জেমস রহিম রানা ও মনিরুজ্জামান মনির: শান্তিপূর্ণ পরিবেশে জমে উঠেছে যশোরের সদর উপজেলার ইউপি নির্বাচন। নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন প্রার্থী দিনরাত চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের প্রচার প্রচারণা। নির্বাচন যদি সুষ্ঠ হয় তবে সব প্রার্থীই বিজয়ী হবেন এমন আশাবাদ ব্যক্ত করছেন।
এদিকে, প্রার্থী এবং ভোটাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচন যদি শান্তিপূর্ণ হয় তবে এই ইউনিয়নে লড়াই হবে ত্রিমুখী। নরেন্দ্রপুরে আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন মোদাচ্ছের আলী। এখানে যুবলীগ নেতা ও বর্তমান মেম্বর জাকির হোসেন (মোটরসাইকেল) এবং রাজু আহমেদ (আনারস) স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। এছাড়া স্বতন্ত্রপ্রার্থী রয়েছেন হোসেন মোহাম্মদ ফেরদাউস আলম (ঘোড়া) ও ইসলামী আন্দেলন বাংলাদেশের ওলিয়ার রহমান (হাতপাখা)।
এই ইউনিয়নের নৌকার মাঝি বর্তমান চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের আলী সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে পুণরায় নির্বাচনে নেমেছেন বলে দাবি করেন। তিনি বলেন,আমি দীর্ঘদিন এই ইউনিয়নে মেম্বর হিসেবে মানুষকে সেবা দেয়ার পর জনগণ ভালবেসেই আমাকে চেয়ারম্যানের আসনে বসিয়েছিল। আমি আমার সাধ্যমতো গত ৫ বছর তাদের সেবা দিয়ে আসলেও অনেকের আশা আকাক্সক্ষা পূরণ করতে পারিনি। আমি চাই এইবার পুনঃনির্বাচিত হতে পারলে ইউনিয়নের কেউ যেন সরকারের উন্নয়নের অংশ থেকে বাদ না পড়ে। আমি বিশ্বাস করি প্রশাসন যদি নিরপেক্ষ থাকে এবং ভোটাররা মাঠে উঠতে পারে তাহলে নৌকার বিজয় সু নিশ্চিত। তিনি বলেন, গতবুধবার গভীর রাতে ইউনিয়নের বলরামপুর নসিমন স্ট্যান্ডে নৌকা মার্কার অফিস পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, অনেক স্থানে পোস্টার ছেড়া হচ্ছে বলে খবর পেয়েছি কিন্তু কোন অভিযোগ করা হয়নি। আমার কোন কর্মী যদি কোথাও বিশৃংখলা করে এবং সুনির্দিষ্ট প্রমাণ মেলে তবে আমি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী যুবলীগের সদ্য বহিস্কৃত নেতা জাকির হোসেন বলেন, আমি বর্তমানে এই ইউপির সফল মেম্বর। জনগণ আমার সেবায় মুগ্ধ হয়ে আমাকে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছে। আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে অন্যান্য প্রার্থীর কর্মীদের কেউ কেউ আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে নিজেদের পাল্লা ভারি করতে চাচ্ছে। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে ইনশাআল্লাহ আমি অনেক ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হব।
তিনি আশংকা প্রকাশ করে বলেন, এই ইউনিয়নে এখন পর্যন্ত কোনো সহিংসতা না হলেও নির্বাচনের আগ মুহূর্তে সহিংসতার কথা শুনতে পাচ্ছি। একজন প্রার্থীর পক্ষে ইউনিয়নে বহিরাগত লোকজনের আনাগোনা বৃদ্ধি এবং তাদের কোন কোন কর্মী সমর্থক ভোটারদেরকে কেন্দ্রে গিয়ে তাদের সামনেই ব্যালটে ছিল মারতে হবে বলে শাসাচ্ছেন। যা কারোরই কাম্য নয়।
একইভাবে সদ্য বহিষ্কৃত মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড সদর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক স্বতন্ত্র প্রার্থী আনারস প্রতীকের রাজু আহমেদ বলেন, নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় এখনো পর্যন্ত কোন প্রকার বাধাগ্রস্থ হয়নি। তবে কোন কোন জায়গায় বিভিন্ন রকম কথা শোনা যাচ্ছে। আমার নেতাকর্মীদের বলছে তোমাদের নৌকার প্রচার প্রচারণা করতে হবে। ইতোমধ্যে আমার প্রায় ৩০ হাজার পোস্টার ছিড়ে ফেলে দিয়েছে প্রতিপক্ষের কর্মীরা। তারপরও আমি সহিংসতায় জড়াতে চাইনা বলেই কোন নির্বাচনী অফিস পর্যন্ত করিনি। আমি চাই সুষ্ঠ নির্বাচন। জনগণ যে রায় দেবে আমি তাই মেনে নেব। কিন্তু কেউ যদি অবৈধভাবে কোন উপায়ে ক্ষমতায় যেতে চায় তবে ইউনিয়নের সর্বস্তরের মানুষকে সাথে নিয়ে অবশ্য তা প্রতিহত করবো। তিনি বলেন, আমি প্রতীকের বিরুদ্ধে নই। আমি চাই ভোটাররা কেন্দ্রে এসে তাদের প্রছন্দের প্রার্থীকে বেছে নেয়ার সুযোগ পাক। কিন্তু অন্যান্য প্রার্থীদের কিছু কিছু কর্মীরা অপপ্রচার করে যাচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। এছাড়া এই ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রাথী হোসেন মো. ফেরদৌস আলম (ঘোড়া) ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ওলিয়ার রহমান (হাতপাখা)।
এদিকে ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন প্রার্থী রয়েছেন। নির্বাচন যদি শান্তিপূর্ণ হয় তবে এই ইউনিয়নে লড়াই হবে ত্রিমুখী। খুব অল্প ভোটের ব্যবধানেই জয় পরাজয় হবে। ভোটাররা দীর্ঘদিন পর ভোটের মাঠে যাওয়ার যে সুযোগ পাচ্ছে তা যদি অব্যাহত থাকে তবে ভোটের দিন মাঠে ঈদের আমেজ বিরাজ করবে।
যশোর সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের ভোট গ্রহণ করা হবে আগামী ৫ জানুয়ারি । এর মধ্যে নরেন্দ্রপুর একটি। এই ইউনিয়নে ২৬ হাজার ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
উপজেলার হৈবতপুর ইউনিয়নে বুধবার সংঘটিত ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার পর গতকাল বৃহসপতিবার থেকে শান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। গতকাল বিকেলে সাতমাইল বাজারে নৌকা ও মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থীদের প্রকাশ্যে ভোট চাইতে দেখা গেছে। এসময় দীর্ঘদিন ঘরবন্ধী থাকা স্বতন্ত্র প্রার্থী হরেন কুমার বিশ্বাসের প্রচার মাইক ও লিফলেট বিতরণ করতে দেখা যায়। তবে, তীরেরহাটে গণসংযোগ করতে গেলে মোটরসাইকেলের কর্মী সমর্থকরা বাধার শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যেও পুলিশ এই ইউনিয়নের সার্বিক আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রনে রাখতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।