নড়াইল প্রতিনিধি
নড়াইলের আলোচিত এসএসসি পরিক্ষার্থী সিরাজ শেখ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন হয়েছে। নিজের দোষ স্বীকার করে প্রধান আসামি সবুর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।
শুক্রবার বিকালে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমাতুল মোর্শেদার আদালতে আসামি সবুর এ জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে তিনি জানান, রাতে মেয়ে ইয়াসমিনের সঙ্গে তার প্রেমিক এসএসসি পরীক্ষার্থী সিরাজকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পেয়ে তাকে খুন করেন সবুর শেখ। পরে মৃতদেহ যাতে কেউ শনাক্ত করতে না পারে সে জন্য মুখমণ্ডলে অ্যাসিড ঢেলে ঝলসে দেয়া হয়।
নড়াইলের আলোচিত এসএসসি পরীক্ষার্থী সিরাজ শেখ হত্যাকাণ্ডে নিজের দোষ স্বীকার করে প্রধান আসামি সবুর আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। লোহাগড়া থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার সবুরকে শুক্রবার বিকালে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমাতুল মোর্শেদার আদালতে সোপর্দ করা হলে সেখানে এ তিনি স্বীকারোক্তি দেন।
রাতে লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসির উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, লোহাগড়া উপজেলার চরদৌলতপুর সরস্বতী একাডেমি থেকে চলতি এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় মো. সিরাজ শেখ। গত ৬ মে (শনিবার) রাত ৮টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি। সেই থেকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে বুধবার (১০ মে) লঙ্কারচর দক্ষিণপাড়ার মিরুর আম বাগান থেকে মুখমণ্ডল পোড়া অবস্থায় তার মরদেহের খোঁজ মেলে। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশ মাঠে নামে। তদন্তে চরদৌলতপুর গ্রামের টিউবওয়েলমিস্ত্রি সবুর শেখের মেয়ে ইয়াসমিনের সঙ্গে সিরাজের প্রেমের সম্পর্কের ব্যাপারটি বেরিয়ে আসে। বিষয়টি নিশ্চিত হতে পুলিশ সবুর শেখ, তার মেয়ে ইয়াসমিন, স্ত্রী ও ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজেদের হেফাজতে নেয়া হয়।
পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সবুর শেখ জানান, ৬ মে রাতে তাদের গোয়ালঘরে ইয়াসমিনের সঙ্গে সিরাজকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পান তিনি। মো. সিরাজ শেখকে ধরতে গেলে সে দৌড়ে পালানোর সময় গাছের সঙ্গে আঘাত লেগে মাটিতে আছড়ে পড়ে। এ সময় সবুর কোদালের বাট দিয়ে তার মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করলে সিরাজ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। পরে ধারালো চাকু দিয়ে তাকে গলাকেটে হত্যা করে সেই রাতে মৃতদেহ বাড়ির পাশের একটি কচুরিপানার ডোবায় লুকিয়ে রাখা হয়। পরের রাতে সেটি ডোবা থেকে তুলে নির্জন বিলের মাঝ দিয়ে অন্তত দুই কিলোমিটার দূরে বয়ে এনে মিরুর আমবাগানে ফেলেন। এ সময় অ্যাসিড সিরাজ শেখের মৃতদেহের মুখমণ্ডলে ঢেলে দেন তিনি।
হত্যা রহস্য উদ্ঘাটিত হলে নিহতের বাবা একই গ্রামের ইকরাম শেখের দায়ের করা মামলায় আসামি শুক্রবার আদালতে সোপর্দ করা হয়। সেখানেও আসামি সবুর ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকার করেন। আদালত আসামির জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।