কল্যাণ ডেস্ক
আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার এআই-১৭১ নম্বরের একটি যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় অন্তত ২০৪টির বেশি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় একজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি ৪০ বছর বয়সি ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক বিশ্বাস কুমার রমেশ। স্থানীয় পুলিশের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস।
এছাড়া আশঙ্কা করা হচ্ছে, যে মেডিক্যাল কলেজের হোস্টেলের ওপর বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে, সেখানেও নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে। খবর হিন্দুস্তান টাইমসের।
দুর্ঘটনার পর বিশ্বাস কুমারকে রাস্তায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখা যায়। তিনি হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেন, উড্ডয়নের ত্রিশ সেকেন্ড পরে ‘একটি বিকট শব্দ’ হয় এবং ‘তারপর বিমানটি বিধ্বস্ত হয়’।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি যখন উঠে দাঁড়াই, তখন দেখি চারপাশে মৃতদেহ। আমি ভয় পেয়েছিলাম। আমি উঠে দাঁড়ালাম এবং দৌড়ে গেলাম। আমার চারপাশে বিমানের ভাঙা অংশ। তখন কেউ একজন আমাকে ধরে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে আসে।’
তবে এর আগে বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া নগর পুলিশের কমিশনার জিএস মালিকের উদ্ধৃতি দিয়ে হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ‘দুর্ঘটনায় কেউ বেঁচে নেই বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিমানটি একটি আবাসিক এলাকায় বিধ্বস্ত হয়েছে। সেখানে কিছু অফিসও রয়েছে। তাই হতাহতের সংখ্যাও বেশি।’
আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনগামী ফ্লাইটটি উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই বিধ্বস্ত হয়। সরদার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এটি যুক্তরাজ্যের গেটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশে উড্ডয়ন করে। উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর দুপুর ১টা থেকে ২টার মধ্যে গুজরাটের মেঘানিনগর আবাসিক এলাকায় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।
এর আগে একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছিল, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১২০ জন নিহত হয়ে থাকতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গণমাধ্যমটি এও জানিয়েছিল যে উদ্ধার কার্যক্রম চলছে। ইতোমধ্যে গুরুতর আহত কয়েকজনকে কাছের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে আরোহীদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ‘ক্ষীণ’।
এতে মোট ২৪২ জন আরোহী ছিলেন। তাদের মধ্যে দুজন পাইলট ও ১০ জন কেবিন ক্রু। যাত্রীদের মধ্যে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ নাগরিক, একজন কানাডীয় নাগরিক এবং সাতজন পর্তুগালের নাগরিক ছিলেন।
এক প্রত্যক্ষদর্শী ভারতীয় গণমাধ্যম পিটিআইকে বলেন, ‘আমি তখন বাড়িতেই ছিলাম। হঠাৎ প্রকট শব্দ শুনেত পাই। এরপর কী ঘটেছে তা দেখার জন্য বাইরে বের হই। যখন এখানে আসি তখন দেখি বিধ্বস্ত উড়োজাহাজটির বিভিন্ন অংশ ও মানুষের মৃতদেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।’
বিধ্বস্ত হওয়া এয়ার ইন্ডিয়া বিমানের যাত্রীদের মধ্যে গুজরাটের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানিও ছিলেন। গুজরাটের বিজেপির প্রধান সি আর পাতিল তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, আহমেদাবাদে বিজে মেডিক্যাল কলেজের হোস্টেলে এয়ার ইন্ডিয়ার উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় ওই হোস্টেলের অন্তত ৫ শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এছাড়াও আহত হয়েছেন আরও বহু শিক্ষার্থী।
এছাড়াও একাধিক স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, বিমানটি হোস্টেলের চতুর্থ ভবনে বিধ্বস্ত হয়। ওই সময় ভবনটিতে ৫০-৬০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক ছিলেন। তারা দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনার পর পুরো ভবন কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়। ভবনটির ভেতর থেকে এ পর্যন্ত ৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
উড়োজাহাজটি মেঘানিনগর এলাকায় বিজে মেডিক্যাল কলেজের হোস্টেলের একটি ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয়।
পিটিআই-এর শেয়ার করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ওই ভবনটির কাছে বহু মানুষ জড়ো হয়েছেন। আর ভবনের ওপর উড়োজাহাজটির একটি অংশ পড়ে রয়েছে।
সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ফোন করেছেন গুজরাটের মুখ্য়মন্ত্রীকে। বিমান দুর্ঘটনার নানা বিষয় নিয়ে খোঁজখবর নেন তিনি।
আর ফ্লাইট ট্র্যাকিং সাইট ফ্লাইটরাডার২৪ এক্স-এ এক পোস্টে জানিয়েছে, আহমেদাবাদ থেকে উড্ডয়নের ঠিক কয়েক সেকেন্ড পরই বিমানের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৩৮ মিনিট ৫১ সেকেন্ডে বিমানটি সর্বশেষ সংকেত পাঠায়, এরপর আর কোনো সংকেত পাওয়া যায়নি।
বিমানটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার মডেলের। রেজিস্ট্রেশন নম্বর ছিল ভিটি-এএনবি। ২০১৪ সালে বিমানটি এয়ার ইন্ডিয়ার বহরে যুক্ত হয়।
ফ্লাইটরাডার২৪ আরও জানায়, তাদের তথ্য মোতাবেক বিমানটি আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পর প্রায় ৬২৫ ফুট উচ্চতায় ওঠে, এরপরই নিচের দিকে নামতে শুরু করে। প্রায় ৬০০ ফুট ওপর থেকে বিমানটি ভেঙে পড়ে।
দুর্ঘটনাস্থল থেকে কয়েক কিলোমিটার দূর থেকেও ধোঁয়ার ঘন কুণ্ডলী দেখা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরাও জানিয়েছেন।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছায় দমকল বাহিনী ও একাধিক অ্যাম্বুলেন্স। দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে এখনো কিছু জানায়নি কর্তৃপক্ষ।
এয়ার ইন্ডিয়া ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এখনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। তবে ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ) এই দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, বিমানে ভয়াবহ বিপর্যয় হয়েছে তেমন কিছু বুঝলে পাইলট সিগন্যাল দেন। এক্ষেত্রেও তেমন ধরনের মে-ডে সিগন্যাল দিয়েছিলেন বলে জানা যায়। তবে সিগন্যাল দিলেও সময় পাননি পাইলট, তার আগেই বিমানটি ভেঙে পড়ে। মাত্র চার মিনিট ওড়ার পরই বিধ্বস্ত হয় বিমানটি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই দুর্ঘটনার ব্যাপারে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন।