পানিসারা-হাড়িয়া মোড়ে ফুল উৎসবের উদ্বোধন
এম আর মাসুদ, ঝিকরগাছা
ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের ঝিকরগাছার গদখালী-পানিসারা-হাড়িয়া তিন দিনের ফুল উৎসব ঘিরে নতুন রূপ নিয়েছে। ফুল ক্ষেতগুলোকে দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে। পানিসারা-হাড়িয়া মোড়ে অবস্থিত রেস্টুরেন্টগুলোকেও ফুল ক্ষেতের আদলে রূপ দেয়া হয়েছে। দর্শনার্থীদের যাতায়াতের জন্য যাত্রীবাহী ভ্যান ও অটো রিকশাগুলোও ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান তিনদিনের ফুল উৎসব উদ্বোধন করেন। ফুলের বাণিজ্যিক সম্প্রসারণের লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে ফুল রাজ্যকে সবার সামনে তুলে ধরতে এ উৎসবে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি।
উৎসব উদ্বোধনকালে তমিজুল ইসলাম খান বলেন, ফুল চাষের কারণে ঝিকরগাছার গদখালী আজ সারাদেশে সুপরিচিত। ফুল চাষ একদিকে এলাকাকে যেমন সমৃদ্ধ করেছে, অপরদিকে সম্ভাবনাও দেখিয়েছে। তাই ফুলচাষ বিকাশে ফুলের বিপণন, উন্নত চাষাবাদ, এলাকার যোগাযোগব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও চাষীদের আর্থিক সহযোগিতাসহ সব বিষয় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে ফুল চাষকে আরও অনেক দূরে নিতে হবে উল্লেখ করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, যশোর স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক হুসাইন শওকত, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মনজুরুল হক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) মনোয়ার হোসেন ও উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম।
বক্তব্য রাখেন, থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুমন ভক্ত, গদখালী ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান আলী মোড়ল, যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আব্দুর রহিম, কৃষাণী সাজেদা বেগম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ফুল চাষে বিশেষ অবদানের জন্য ৯ জন কৃষককে সম্মাননা প্রদান করা হয়। পরে অতিথিবৃন্দ ফুলের বিভিন্ন স্টল ও ক্ষেত ঘুরে দেখেন। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
ফুলের বাণিজ্যিক সম্প্রসারণের লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে এ উৎসবে ফুলের রাজ্যকে সবার সামনে তুলে ধরতে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। আজ শুক্রবার দ্বিতীয় দিনে রয়েছে, নারী ফুলচাষীদের সাথে সরকারের উন্নয়ন দর্শন সম্পর্কে উঠান বৈঠক ও শিশুদের ফুল বিষয়ক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। তৃতীয় দিনে উঠান বৈঠকসহ নারী নেতৃত্বে গ্রুপ ভিত্তিক প্রশিক্ষণ কর্মশালা, কৃষক সম্মাননা ও সমাপনী অনুষ্ঠান। এর পাশাপাশি উৎসব প্রাঙ্গণে বৃহত্তর কুষ্টিয়া-যশোর অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের কৃষি প্রযুক্তি প্রদর্শনী করা হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পানিসারা-হাড়িয়া ফুল মোড়ের ফুল ক্ষেতগুলোকে দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে। এ মোড়ে অবস্থিত রেস্টুরেন্টগুলোকেও ফুল ক্ষেতের আদলে রূপ দেয়া হয়েছে।
ফুল চাষী ইসমাইল হোসেন বলেন, ফুল উৎসবকে কেন্দ্র করে আমাদের ফুল ক্ষেতগুলোকে নতুনভাবে সাজানো হয়েছে। যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতি লিমিটেডের আব্দুর রহিম বলেন, ফুল উৎসবে এলাকার ফুলচাষীদের মধ্যে উৎসব শুরু হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুল হক বলেন, ফুলের বাণিজ্যিক সম্প্রসারণ অর্থাৎ বিশ্ববাজার ও দেশীয় বাজারে ঝিকরগাছার উৎপাদিত ফুলকে আরও পরিচিত করতে আমাদের এই আয়োজন। আমরা আশা করি এই উৎসবের মাধ্যমে ঝিকরগাছা উপজেলার ফুলের রাজ্য হিসেবে সুখ্যাতি আরো আড়ম্বরপূর্ণ হয়ে উঠবে।
ফুল উৎসবকে কেন্দ্র করে মেতেছেন এলাকার ফুল চাষিরা। এতে উৎসবে ফুল উৎপাদক, ফুল ব্যবসায়ী, ফুল সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো অংশ গ্রহণ করছে। ২০টি নার্সারি, ৩টি পর্যটন প্যাভিলিয়ন ও ১০টি স্টল সেজেছে উৎসবের সাজে। মেলা প্রান্তে দর্শনার্থীদের যাতায়াতের জন্য যাত্রীবাহী ভ্যান ও অটো রিকশাগুলোও ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ঝিকরগাছার গদখালী অঞ্চলে ১২০০ হেক্টর জমিতে ১১ প্রকারের ফুল বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়। এ এলাকার ৬ হাজার পরিবারের দেড় লাখ মানুষ ফুল চাষের সঙ্গে জড়িত। এ অঞ্চলে প্রতি বছর সাড়ে তিনশ কোটি টাকার ফুল উৎপাদন হয়।
১ Comment
Pingback: ২০৪০ সালে ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি হবে বাংলাদেশ - দৈনিক কল্যাণ