সাজেদ রহমান: ১৯৭১ সালের ১ মার্চ জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত করার কথা রেডিও থেকে শোনার পর পরই যশোর শহরের রাজপথে হাজার হাজার জনতা নেমে আসেন। শুরু হয় ইতিহাসের নতুন অধ্যায়।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে স্বতঃস্ফুর্তভাবে শহর ছাড়াও সর্বত্র সংগ্রাম কমিটি গঠিত হতে থাকে। ‘যশোরে ছাত্র ইউনিয়নের মেনন গ্রুপ এবং ভাসানী ন্যাপের মজবুত সাংগঠনিক ভিত্তি থাকলেও প্রকৃতপক্ষে তাঁদের অনেকের ধারণা ছিল যে, শেষ পর্যন্ত ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। কিন্তু ১ মার্চের পর তাঁদের অনেকে বুঝতে পারেন হামলা আসন্ন। ফলে তাঁরাও স্বাধীনতার দাবির পক্ষে এসে দাঁড়ান। ন্যাপ মোজাফফর-এর কর্মীরাও শামিল হন এতে। এর দরুন মার্চের অসহযোগ আন্দোলন খুব দ্রুত গণসংগ্রামের চরিত্র পায়। তবুও একটি মৌলিক প্রশ্নে দেশের অন্যান্য এলাকার মতো যশোরের স্বাধীনতাকামীদের মধ্যেও বিভেদ ছিল। তা হলো, ছয় দফা, না এক দফার (স্বাধীনতার) জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর ছাত্রলীগের একাংশ এবং আওয়ামী লীগের মধ্যেও ৬ দফার প্রবল সমর্থন ছিল। ৭ মার্চের ভাষণের পর ৬ দফা পন্থীরা প্রভাব হারালেও তাঁদের অস্তিত্ব ছিল ২৫ মার্চ পর্যন্ত।
অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন, অ্যাডভোকেট মশিয়ুর রহমান, অ্যাডভোকেট রওশন আলী, অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম প্রমুখ যারা জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং যশোর শহরে বসবাস করতেন, তাদের উপরই প্রকৃতপক্ষে নেতৃত্ব বর্তায়। অসহযোগকালে তাঁরাই ছিলেন সমস্ত কর্মকান্ডের সম্মুখভাগে। যশোর শহর থেকে সামান্য দূরে পশ্চিমপ্রান্তে সেনানিবাস। অসহযোগকালে সেনানিবাসে সব ধরণের পণ্য সরবরাহ যশোরবাসী বন্ধ করে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয় পাকহানাদার বাহিনী।