নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরে ইউনিভার্সাল ইন্টারন্যাশনাল বিডি নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে অব্যাহত প্রতারণা করে ব্যবসায়ীদের ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে গা ঢাকা দিয়েছেন বহুলালোচিত প্রতারক সরিফুল ইসলাম। চৌগাছার আন্দুলিয়ায় বাড়ি হলেও এই শরিফুল ইসলাম ঝুট ব্যবসার নামে যশোরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে এমনকি ভারতেও প্রতারণা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এবার তার বিরুদ্ধে ৩ কোটি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছেন ৪ ব্যবসায়ী। আর প্রতিকার চেয়ে তারা যশোরের জেলা প্রশাসকের কাছেও লিখিত আবেদন করেছেন। তার বিরুদ্ধে প্রতারণা হয়রানীসহ নানা অভিযোগ তুলে ব্যবসায়ীরা তার মুখোশ উন্মোচন দাবি করেছেন। একই সাথে পুলিশি হস্তক্ষেপও কামনা করেন।
তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলার প্রস্তুতি চলছে দাবি করে তার আটক চেয়েছেন প্রতারিত ব্যবসায়ীরা।
সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের কাছে দেয়া অভিযোগ, আদালতে মামলা, বিভিন্ন দপ্তরে দেয়া অভিযোগ ও ভুক্তভোগী সূত্র থেকে তথ্য মিলেছে, যশোর পুরাতনকসবা কাজীপাড়ার একটি প্রতিষ্ঠানের আদলে নাম দিয়ে ইউনিভার্সাল ইন্টারন্যাশনাল বিডি খুলে ঝুট বিকিকিনির নামে সরিফুল ইসলাম টাকা হাতানো কর্মকান্ড শুরু করেন। ব্যাংক চেক প্রদাণ করে, কখনও নিজে হাতে বাকি লিখে দিয়ে বাকিতে বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মাল নিয়ে টাকা আটকে দিয়ে আসছেন শরিফুল ইসলাম। যশোরের পুরাতনকসবা কাজীপাড়ার খন্দকার তারিকুজ্জামানের ভাড়াটিয়া সেজে তার প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইউনিভার্সেল ট্রেডের আদলে ইউনিভার্সাল ইন্টারন্যাশনাল বিডি নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে ট্রেড লাইসেন্স নেন। আর ওই ঠিকানায় অনেক পাওনাদার গিয়ে ধর্না দিচ্ছেন। কিন্তু তিনি আগেও ওখান থেকে সটকে পড়েছেন। যশোরাঞ্চল, পাবনা, ঢাকা ও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রতারক সরিফুল ইসলাম ৩ কোটি টাকা হাতিয়েছেন বলে মামলা ও অভিযোগে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: মৎস্য অফিসের তৎপরতায় চায়না দুয়ারী জাল নষ্ট
এরমধ্যে গত ৪ আগস্ট যশোর ও পাবনার ৪ ব্যবসায়ী একযোগে যশোরের জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেন। অভিযোগকারীরা হচ্ছেন যশোরের নওয়াপাড়া রোডের ফারুক হোসেন লিটু, কিসমত নওয়াপাড়ার আনোয়ার হোসেন, উপশহর ৭ নাম্বার সেক্টরের এলাকার এহসানুল হাকিম বাবু ও পাবনার রাঙাবাড়িয়া বুদের হাটের আরপি হুঁশিয়ারির মালিক পলাশ মাহমুদ। এর মধ্যে পাবনার পলাশের কাছ থেকে ৭৩ লাখ ৩৬ হাজার, যশোরের কিসমত নওয়াপাড়া এলাকার আনোয়ার হোসেনের কাছ থেকে ১৫ লাখ, যশোর ঘোপ এলাকার ফারুক হোসেন লিটুর কাছ থেকে ১০ লাখ ও এহসানুল হাকিম বাবুর কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে প্রতারণা করে চলেছেন সরিফুল ইসলাম।
