নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ভয় ও শিহরণ অনুভূতির স্থান সুন্দরবন। জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ। বিশ্বের অন্যতম বড় ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনে আসা পর্যটকদের মন কাড়ে সবুজের সমরোহ। সেই সঙ্গে নীল আকাশের কোলে সাদা মেঘের ভেলা ও দখিনা বাতাসে দেহ মন শীতল করা পরিবেশ। প্রকৃতির এই অরূপ- সুন্দরবনের যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই যেনো সুন্দরের হাতছানি। তাইতো বরাবরের মতো ঈদের ছুটিতে এবারও পর্যটকরা পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটে এসেছেন জীববৈচিত্র্যের এই বনে।
ঈদের দিন সকালে তেমন লোকজন না আসলেও মূলত পরদিন রবিবার (২৩ এপ্রিল) থেকেই সুন্দরবনের বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ঢল নামতে শুরু করে পর্যটকদের। এদিন বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের সচিবসহ একাধিক ভিআইপি ব্যক্তিরাও এসেছেন সুন্দরবনের করমজল পর্যটন কেন্দ্রে। ঘুরে দেখেছেন অপরূপ সৌন্দর্য।
এই তথ্য জানিয়ে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, এদিন দুপুর ২টা পর্যন্ত প্রায় ৬০০-এর মতো পর্যটক এসেছেন করমজলে। তারা এখানে হরিণ, বানর, কুমিরসহ নানা প্রজাতির প্রাণীসহ বনের বিভিন্ন স্থানে অবলোকন করেছেন। মুগ্ধ হয়েছেন বনের জীববৈচিত্র্য দেখে। সোমবার আরও বেশি পর্যটক আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে অন্যান্য দিনের চেয়ে ঈদের ছুটিতে রাজস্ব আয় বেশি হবে।’
এ ছাড়া পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে করমজলে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা ও অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। উন্নত দেশগুলোর মতো আকর্ষণীয় করে সুন্দরবনের স্পটগুলোকে সাজানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ট্যুর অপারেটর ব্যবসায়ী মো. নান্টু বলেন, তাদের বুকিং দেওয়া পর্যটকরা সুন্দরবন দেখতে আসবেন কাল। এজন্য তারা প্রস্তত রয়েছেন।
এখন সুন্দরবনে ভ্রমণ মৌসুম নয়। তারপরও ঈদের ছুটি কাটাতে দূর-দূরান্ত থেকে সুন্দরবনে ছুটে এসেছেন দর্শনার্থীরা। ঈদের ছুটিকে স্মরণীয় রাখতে কেউ এসেছেন বন্ধুবান্ধব আর কেউ পরিবার নিয়ে।
সিরাজগঞ্জ থেকে বন্ধুদের নিয়ে সুন্দরবনে প্রথমবার এসেছেন বেসরকারি একটি বিদ্যালয়ের ছাত্র ইয়াসির আরাফাত। অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এত সুন্দর বন, তা বাদ দিয়ে কেন আমরা বিদেশ যাই, এখানে এলেই যেকোনো মানুষের মন ভাল হবে। আমরা আবার সুযোগ পেলে আবার আসবো।’
পাবনা থেকে এসেছেন জাহিদুর রহমান। পেশায় সরকারি চাকরীজীবী। দুই মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে ঈদের ছুটিতে সুন্দরবনে এসেছেন। গত ঈদেও তারা সুন্দরবনে এসেছেন। সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্য তাদের মন কেড়েছে তাই আবার ছুটে আসা বলে জানান তিনি।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, যেকোনো পর্যটকের আকর্ষণীয় স্থান সুন্দরবন। বিশেষ ছুটিতে তারা এখানে ছুটে আসেন।
তিনি বলেন, ‘বনের কচিখালীতে আছে সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্যের হাতছানি। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য কচিখালী হচ্ছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান। এরপর কটকা ও হিরোনপয়েন্ট। এ তিনটি পয়েন্টে মোংলা থেকে ট্রলারে করে পৌঁছাতে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা সময় লাগে। বনের কটকাতে রয়েছে হরিণের অভয়ারণ্য। আছে ওয়াচ টাওয়ার। এ টাওয়ারে উঠে একনজরে দেখা যাবে যায় অপূর্ব সুন্দরে সুন্দর সুন্দরবন। আর করমজলে আসা পর্যটকদের মন কাড়ছে সেখানকার সৌন্দর্য। তবে মৌসুম না হলেও ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবের ছুটিতে এ বনে হঠাৎ আনাগোনা বেড়ে যায় পর্যটকদের।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) মোংলার আহ্বায়ক মো. নুর আলম শেখ বলেন, ‘প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর নৈসর্গিক লীলাভূমি অফুরন্ত সম্পদের চারণভূমি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের তালিকায় নিঃসন্দেহে সেরা। এজন্য দেশ-বিদেশের ভ্রমণপিপাসু মানুষ একটু সুযোগ পেলেই ছুটে আসেন এখানে। যারা সুন্দরবনে প্রথম এসেছেন সৌন্দর্যের প্রেমে পড়েন তারা বার বারই ছুটে আসেন।’
মোংলা ট্যুরিস্ট পুলিশ সুন্দরবন জোনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদের দিন পর্যটকরা না আসলেও পরদিন রবিবার সকাল থেকেই পর্যটকদের ঢল নামে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা মোংলার পিকনিক কর্ণার থেকে ছোট নৌযানে করে সুন্দরবনে ভ্রমণে রওনা হন। তাদের নিরাপত্তাসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আমরা সর্বদা তৎপর রয়েছি।’