নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজের ছাত্রাবাস ‘আসাদ হল’ দখল নেওয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ক্যাম্পাসে দুটি গ্রুপের মহড়া দিতে দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছে, ৮ বছর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এমপির অনুসারীরা হলের নিয়ন্ত্রণ করলেও বুধবার থেকে কাজী নাবিল আহমেদ এমপির অনুসারীরা দখলে নিয়েছেন। এতদিন শাহীন চাকলাদারের অনুসারী হিসাবে কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান নিয়ন্ত্রণ করলেও সদ্য যোগ দেওয়া নাবিলের অনুসারী হিসাবে সংগঠনের প্রচার সম্পাদক নুর ইসলাম নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। দখলে নেয়াকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মহড়া-মিছিলে উত্তেজনা বিরাজ করছে দুদিন। কলেজ প্রশাসনের কঠোর অবস্থান থাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। এদিকে, নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে আজ বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে শাহীন চাকলাদার এমপির অনুসারীরা।
ছাত্রলীগ সূত্র মতে, জেলা আওয়ামী লীগ কার্যত দুটি গ্রুপে বিভক্ত। একটির নেতৃত্ব দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার; অন্যটি সদরের সংসদ কাজী নাবিল আহমেদ। আওয়ামী লীগের এই শীর্ষ দুই নেতার বিভক্তির কারণে সংগঠনের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগও দীর্ঘদিন দুটি গ্রুপে বিভক্ত। বিভক্তের কারণে এম এম কলেজ ছাত্রলীগেও দুটি গ্রুপে বিভক্ত ছিলো। ২০১৫ সালের ২১ এপ্রিল ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে শহীদ আসাদ হল দখলে নেয় শাহীন চাকলাদারের অনুসারীরা। সর্বশেষ মঙ্গলবার দুপুরে নাবিলের অনুসারী হিসাবে পরিচিত ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ জাহিদ হোসেন মিলনের অনুসারী হিসাবে পরিচিত কাজীপাড়ার শাকিল হোসেনের নেতৃত্বে হল দখলের জন্য ক্যাম্পাসে মহড়া দেয় কিছু বহিরাগত যুবক।
এদের সঙ্গে যোগ দেন দীর্ঘদিন শাহীন চাকলাদারের সঙ্গে রাজনীতি করা ছাত্রলীগনেতা নুর ইসলামও। পরে বহিরাগত শাকিল ও ছাত্রলীগনেতা নুর ইসলাম যৌথভাবে আসাদ হলের সকল ছাত্রলীগ নেতাদের ভয় ভয়ভীতি প্রদর্শন করে নির্দেশ দেন ‘এই হলে থাকতে হলে নাবিল ভাইয়ের সঙ্গে রাজনীতি করতে হবে; না করলে হলে তাদের জায়গা নেই’। হল দখলের খবরে শাহীন চাকলাদারের অনুসারী হিসাবে পরিচিত কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান ক্যাম্পাসে মহড়া নেয়। এসময় ক্যাম্পাসে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ও বাকবিতণ্ডা হয়েছে বলে জানিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এদিন দুপুরে কলেজের অধ্যক্ষ নার্গিস আক্তার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানালে পুলিশ ও কলেজ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে কোন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। বুধবারও বহিরাগতদের নিয়ে ছাত্রলীগের একটি পক্ষ ক্যাম্পাসে মহড়া দিয়েছে।
নাম না প্রকাশে কলেজ ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, এম এম কলেজের আশেপাশে যত ছাত্রাবাস আছে সেগুলো সব নিয়ন্ত্রণ করে আসাদ হল ছাত্রলীগ। মূলত জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মসূচিতে জনসমাগত ঘটতে সাধারণ ছাত্রদের নিয়ে যেতে ভূমিকা পালন করে আসাদ হল ছাত্রলীগ। এতোদিন শাহীন চাকলাদারের পক্ষে আসাদ হল মিছিল মিটিংয়ে লোকসমাগম ঘটাতো। বেশ কিছুদিন নাবিলের অনুসারীরা হল দখলে মরিয়া হয়ে উঠে। সেই সুযোগে নাবিলের অনুসারী হিসাবে নুর ইসলাম হল দখলে নিয়েছে। একই সাথে নাবিলের সঙ্গে রাজনীতি না করলে হল ছাড়ার নির্দেশও তিনি দিয়েছেন। ক্যাম্পাসে শাহীন চাকলাদার পক্ষে এতোদিন যারা মিছিল মিটিং ও প্রভাব বিস্তার করতো তারা কেউ আসাদ হল নেই।
অনেকের হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। দুটি গ্রুপ দুই দিন ধরে মহড়া দেওয়া অব্যাহত রাখায় বর্তমানে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে। আসাদ হল দখল নেওয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুগ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ নিয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে কলেজ প্রশাসন। বুধবারও সাড়ে ১২ টার দিকে শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দদের নিয়ে আসাদ হলে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে যান কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মর্জিনা আক্তার। তিনি বলেন, কলেজে কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেয়া হবে না। ছাত্রলীগের দুপক্ষের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মুখোমুখি হলে তাৎক্ষনিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানালে পরিস্থিতি শান্ত হয়। ক্যাম্পাসে পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে কথা বলেছি। যদি কেউ বিশৃঙ্খলা করে তাদের বিরুদ্ধে কলেজ প্রশাসন যেকোন ব্যবস্থা নিবে।
আসাদ হলে দায়িত্ব থাকা শাহীন চাকলাদারের অনুসারী হিসাবে পরিচিত সৌরভ ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘বহিরাগতরা ছেলেরা বিভিন্ন সময়ে প্রভাব বিস্তার করার জন্য হল দখলের পাঁয়তারা করে। শাহীন চাকলাদাররের অনুসারী হিসাবে কয়েকজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি ঢাকাতে অবস্থান করায় এর বেশি মন্তব্য করতে রাজি হননি। এই বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকের নাম্বারে যোগাযোগ করে বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে নাম না প্রকাশে জেলা ছাত্রলীগের এক সহসভাপতি জানান, দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ায় এম এম কলেজ ছাত্রলীগে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে।
বহিরাগতরা কলেজ ক্যাম্পাসে প্রভাব বিস্তার করার জন্য ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করছে। যারা হল দখল করছে বা করার পাঁয়তারা করছে তারা কেউ ছাত্র না। তারা বহিরাগত। ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা করলে তাদের বিরদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) একেএম শফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে কলেজে উত্তেজনা বিরাজ করায় পুলিশ ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়। কাউকে আটক করা হযনি। এখন পর্যন্ত কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেনি।
আরও পড়ুন: নেতৃত্বে আসছেন সাবেক ও বর্তমান দুই ছাত্রলীগ নেতা!
১ Comment
Pingback: ১৭ প্রার্থীর শীতল লড়াই - দৈনিক কল্যাণ