কল্যাণ ডেস্ক
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বিড়ালদহ সৈয়দ করম আলী শাহ্ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতের অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। এমনকি ভুক্তভোগী ওই প্রধান শিক্ষক ‘হামলা’ থেকে বাঁচতে টয়লেটে লুকিয়ে ছিলেন। এ সময় জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করলে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।
গত সোমবার সকালে ওই বিদ্যালয়ের এমন ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষক মো. কোরবান আলী জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে পুঠিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
তবে অভিযুক্ত জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আব্দুস সামাদ মোল্লা এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য ডা. মনসুর রহমান টাকার বিনিময়ে গোপনে নিয়মিত কমিটি করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এমনকি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে কোনো তপশিল ছাড়াই কমিটি করে নিয়োগ বাণিজ্য করার লক্ষ্যেই এমন বিধিবহির্ভূতভাবে ওই বিদ্যালয়ে গোপনে কমিটি করে নতুন কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ বাণিজ্যের মতো হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার পাঁয়তারা করছেন।’
এদিকে প্রধান শিক্ষক মো. কোরবান আলী বলেন, ‘করোনার সময় থেকে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে বিদ্যালয়টি চলছে। সোমবার সকালে হঠাৎ করে আওয়ামী লীগ নেতা আবদুস সামাদসহ স্থানীয় ১০-১৫ জন ব্যক্তি বিদ্যালয়ে আসেন। একটি লিখিত কাগজ তার সামনে দিয়ে এতে সই করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। আমি সই দিতে না চাইলে প্রথমে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকে। এক পর্যায়ে তিনি (আবদুস সামাদ মোল্লা) আমার জামার কলার ধরে টানাটানি করে। তিনি রাগান্বিত হয়ে আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করতে এগিয়ে আসলে আমি প্রাণ বাঁচাতে বিদ্যালয়ের টয়লেটে ঢুকে পড়ি। সেখান থেকেই জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল করি। কিছুক্ষণ পরেই পুঠিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে আমাকে উদ্ধার করে।’
তিনি বলেন, ‘যখন পুলিশ বিদ্যালয়ে আসে তখন ওই আওয়ামী লীগ নেতা তার দলবল নিয়ে বিদ্যালয় থেকে চলে যান। এরপর সোমবার বিকেলেই পুঠিয়া থানায় গিয়ে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করেছি। আমাকে যেভাবে প্রাণনাশের ও চাকরি খাওয়ার হুমকি দিয়েছেন তাতে আমি ভয়ে আছি।’
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আবদুস সামাদ মোল্লা বলেন, ‘পুঠিয়া-দুর্গাপুরের যেসব স্কুলে সামনে নিয়োগ প্রক্রিয়া রয়েছে সেগুলোতে অ্যাডহক কমিটি ভেঙে দিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মনসুর রহমান তার নিজের লোকজন দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার পাঁয়তারা করছে। আমার জানামতে, পুঠিয়া ও দুর্গাপুর উপজেলার বেশকিছু স্কুলে নিয়োগ দেওয়ার নাম করে এমপি মনসুর আগে থেকেই টাকা-পয়সা নিয়ে রেখেছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর এক বছরও নেই। কিন্তু তিনি শত শত লোকের কাছ থেকে চাকরি দেওয়ার নাম করে মোটা অংকের টাকা নিয়ে রেখেছেন। চাকরি দিতে না পারলে তিনি পুঠিয়া-দুর্গাপুরে ঢুকতে পারবেন না। এজন্য তিনি বিদ্যালয়ে নিজের পছন্দের লোকদের কমিটিতে এনে তার হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।’
মারধর, গালমন্দ কিংবা হুমকি-ধমকির কথা অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের এই নেতা আরও বলেন, ‘২০১৭ সালের আগস্ট থেকে ওই বিদ্যালয়টি অ্যাডহক কমিটি দিয়ে চলছে। গত বছরের ১০ আগস্ট সর্বশেষ অ্যাডহক কমিটি হয়। যেটির মেয়াদ আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু আমরা খবর পেলাম- এমপি মনসুর ওই স্কুলে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে তার পছন্দের এক লোককে টাকার বিনিময়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি বানাচ্ছেন। কয়েকদিন আগেও ওই প্রধান শিক্ষককে বলেছিলাম, কোনো পকেট কমিটি করতে দেওয়া হবে না। তপশিল ঘোষণার মাধ্যমে উন্মুক্ত নির্বাচন দিয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করতে হবে। প্রধান শিক্ষক আমাদের আশ্বস্ত করেন, তাই করা হবে। পরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে খোঁজ নিয়ে দেখলাম, এমপির পছন্দের লোককে কমিটিতে আনতে গোপনে কমিটি গঠনের সব প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছেন। পরে আমি বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষককে বললাম- গোপনে কোনো কমিটি করা যাবে না। উন্মুক্ত নির্বাচন দিতে হবে। পুনঃতপশিল ঘোষণা করতে হবে। সে জন্য একজন অভিভাবক আবেদনও করেন। আবেদনটি প্রধান শিক্ষককে সই করে নিতে বলা হয়। তাকে মারধর করা হয়নি। হুমকিও দেওয়া হয়নি। তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে টয়লেটে গিয়ে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে ফোন করে পুলিশকে ডাকে। এটি মূলত তার ‘নাটক’ ছিল বলেও মন্তব্য করেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।
তবে এর ঠিক উল্টো কথা বলেছেন রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মনসুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ওই আওয়ামী লীগ নেতার পছন্দমতো কমিটি দিতে হবে। কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেছেন, নিয়ম-নীতি মেনেই কমিটি গঠন করা হবে। এতেই আব্দুস সামাদ ক্ষেপে যান। প্রধান শিক্ষককে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন এমনকি শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতও করে। আমি থানা পুলিশকে বলেছি, এলাকায় যাতে করে শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত না হয়। নিয়মনীতি মেনেই সেখানে কমিটি হবে আমি সেটাও বলেছি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি কারও কাছ থেকে কোনো টাকা-পয়সা নিইনি।’
পুঠিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি, তদন্ত) আব্দুল বারী বলেন, ‘জাতীয় জরুরি সেবার কল পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেখানে গিয়ে পুলিশ কাউকে পায়নি। এ ঘটনায় থানায় একটি জিডি হয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।’