নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরের তৃতীয় লিঙ্গের লাভলী হত্যার ২৪ ঘন্টার মধ্যে পুলিশ হত্যাকান্ডের রহস্য উম্মোচন করেছে। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রগুলি, বার্মিজ চাকু, করাত ও কুড়ালসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা। গ্রেফতারকৃতরা হলো যশোর সদর উপজেলার দোগাছিয়া গ্রামের শাকিল পারভেজ (২১), ঝাউদিয়া গ্রামের মেহেদী হাসান (১৯), লাভলীর সহযোগী সেলিনা ও নাজমা । হিজড়া সম্প্রদায়ের আধিপত্য বিস্তার, আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার আকাক্সক্ষা, অর্থনৈতিক লেনদেন ও পূর্ব বিরোধের জের হিসেবে লাভলীকে খুন করা হয়েছে বলে আসামিরা স্বীকার করেছে। এই ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় পৃথক দুইটি মামলা হয়েছে। গতকাল রোববার বিকেলে জেলা পুলিশের মিডিয়া সেলের প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
৮ জানুয়ারি সকালে যশোর শহরতলীর হালসা হালসা ব্রিজের কাছে রাস্তার ওপর প্রকাশ্য ছুরিকাঘাতে তৃতীয় লিঙ্গের লাভলী খুন হয়। লাভলী আকতার (৩০) শহরের বেজপাড়া চিরুনিকল এলাকার মৃত আব্দুল করিম বিশ্বাসের মেয়ে ও ধর্মতলা মোড়ের ফারুক হোসেনের বাড়ির ভাড়াটিয়া। এঘটনায় বিচারের দাবিতে এলাকাবাসী বিকেলে ধর্মতলা মোড়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
পুলিশ জানায়, শনিবার সকাল ৮টার দিকে লাভলী হিজড়া তার অপর দুই সহযোগী হিজড়া সেলিনা ও নাজমার সাথে ধর্মতলা মোড় থেকে অটোরিকশা যোগে কায়েমকোলা গ্রামের দিকে যাচ্ছিল। তারা যশোর ছুটিপুর সড়কের হালসা ব্রিজের কাছে মাঠের মধ্যে পৌঁছালে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আগে থেকে রাস্তার ওপর ওৎ পেতে থাকা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী যশোর সদর উপজেলার দোগাছিয়া গ্রামের শাকিল পারভেজ (২১) ও ঝাউদিয়া গ্রামের মেহেদী হাসান (১৯) তাদের গাড়ি থামিয়ে দেয় এবং তাদের ব্যবহৃত পিস্তল দিয়ে লাভলীকে গুলি করে। কিন্তু গুলি লক্ষভ্রষ্ট হওয়ায় শাকিল পারভেজ বার্মিজ চাকু দিয়ে এলোপাতাড়ী কুপিয়ে লাভলীর মুখের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে এবং গলায় পোচ দিয়ে মোটরসাইকেল যোগে চলে যায়। এসময় তাদের আর্তচিৎকারে আশপাশের লোকজন তাকে গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে। এর কিছুক্ষণ পরেই তার মৃত্যু হয়।
আটক এই হত্যাকান্ডের পরিকল্পনাকারী নাজমা ও সেলিনা জানায়, তারা লাভলীর সহযোগী। তারা যশোর শহরের ধর্মতলায় থেকে হিজড়া সরদারণী পান্জারির অধীনে এক সাথে ছিলেন। কিন্তু তাদের মতের মিল না হওয়ায় সম্প্রতি তারা তিনজন পান্জারি থেকে আলাদা হয়ে যান। এনিয়ে পান্জারি ও তার অনুসারীদের মধ্যে মনোমালিন্য চলে আসছিল। এই সুযোগে নাজমার কথিত স্বামী জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে দল গঠনের লক্ষ্যে নাজমা, সেলিনা, জিয়াউর রহমান, তার ছেলে শাকিল পারভেজ ও মেহেদী হাসান পরিকল্পনা শুরু করে। কিন্তু লাভলী নিজ বিচক্ষণতায় সেই পরিকল্পনায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এরপর তারা লাভলীকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
রক্তাক্ত লাভলীকে হাসপাতালে নেয়ার পথে নাজমা ও সেলিনার পুর্ব পরিকল্পনা ফাঁস হতে পারে এমন আশংকায় তাদের মোবাইল ফোন কারবালা পুকুরে ছুড়ে ফেলে দেয় এবং তাদের মোবাইল ছিনতাই হয়েছে বলে প্রচার করে। তাদের কথাবার্তা সন্দেহজনক হওয়ায় পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে লাভলীর দুই সহযোগীকে ডিবি অফিসে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। একপর্যায়ে তারা তাদের পরিকল্পনার কথা স্বীকার পূর্বক হত্যাকান্ডে জড়িতদের নাম ঠিকানা প্রকাশ করে। এই সূত্র ধরে পুলিশ শাকিল পারভেজ ও মেহেদী হাসানকে গ্রেফতার করে।