এ্যান্টনি অপু
যশোর-বেনাপোল মহাসড়ককে জাতীয় মহাসড়ক বলা হয়। দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল বন্দর দিয়ে সরকারের সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়। আর এই যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক দিয়ে দিনে রাতে প্রায় কয়েক হাজার পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহীসহ ভারী যানবহন চলাচল করে।
২০১৭-১৮ সালে রাস্তাটি পুনঃনির্মাণের সময় এই দীর্ঘ ৩৪ কিলোমিটার রাস্তার প্রশস্ততা বাড়িয়ে করা হয় ৩৪ ফুট পর্যন্ত। রাস্তার দুপাশে ৫ ফুট করে সোল্ডার নির্মাণ করা হয়। এই মাপের উপরেই লাউজানি রেলক্রসিংয়ে প্রায় ১ ফুট প্রশস্ত ও ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি ডিভাইডার স্থাপন করা হয়েছে।
যে ডিভাইডারটি বর্তমানে এ সড়কে চলাচলকারী যানবাহন ও যাত্রীদের কাছে এক আতঙ্কের নাম। গত দুই বছরে এ ডিভাইডারকে কেন্দ্র করে প্রায় অর্ধশতাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। বিদায়ী বছরের ডিসেম্বর মাসে ৭টি এবং চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে এ ডিভাইডারকে কেন্দ্র করে দুটি অর্থাৎ মোট ৯টি ট্রাক দুর্ঘটনা ঘটে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, চালকের ভুলের কারণে এ সকল দুর্ঘটনা ঘটছে। এ সমস্যা সমাধানে রেল ক্রসিংয়ের দুপাশে গতিরোধক বসানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
ওভারটেকিং এবং তন্দ্রা অবস্থায় গাড়ি চালানোর ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে।
দু’পাশে গতিরোধক এবং রেম্বল স্কিপ্ট বসানো হবে।
-কাজি ওয়ালিউল হক, সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী, রেলওয়ের পশ্চিম জোন
স্থানীয়রা জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভারি পণ্যবাহী যানবাহনে করে বেনাপোল বন্দর দিয়ে পণ্য আনা-নেয়া করা হয়। বিশেষ করে রাতের বেলায় গাড়ির হেডলাইটে এ ডিভাইডার স্পষ্টভাবে বোঝাও যায় না। ফলে প্রতিনিয়ত এই ডিভাইডারে ধাক্কা দিয়ে অনেক যানবাহন উল্টেপাল্টে ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটে। এ সকল দুর্ঘটনায় অনেকে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। এ সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালক ও স্থানীয়দের অভিযোগ গত দুই বছরে এ ডিভাইডারকে কেন্দ্র করে প্রায় অর্ধশতাধিক যানবাহন দুর্ঘটনা ঘটলেও সুষ্ঠু সমাধানে কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
আমড়াখালী এলাকার ট্রাক চালক মান্নান শেখ বলেন, ডিভাইডারকে সাইড দিতে গেলে গাড়ির এক পাশের চাকা রাস্তার সোল্ডারে নেমে যায়। আমরা এ সড়কে প্রতিনিয়ত চালাচল করি, তবুও আমাদেরও অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। আর যারা নতুন এপথে আসে তারা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ থাকে।
লাউজানি এলাকার বাসিন্দা শাহজাহান আলী বলেন, প্রায়ই রাতে দুর্ঘটনার আওয়াজ আসে। সকালে ঘুম থেকে উঠে রাস্তায় এসে দেখি ট্রাক না হয় বাস ডিভাইডার ধাক্কা মেরেছে। বেশিরভাগ ট্রাক দুর্ঘটনায় পড়ে। এর আগে কয়েকটা বাসও উল্টে গেছে এখানে।

ট্রাক ড্রাইভার ইমতিয়াজ বলেন, আমি গত ৩-৪ বছর ধরে এই সড়কে পণ্যবাহী ট্রাক চালাই। দিনে এবং রাতে এই রাস্তা দিয়েই চলাচল করি। এর আগে রাস্তাটি অনেক খারাপ ছিলো। পরে পুনর্নির্মাণের পর এখন এই ডিভাইডার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডিভাইডারে মেরে দিয়ে একটা ট্রাকের পেছনের অংশ রেললাইনের পরে থাকলে ওই সময় ট্রেন আসলে ওই ট্রেনেরও দুর্ঘটনা ঘটার আশংকা থাকে।
ঝিকরগাছার বিশিষ্ট সমাজসেবক আশরাফুজ্জামান বাবু বলেন, গত দুই বছর ধরে এ ডিভাইডারকে কেন্দ্র করে একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। এ পর্যন্ত আমাদের চোখে দেখা মতে ছোট বড়সহ প্রায় ৫০টির অধিক যানবাহন দুর্ঘটনা ঘটেছে। গেল দু’মাসেও ৯টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। শুধু লাউজানি রেল ক্রসিং নয়; যশোর শহরতলীর মুড়লি মোড়ের রেল ক্রসিংয়ে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। এ ডিভাইডার নিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী, যানবাহন চালক এবং যাত্রীদের ক্ষোভ থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কোন সুব্যবস্থা করছেন না।
এদিকে জানমালের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ঝিকরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন ভক্ত নিজ উদ্যোগে গত ৯ জানুয়ারি লাউজানি রেল ক্রসিংয়ের ডিভাইডারে রিফ্লেক্টিং স্টিকার লাগিয়ে দিয়েছেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন নাভারন সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নিশাত আল নাহিয়ান। তিনি বলেন, আমরা ডিভাইডারে স্টিকার লাগিয়ে চালকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছি। এ ব্যাপারে আরও পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবেন।
অপরদিকে একইরকম দুর্ঘটনা ঘটছে যশোরের মুড়লি রেলগেটে। সেখানেও গত ১ জানুয়ারি মধ্যেরাতে ডিভাইডারে ধাক্কা দিয়ে একটি গ্যাস সিলিন্ডারের ট্রাক উল্টে যায়।
রবিউল ইসলাম নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ট্রাকটি ডিভাইডারে ধাক্কা দিয়ে উল্টে যায়। তবে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত না হওয়ায় বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পান তারা। এ রেল ক্রসিংয়ে এর আগে ডিসেম্বর মাসে দুটি ট্রাক উল্টে গিয়েছিল।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিম জোনের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী কাজি ওয়ালিউল হক বলেন, চালকদের ভুলের কারণে এ সকল দুর্ঘটনা ঘটছে। রেল ক্রসিংকে সামনে রেখে ওভারটেকিং এবং তন্দ্রা অবস্থায় গাড়ি চালানোর ফলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। এ ধরনের দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে এজন্য লাউজানি রেল ক্রসিংয়ের দু’পাশে গতিরোধক এবং রেম্বল স্কিপ্ট বসানোর উদ্যোগ নিয়েছি। এতে করে দ্রুতগামী গাড়ির গতি কমে আসবে এবং কোন চালক তন্দ্রা অবস্থায় গাড়ি চালালে তার ঘুমের ঝুল কেটে যাবে। ফলে দুর্ঘটনার হার কমে আসবে। মুড়লী রেলগেটেও দুর্ঘটনা রুখতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

২ Comments
Good news