এদিকে, জেলা প্রশাসকের দেয়া অভিযোগগুলোতে বলা হয়েছে, ইউনিভার্সাল ইন্টারন্যাশনাল বিডি খুলে ঝুট ব্যবসার নামে সেরেফ প্রতারণা করে বেড়াচ্ছে খোড়া সরিফুল। তার (জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর: ৪১১১১৯৪১০৫৭২৯) (পাসপোর্ট নম্বর: ০৬৮৪৫৮১৫), বাবা ওসমান গণি তোতা। বারবার স্থান পরিবতন করে প্রতারণার স্বার্থে। পূর্বের বাড়ীর ঠিকানা পুরাতন কসবা কাজীপাড়া কাঁটালতলা, (বাড়ি নং-৯৮৫, ফকির মোহাম্মদের বাড়ি) ও পুরাতন কসবা গাজীর ঘাট রোড পালবাড়ি, (কাজী আব্দুল জালালের বাড়ি) বর্তমানে আনিস ম্যানসন দ্বিতীয় তলা মাহমুদুর রহমান স্কুলের সামনের ঘোপ নওয়াপাড়া রোড। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সাল ইন্টার ন্যাশনাল বিডির এখনকার ঠিকানা রঘুরামপুর (আকবার মিয়ার পল্ট্রি স্পর্ম)।
জুট কাপড় নগদে ও বাকিতে ক্রয় লেনদেনের সুবাদে সরিফুল ইসলাম ওরফে খোড়া সরিফুল ওই ৪ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। বিগত সময়ে আওয়ামী সন্ত্রাসী দিয়ে পাওনাদারদের হত্যা করে লাশ গুম করিয়া দেবার হুমকি প্রদান করে। ওই সময় অনেকে প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আসে তার ডেরা থেকে। এখন সরকার পট পরিবর্তন হলে আত্মগোপনে থেকে ভাড়াটে মাস্তান দিয়ে পাওনাদারদের টাকার কথা ভুলে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। এমনকি বিগত সময়ে যশোরের পুরাতন কসবা কাজীপাড়া আওয়ামী প্রলয় ধরে চললেও এখন আত্মসাত করা টাকা ছড়িয়ে ভোলপাল্টে বিএনপি সাজার চেষ্টাও করছেন এবং ব্যবসায়ীদের টাকা করত দিতে অস্বীকার করছেন। এমনকি একটি মিথ্যা মামলা দিয়েছেন এমনকি আরো মিথ্যা মামলা করার হুমকি দিচ্ছেন। দৈনিক গ্রামের কাগজ দপ্তরে এসে কমপক্ষে ১০ জন ব্যবসাযী প্রতারক সরিফুলের স্বরুপ উন্মোচন, আটক ও কঠোর শান্তি দাবি জানিয়েছেন।
আনোয়ার হোসেন, ফারুক হোসেন লিটুসহ অনেকেই জানিয়েছেন, আপাদমস্ত প্রতারক ওই সরিফুল। মোবাইল বন্ধ করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ওই সরিফুল। তার পরিবার যশোরে অবস্থান করছে, আর সে চোরের মত আসছে। পাবলিক ফুঁসে উঠেছে। পাওনা টাকার জন্য তাকে পেলে গণধোলাই দিতে পারে তাকে। কাজেই এই পরিবেশ সৃষ্টি আাগেই তারা তাদের পওনা টাকা ফেরত চেয়েছেন। এমনটি জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত সাপেক্ষে ন্যায় দাবি করেছেন।
এদিকে, যশোরের পুরাতনকসবা বাসিন্দা ও ফারিয়া ইন্টার ন্যাশনালের সৈয়দ মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন, এই শরিফুল ইসলাম একজন মোস্টওয়ান্টেড প্রতারক। দুপা খোড়া পঙ্গু হয়ে সিমপ্যাথি নিয়ে প্রতারণা শুরু করে। তার সাথে প্রায় ২৬ লাখ টাকা প্রতারণা করেছে ওই শরিফুল। ভয়ন প্রতার ভালভাল লোককে ট্রাপে ফেলে টাকা হাতিয়ে নেয়। ব্যবসার প্রলোভণ দেখিয়ে এই টাকা হাতিয়ে নেয়। ঝুট ব্যবসার টোপ দিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে প্রতারণার জাল বিস্তৃত করে। তিনি সহ যশোরাঞ্চলে অনেকের কাছ থেকে এবং দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ২০ কোটি টাকার উপরে সে আত্মসাৎ করেছে। একাধিক ব্যক্তি ও ভুক্তভোগী তার প্রতারণার শিকার। রোটারিয়ান ফারিয়া ইন্টারন্যাশনালের ফারুক হোসেনের সাথেও সে প্রতারণা করেছে।
এদিকে, এ সংক্রান্ত একটি ঘটনার ব্যাপারে যশোরের চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মমিনুল হকের সাথে কথা বললে তিনি জানিয়েছেন, প্রতারণা ও হুমকির বিষয়ে গত ১১ ফেব্রুয়ারি বসাবসির একটি দিন ছিল। কিন্তু শরিফুল ইসলাম হাজির হয়নি। সেই থেকে আর তার দেখা মিলছেনা। তারা নানা অভিযোগ তুলে ধরেছেন।
এদিকে অভিযুক্ত সরিফুল ইসলামের বক্তব্য নেয়ার জন্য তার মোবাইলে কয়েক দফা ফোন দিলেও তা বন্ধ পাওয় যায়।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলি হামলায় গাজায় প্রায় ১৯ হাজার শিশুর মৃত্যু