নিজস্ব প্রতিবেদক
ত্রাণের চাল আত্মসাতের অভিযোগে যশোরের মণিরামপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চুর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কক্ষে অতিরিক্ত খুলনা বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম তদন্ত করেন। প্রায় তিন ঘণ্টা তদন্ত চলার সময় অভিযুক্ত উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চুসহ ১৩ জনের বক্তব্য শোনা হয়।
জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত খুলনা বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম বলেন, করোনা ভাইরাসের শুরুর দিকে ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম কুমার চক্রবর্তী বাচ্চুর বিরুদ্ধে ত্রাণের চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠে। এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করা হলে যশোর জেলা প্রশাসনকে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়। জেলা প্রশাসন তদন্ত করেছিল। সেখানে অস্পষ্টতা রয়েছে। এজন্য কিছু কয়ারিজ (যাচাই) দিয়ে খুলনা বিভাগীয় কমিশনারকে তদন্তের জন্য চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়। সেই আলোকে তদন্ত করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, অভিযুক্ত ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম কুমার চক্রবর্তীসহ ১৩ জনকে লিখিত ও মৌখিক বক্তব্য নেয়া হয়েছে। তদন্ত পর্যালোচনা ও রিপোর্ট শেষে দোষী হলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা ও চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। আর উপজেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৪ এপ্রিল খুলনার মহেশ্বরপাশা থেকে যশোরের মণিরামপুরের উদ্দেশে পাঁচ ট্রাক সরকারি ত্রাণের চাল আসে। যার মধ্যে এক ট্রাক চাল গোডাউনে লোড না দিয়েই স্থানীয় ভাই ভাই রাইস মিলে পাঠানো হয়। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে ৫৪৯ বস্তা চাল উদ্ধার এবং মিল মালিক ও ট্রাক ড্রাইভারকে আটক করে।
এই চালের কোন বৈধ কোন কাগজপত্র দেখাতে না পারায় থানার এসআই তপন কুমার সিংহ কালোবাজারির মাধ্যমে চাল মজুতের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মণিরামপুর থানায় মামলা করেন। ওই ঘটনায় আটক দুইজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
ওই জবানবন্দিতে তারা মণিরামপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চুসহ কয়েকজনের নাম প্রকাশ করে। তদন্ত শেষে ওই ছয়জনকে অভিযুক্ত করে যশোর আদালতে এই চার্জশিট দাখিল করে জেলা ডিবি পুলিশ। তদন্তে উল্লেখ করা হয়, ৫৪৯ বস্তা ত্রাণের চাল ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম কুমার চক্রবর্তী বাচ্চু বেশি মুনাফার লোভে কালোবাজারে বিক্রি করে দেন।
যার মূল্য ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। প্রথমে উত্তম কুমার ৪ লাখ টাকা নিয়েছেন পরে আরো ৮০ হাজার টাকা নিয়েছেন। সর্বশেষ ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি যশোর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
বর্তমানে এই মামলায় বাচ্চু জামিনে রয়েছেন। মামলায় অভিযুক্ত অন্যরা হলেন, মণিরামপুরের বিজয়রামপুরের মৃত লুৎফর রহমানের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন, তাহেরপুর গ্রামের মৃত সোলায়মান মোড়লের ছেলে শহিদুল ইসলাম, জুড়ানপুর গ্রামের রবিন দাসের ছেলে জগদিশ দাস, একুব্বার মোড়লের ছেলে আব্দুল কুদ্দুস ও খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা সাহেবপাড়ার রতন হাওলাদারের ছেলে ড্রাইভার ফরিদ হাওলাদার।