নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রায় দেড় বছর ধরে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের অত্যাধুনিক এক্স-রে মেশিন ও কালার আল্ট্রাসনো মেশিন অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ২০২০ সালের মাঝামাঝিতে মেশিনটি অকেজো হয়ে যায়। সেই থেকে এখন অবধি এ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ফলে পুরনো দুটি সাদাকালো মেশিন দিয়ে রোগীদের এক্স-রে ও আল্ট্রাসনো করাতে হচ্ছে। কিন্তু এক্স-রে রিপোর্ট চিকিৎসকদের কাছে মানসম্মত মনে হচ্ছে না। ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে আবারও তাদের এক্স-রে করতে হচ্ছে। এতে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, হাসপাতালের পক্ষ থেকে এক্স-রে মেশিন ও কালার আল্ট্রাসনো মেশিন মেরামত করার জন্য একাধিকবার চিঠি দেওয়া হলেও কোনো কাজ হয়নি। দ্রুত সময়ের মধ্যে মেশিন সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী রোগী ও স্বজনরা।
জানা গেছে, ২০০৯ সালে সরকারি এই হাসপাতালে রোগীদের সুবিধার্থে বরাদ্দ মেলে সিমেন্স কোম্পানির অত্যাধুনিক এক্স-রে মেশিনটি। রোগীর শরীরে কোনো স্থানে আঘাত কিংবা কোথায় হাঁড়ভাঙা তা এক্স-রে করার সময় এই মেশিনে সরাসরি ছবি দেখা যায়। এজন্য এটিকে ‘ফ্লোস কপি’ এক্স-রে মেশিন বলা হয়ে থাকে। এই মেশিনে রোগীর আঘাত শনাক্ত করার সময় কোনো ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনের প্রয়োজন হয় না। চিকিৎসক এক্স-রে করার সময় খুব সহজে আঘাত শনাক্ত করতে পারেন। বরাদ্দের দুই বছর টানা কার্যক্রম চলে। ২০১১ সালের মাঝামাঝিতে মেশিন অকেজো হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে মেশিন ফের সচল হয়।
কয়েক মাস কার্যক্রম চলার পর ২০২০ সালের মাঝামাঝিতে মেশিনটি আবারও অকেজো হয়ে যায়। সেই থেকে এখন অবধি অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। অন্যদিকে ২০১৭ সালের ৭ নভেম্বরে তুরস্ক সরকার পরিচালিত তুর্কি ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন এজেন্সি (টিকা) এ হাসপাতালে ১৯ ধরনের আধুনিক যন্ত্রপাতি অনুদান হিসেবে দেয়। যন্ত্রপাতির মধ্যে ছিলো একটি থ্রিডি কালার আল্ট্রাসনো মেশিন। পরে ২০১৮ সালের কালার আল্ট্রাসনো মেশিনের কার্যক্রম শুরু করা হয়। কিন্তু কয়েক মাস পরেই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পরে চালু করে কালার পেপার বরাদ্দ না থাকায় সাদাকালো আল্ট্রাসনো করা হচ্ছিলো। কিন্তু ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে কালার আল্ট্রাসনো মেশিনটি অকোজো হয়ে যায়। সরকার থেকে বরাদ্দ সিমেন্স কোম্পানির ৭৫০ এম এ মেশিনটির দাম কোটি টাকার উপরে। আর কালার আল্ট্রাসনো মেশিনটি হলো অনুদানের।
মঙ্গলবার দুুপুরে সরেজমিনে রেডিওলজি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ব্যবহার না করায় এক্স-রে মেশিনটি আর কালার আল্ট্রাসনো মেশিনটির ওপর ধুলার আস্তরণ পড়ে রয়েছে। মেশিনটি সচল না থাকায় রোগীদের হাসপাতালের বাইরের বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতাল থেকে অধিক অর্থ ব্যয় করে পরীক্ষা করতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ডিজিটাল মেশিনের সাথে সিমেন্স কোম্পানির ওই মেশিনটি সচল থাকলে রোগীর সাথে দায়িত্বরত কর্মচারীদের সুবিধা হতো। এখন এক মেশিনে কার্যক্রম চলার কারণে রোগীর ভিড়ে বেগ পেতে হচ্ছে। হাসপাতালে কথা হয় শহরের বেজপাড়ার আজমের সাথে। তিনি বলেন, ‘মেশিন অকেজো থাকায় বাইরে থেকে এক্স-রে করাতে হয়েছে।
প্রথমে ডিজিটাল করালেও মানসম্মত না হওয়ায় বাইরের ক্লিনিক থেকে করা হয়েছে। মুর্শেদী হক নামে একজন বলেন, গত মাসে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তার বড়ভাইয়ের ডান পা ভেঙে যায়। হাসপাতালে নিয়ে এলে এক্স-রে করাতে বলা হয়। কিন্তু হাসপাতালে এক্সরে ভালো মেশিন অকেজো থাকায় পাশের ক্লিনিক থেকে দ্বিগুণ টাকা দিয়ে করাতে হয়েছে। হাসপাতালের বাইরে ট্রলিতে করে নিয়ে যাওয়ার সময় রোগীর অনেক কষ্ট ও ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। সালমা আক্তার নামে এক রোগী বলেন, হাসপাতালে কালার আল্ট্রাসনো মেশিনটি নষ্ট থাকায় সাদাকালো আল্ট্রাসনো মেশিনে পরীক্ষা করা লাগলো। এতে কি ভালো রিপোর্ট আসবে প্রশ্ন এই রোগীর!
রোগীদের ভোগান্তির কথা স্বীকার করে হাসপাতালের রেডিওলজিস্ট বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আবু সাঈদ জানান, বর্তমানে চিকিৎসার জন্য আধুনিক যেসব যন্ত্রপাতি প্রয়োজন এই হাসপাতালে নেই। পুরনো এক্সরে ও কালার আল্ট্রাসনো মেশিন চালু থাকলেও অত্যাধুনিক মেশিনদুটি দীর্ঘদিন অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ফলে অত্যাধুনিক কোন পরীক্ষা করা লাগলে এই হাসপাতালে করা যাচ্ছে না। এতে রোগীদের ভোগান্তি হচ্ছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান জানান, মেশিন দুটি মেরামত করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে এই কর্মকর্তার দাবি কোন রোগীদের ভোগান্তি হচ্ছে না। পুরনো দুটি মেশিন দিয়ে আগের চেয়ে ভালো সেবা পাচ্ছে এই অঞ্চলের রোগীরা।
আরও পড়ুন: যশোরে বাজারজাত ‘মোস্তফা সয়াবিন তেল’র মান প্রশ্নবিদ্ধ
৩ Comments
Pingback: নবরূপে সেজেছে ‘ফুলের রাজ্য’ - দৈনিক কল্যাণ
Pingback: চৌগাছায় তানজিলা অটো ব্রিকসকে লক্ষ টাকা জরিমানা - দৈনিক কল্যাণ
Pingback: হাসপাতালের লুটপাটে লাগাম! - দৈনিক কল্যাণ