নিজস্ব প্রতিবেদক
খুলনায় বসবাস করেন ৬০ উর্ধ্ব নাজনীন আক্তার। চোখের সমস্যায় ভুগছেন দীর্ঘদিন ধরে। মাঝেমধ্যে ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা নেন। কিন্তু এবার তিনি চিকিৎসা নিয়েছেন যশোরের প্রত্যন্ত এলাকায় চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মিজানুর রহমানের কাছে। ঢাকার নামকরা ডাক্তার এসেছিলেন যশোরের হৈবতপুর ইউনিয়নের নাটুয়াপাড়াস্থ সমন্বিত প্রবীণ ও শিশু নিবাস ‘আমাদের বাড়ি’তে। শুক্রবার সেখানে বসে মেডিকেল ক্যাম্প। এ ক্যাম্পে নাজনীনের মতো তিন শতাধিক রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়ে আনন্দিত-গর্বিত। যাদের বেশির ভাগ বাড়ি যশোর ও আশপাশের জেলায়।
দীর্ঘদিন হৃদরোগে আক্রান্ত যশোর সদরের বারিনগর এলাকার ষাটোর্ধ্ব রহিমা বেগম। হতদরিদ্র এ নারীর গেল কয়েক বছর ধরে চিকিৎসা নেন স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে। অর্থের অভাবে ভালো চিকিৎসকের কাছে যেতে পারেননি তিনি। তিনি স্বল্পমূল্যে রেজিস্ট্রেশন করে ঢাকার স্বনামধন্য হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এমএ রশিদের কাছে চিকিৎসা নিয়েছেন। এতে তার খুশির শেষ নেই।
রহিমা বলেন, ‘টাকা পয়সা না থাকাতে ভালো কোন ডাক্তার দেখাতে পারেনি। শুনেছি, ঢাকার বড় বড় ডাক্তার আসবে নাটুয়াপাড়ায়। তাই এখানে মেয়ের হাতে ভর দিয়ে ডাক্তার দেখাতে এসেছি। তিনি জানান, ‘এসব নাম করা ডাক্তারের কাছে যাওয়ার টাকা নেই। আবার গ্রাম থেকে ঢাকায় যেয়ে ওখানে চিকিৎসা সেবার খরচও অনেক। ওনারা গ্রামে এসে রোগী দেখছে এতে আমাদের মতো গরীর খেটে খাওয়া মানুষদের ভাগ্যের ব্যাপার।’
 স্ত্রীকে নিয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছেন নুর ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা এলাকার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ। অধিকাংশ মানুষ কৃষক, দিন মজুর। তাদের কোন রোগের জন্য ঢাকা শহরে যাওয়া সম্ভব না। একই সাথে ব্যয় বহুলও বটে। আল্লাহ অশেষ রহমত, এতগুলো বড় বড় ডাক্তার এখানে রোগী দেখছেন। ১২ বছর বয়সী আইমান চিকিৎসা নিতে আসে পরিবারের সাথে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ পেয়ে তার স্বজনরা খুবই খুশি।
স্ত্রীকে নিয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছেন নুর ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা এলাকার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ। অধিকাংশ মানুষ কৃষক, দিন মজুর। তাদের কোন রোগের জন্য ঢাকা শহরে যাওয়া সম্ভব না। একই সাথে ব্যয় বহুলও বটে। আল্লাহ অশেষ রহমত, এতগুলো বড় বড় ডাক্তার এখানে রোগী দেখছেন। ১২ বছর বয়সী আইমান চিকিৎসা নিতে আসে পরিবারের সাথে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ পেয়ে তার স্বজনরা খুবই খুশি।
আমাদের বাড়ির স্বপ্নদ্রষ্টা জিএমএসএস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. এমএ রশিদ বলেন, ‘ গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ দরিদ্র। ঢাকাতে যেয়ে চিকিৎসা নিতে তাদের জন্য অনেক কষ্টসাধ্য ও ব্যয়সাধ্য ব্যাপার। এই জন্য চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় আনার চেষ্টা করেছি।
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের বাড়ি’ নামের প্রতিষ্ঠানে সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের জন্য স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। যারা অবহেলিত, সুবিধাবঞ্চিত তারা এখানে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা পায়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নিয়ে বছরে কয়েকবার চিকিৎসা ক্যাম্প করি। সেখানে যশোরসহ আশেপাশের জেলা-উপজেলার মানুষ সেবা নেন। এছাড়া প্রতিমাসে আমি দুই-একবার এখানে এসে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকি। এলাকার মানুষ অপেক্ষা করেন আমি কখন আসবো। সবচেয়ে বড় কথা হলো মানুষের স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করি। সবার মনে রাখতে হবে ওষুধের চেয়ে জীবনযাত্রার প্রণালী মেনে চলা জরুরি।
প্রসঙ্গত, যশোর শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার নাটুয়াপাড়ায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও জিএমএসএস ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যাগে ২০২২ সালে ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় আমাদের বাড়ি। সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের জন্য গ্রামীণ মনোরম পরিবেশে এক একর ৫ শতক জমির ওপর নির্মিত প্রতিষ্ঠানটিতে চারতলা ভবনে ১২০ জন বসবাস করেন। প্রতিষ্ঠানটিতে বসবাসকারীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত সকল সেবা। প্রবীণ ও শিশুদের মধ্যে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, ব্যায়াম, স্বাস্থ্যসেবাসহ সবকিছু বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনায় ধান-সবজি চাষের পাশাপাশি মাছের খামার, হাঁস-মুরগি ও গরুর খামারও রয়েছে। কর্তৃপক্ষের আশা, এখানে প্রবীণরা যেমন স্বস্তি পাবেন তেমনি শিশুরাও শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সমাজের মূলধারায় ফিরতে পারবে।

 
									 
					