রবিঠাকুরের ভাষায়, ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশও ছেয়ে…আসে বৃষ্টিরও সুবাসও বাতাসও বেয়ে…’
নিজস্ব প্রতিবেদক
আকাশজুড়ে মেঘের ঘনঘটা হোক বা না হোক, অঝোর ধারায় বৃষ্টির দেখা মিলুক আর নাই মিলুক; ঋতু পরিক্রমায় বাংলার বুকে আজ এসেছে প্রেমময়-উচ্ছ্বল বর্ষা। আজ পহেলা আষাঢ়। রূপময় ঋতুর প্রথম দিন। গ্রীষ্মের খরতাপের ধূসর নাগরিক জীবন আর প্রকৃতিতে প্রাণের স্পন্দন জাগায় বর্ষা। পুষ্প-বৃক্ষে-পত্রপল্লবে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে নতুন সুরের বার্তা নিয়ে এসেছে বর্ষা। রবিঠাকুরের ভাষায় ‘ঐ আসে ঐ ঘন গৌরবে নবযৌবন বরষা, শ্যাম গম্ভীর সরসা…’
মেঘের পরশে আকাশ আবৃত নয়। গ্রীষ্মের খরতাপে কম্পিত ভুবন। বর্ষার একি বিদ্রোহী রূপ! প্রকৃতিতে রুদ্র পরিবর্তনের খড়গ। ‘নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহিরে’ কবির বর্ণনার সে আষাঢ় কোথায়? এসো নীপবনে ছায়াবীথিতলে, এসো করো স্নান নবধারা জলে-গ্রীষ্মের দাবদাহের মধ্যে এমনই হওয়ার কথা আজ। আষাঢ়ের প্রথম দিনে রিমঝিম রিমঝিম বৃষ্টি না হয় হলো না। তাতে কি!
গ্রীষ্মের ধুলোমলিন জীর্ণতাকে ধুয়ে ফেলে গাঢ় সবুজের সমারোহে প্রকৃতি সাজে পূর্ণতায়। আষাঢ়ের প্রথমদিনে উপচে পড়া পদ্মপুকুর রঙিন হয়ে ফোটে বর্ষাকে পাওয়ার জন্য। কেয়ার বনেও কেতকীর মাতামাতি। রবিঠাকুরের ভাষায়, ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশও ছেয়ে…আসে বৃষ্টিরও সুবাসও বাতাসও বেয়ে…’
ঋতুচক্রের হিসাবে আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস বাংলায় বর্ষাকাল। বর্ষায় বাংলার পরিবেশটাই পাল্টে যায়। নিয়মিত বর্ষণে প্রকৃতি হয়ে ওঠে আর্দ্র কোমল। গুরু-গুরু মেঘের গর্জন, মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমক, যখন-তখন ঝলমলে আকাশজুড়ে ধূমল মেঘের ঘনঘটা আর অঝোর ধারার বর্ষণ-এই হলো বাংলায় বর্ষার চিরচেনা দৃশ্য। এই অনাবিল বৃষ্টি ধরা আর্দ্র-কোমল করে তোলে গ্রীষ্মের খরতাপে দগ্ধ ধরাতল। প্রকৃতিতে প্রাণসঞ্চার করে সতেজ সবুজে স্নিগ্ধ করে তোলে বাংলার নিসর্গ।
প্রচুর বৃষ্টিপাতে নদ-নদী, বিল-ঝিল ভরে ওঠে। ব্যাঙের ডাকে মুখর হয়ে ওঠে গ্রামীণ পরিবেশ। টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ সৃষ্টি করে চলে এক ভিন্ন সংগীত। বন্যায় নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে জীবনযাত্রায় দুর্ভোগ সৃষ্টি করে। তবে বন্যাবাহিত পলি বাড়ায় জমির উর্বরা শক্তি। এসব কারণে কৃষিপ্রধান আমাদের দেশে বর্ষার গুরুত্ব ব্যাপক।
বাঙালির কাব্য, সংগীত, সাহিত্য, চিত্রকলায় বর্ষা বৈচিত্র্যময় রূপে ছন্দে স্পন্দনে উদ্ভাসিত। অন্যদিকে বর্ষার রুপালি ইলিশ মৎস্যপ্রিয় বাঙালির রসনাতৃপ্তিতে যে স্বাদের সংযোগ ঘটায়, তা তুলনারহিত। ভেজা হাওয়ায় ভেসে আসা কদম-কেয়ার সৌরভ, ইলিশের স্বাদ, টিনের চালে বৃষ্টির সুর-সব মিলিয়েই বর্ষা কেবল ঋতুই নয়, বাঙালি সংস্কৃতিরও অংশ।