সাজেদ রহমান: এখলাস উদ্দীন ডায়েরিতে আরও লেখেন, ‘তারা আমাদের কাছে আবেদন জানালো খাদ্য সরবরাহের জন্য। ক্যান্টনমেন্টে যুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারলাম যে, চৌগাছা স্কীমে অবস্থানরত বাঙালি সেনাদের ২৯ শে মার্চ সকাল বেলা তাদের নিরস্ত্র করবার উদ্দেশ্যে পাঞ্জাবি অফিসার ক্যাপ্টেন জলিলের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাবি ছিনিয়ে নেয়।’
এই ঘটনায় বাঙালি সেনারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং অস্ত্রাগার ভেঙে কিছু অস্ত্র শস্ত্র গোলাবারুদ নিয়ে বের হয়ে আসে। হানাদার সেনারা বাঙালি সেনাদের উপর কামানের গোলা নিক্ষেপ করতে থাকে। বাঙালি সেনারাও তাদের হাতের অস্ত্রের দ্বারা জবাব দিতে থাকে। শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। সে যুদ্ধে উভয় পক্ষে বহু সৈন্য নিহত হয়। আমি দ্রুত ইপিআর হেড কোয়ার্টার থেকে বের হয়ে মশিয়ুর রহমানের বাড়িতে এলাম এবং তার বড় ছেলে বাবুলকে সঙ্গে নিলাম। ভাবী মোমেন গার্লস স্কুলের গাড়িটা দিলেন। বাবুল দ্রুত গাড়িটি বের করে আমাকে নিয়ে কোতোয়ালি থানায় এলো। থানায় পূর্বে জমাকৃত অস্ত্রশস্ত্র জনগণের মধ্যে বিলিয়ে দিলাম, আমরাও কিছু অস্ত্র সংগে নিলাম।
গাড়ি নিয়ে আমরা সমস্ত শহর প্রদক্ষিণ করলাম এবং সমগ্র শহরে ক্যান্টনমেন্টের যুদ্ধের খবর দাবানলের মতো ছড়িয়ে দিলাম। স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে যুদ্ধে যোগদান করতে আহ্বান জানালাম। ইপিআর বাহিনীকে খাদ্য সরবরাহের জন্য আমি জনগণের নিকট আবেদন জানালাম। দুপুর বারোটার মধ্যে হানাদার বাহিনী শহর ছেড়ে ক্যান্টনমেন্টে পালিয়ে গেল। ইপিআর বাহিনীর ক্যাপ্টেন, মেজরসহ পাহারারত সেনাদের অনেকেই বাঙালি বাহিনীর হাতে নিহত হলো। ইপিআর বাহিনী, পুলিশ বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী মিলিতভাবে চাঁচড়া ও খয়েরতলার দিকে অগ্রসর হয়ে পূর্ব হতে যুদ্ধরত বাঙালি সেনাদের সংগে যোগদান করলো। এইভাবে তুমুল যুদ্ধ শুরু হলো।
৩০ মার্চ থেকে ৪ঠা এপ্রিল বেলা ১০ ঘটিকা পর্যন্ত যশোর শহর আমাদের আয়ত্বে ছিল। এই কয়েকদিনের যুদ্ধে নড়াইল থেকে আমরা বহু মুক্তিসেনা অস্ত্রশস্ত্র গোলাবারুদ ও পেট্রোলের সাহায্য পেয়েছিলাম, ভারত থেকেও যশোর সড়ক দিয়ে সরাসরি আমাদের নিকট সাহায্য পৌঁছেছিল।