্রতি বাঘারপাড়াতে তৎপরতা জোরালোভাবে শুরু হয়েছে। নয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার আহ্বায়ক কমিটি গঠনের কাজ প্রায় শেষের পথে। কমিটি গঠনের মূল দায়িত্বে রয়েছেন বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শামসুর রহমান ও যুগ্ম আহ্বায়ক মসিয়ুর রহমান। এ দুইজনের যৌথ স্বাক্ষরিত কমিটির চূড়ান্ত অনুমোদনের দায়িত্বে রয়েছেন বাঘারপাড়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত যশোর জেলা বিএনপি নেতা গোলাম রেজা দুলু।
বিএনপি পুনর্গঠন নীতিমালায় (২০২২) উল্লেখ রয়েছে- ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি হবেন ওই ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক। আর সাধারণ সম্পাদক হবেন এক নং ক্রমিকের যুগ্ম আহ্বায়ক। এ নিয়ম মেনে অন্যান্য ইউনিয়নের কমিটি গঠন হলেও দোহাকুলা ইউনিয়নের কমিটি গঠনে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে সভাপতিকে বাদ দিয়ে সাধারণ সম্পাদককে আহ্বায়ক করা হয়েছে। আর যিনি কখনও বিএনপি করেননি এমন একজনকে এক নং যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৪৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সম্প্রতি বিলুপ্ত হওয়া দোহাকুলা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মহসিন রেজা আদালতে মামলার প্রস্তুতি নিয়েছেন। মামলার আগের ধারাবাহিকতার জন্য মহসিন রেজা যশোর জেলা ও বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির পাঁচ শীর্ষ নেতাকে উকিল নোটিশ দিয়েছেন। নোটিশ প্রাপ্তরা হচ্ছেন- বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শামসুর রহমান ও যুগ্ম আহ্বায়ক মশিয়ুর রহমান, যশোর জেলা বিএনপির মনোনীত বাঘারপাড়ার দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতা গোলাম রেজা দুলু, যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু ও যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন। মহসিন রেজার আইনজীবী সঞ্জয় সরকারের ২৪ মে স্বাক্ষরিত এ নোটিশ গত বুধবার ওই পাঁচ নেতাকে দেওয়া হয়েছে।
মহসিন রেজা জানিয়েছেন, তিনি গত ১৯ বছর ধরে দোহাকুলা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। এর আগে তিনি একই ইউনিয়নের যুবদলের সভাপতিসহ উপজেলা যুবদলের সহসভপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বিএনপির প্রতিটা আন্দোলন সংগ্রামে তিনি অংশ নিয়েছেন। যার ফলে বর্তমান সরকারের আমলে তিনি ছয়টি মামলার আসামি হয়েছেন। দোহাকুলা ইউনিয়ন বিএনপির যে আহ্বায়ক কমিটি গঠন হয়েছে, তাতে শুধুমাত্র উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক স্বাক্ষর করেছেন। যুগ্ম আহ্বায়ক ও জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা তাতে স¦াক্ষর করেননি। অবৈধ এ কমিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে তা হালাল করার জন্য নানা কৌশল করা হচ্ছে। আর অবৈধ কমিটির এক নং যুগ্ম আহ্বায়ক করা জাহাঙ্গীর হোসেন তিনি কখনও বিএনপি করেননি। তিনি গত ১৫ বছর ধরে ঢাকায় থাকেন। কোন আন্দোলন সংগ্রামে তার অংশ গ্রহণ নেই। বরং তিনি বর্তমান সরকার পক্ষের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।
এ বিষয়ে বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মশিয়ুর রহমান জানিয়েছেন, নিয়ম অনুযায়ী জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি, উপজেলার আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়ক স্বাক্ষর না করলে সে কমিটির কোন বৈধতা নেই। বিষয়টি জেলা নেতৃবৃন্দ জেনেছেন। তারা যে সিদ্ধান্ত দেবে সেটাই চূড়ান্ত হবে। আর উকিল নোটিশের বিষয়টি শুনেছি।
বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শামসুর রহমান জানিয়েছেন, আমি দোহাকুলা ইউনিয়ন বিএনপির একটি আহ্বায়ক কমিটি সাজিয়েছি। তাতে আমি একাই স্বাক্ষর করেছি। বাকিদের স্বাক্ষর সময়মত নেওয়া হবে।
বাঘারপাড়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত যশোর জেলা বিএনপি নেতা গোলাম রেজা দুলু জানিয়েছেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। যেহেতু আমি দোহাকুলা ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে স্বাক্ষর করিনি, সে কারণে ওই কমিটির কোন বৈধতা নেই।