আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ, কেশবপুর
এক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) দিয়েই চলছে যশোর জেলার দুই উপজেলা প্রশাসন। ঝিকরগাছা উপজেলার প্রকল্প কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত দায়িত্বে রেখেছেন কেশবপুর উপজেলায়। প্রতি উপজেলায় একজন করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা থাকার কথা থাকলেও ২১ মাসেও সরকারি এ গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে স্থায়ী কর্মকর্তা নেই। অফিসের কাজে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে প্রতিনিধিদের অভিযোগ। যার কারণে সরকারের গৃহীত নানা উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ যথাযথভাবে বাস্তবায়নে দেখা দিয়েছে নানা অনিয়ম ও অনিশ্চয়তা।
সরকারি গৃহীত উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। কেশবপুরের বিভিন্ন এলাকায় বসবাসরত দরিদ্র জনগোষ্ঠীরা সরকারি উন্নয়নের সুফল পাচ্ছেনা বলে অভিযোগ করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক জনপ্রতিনিধি বলেন পিআই ও শুভাগত বিশ্বাসকে গত ২১ মাসেও একদিন দেখা পায়নি। তাদের বিভিন্ন অফিসিয়াল জরুরি কাজে চরমভাবে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তারা একজন নিয়মিত প্রকল্প কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়ার দাবী করেন।
সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, কেশবপুর উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা রিজিবুল ইসলাম কেশবপুর উপজেলায় দীর্ঘ প্রায় ৩ বছর কেশবপুরে দায়িত্ব পালন শেষে গত ২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি সরকারি নিয়মানুযায়ী বদলি হন। দীর্ঘদিন কেশবপুরে প্রকল্প কর্মকর্তার পদটি শুন্য থাকার পরে যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা শুভাগত বিশ্বাসকে কেশবপুর উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা হিসাবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের জন্য দেওয়া হয়। শুভাগত বিশ্বাসের প্রতিসপ্তাহে সোমবার ও বুধবার কেশবপুর অফিসে দায়িত্ব পালন করার কথা। কিন্তু তাকে ঠিকমত কেশবপুর অফিসে পাওয়া যায় না বলে একাধিক ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা মন্তব্য করেন।
উপজেলার ভালুকঘর গ্রামের আব্দুর রহমান বলেন, বর্তমানে স্থায়ী পিআইও না থাকায় অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা পিআইও দিয়ে উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের সরকারি উন্নয়ন কাজ তদারকি করা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। কেননা সপ্তাহে মাত্র ২ দিন অফিস করেন তিনি। যার কারণে ইউএনও ও উপজেলা চেয়ারম্যান বিভিন্ন জরুরি কাজ কর্মে এবং সময় মতো প্রকল্প কর্মকর্তাকে চোখে দেখেন না বলে জানা যায়। ফলে ১১ টি ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজে। উন্নয়ন কাজ তড়িৎ গতিতে বাস্তবায়নের জন্য দ্রুত পিআইও নিয়োগের দাবি জানাচ্ছে জনগণ।
হাসানপুর ইউনিয়নের আব্দুল মাজেদ জানান, প্রায় সব ইউনিয়নের ভেতরের রাস্তাগুলো এখনো কাচা। সামনে নির্বাচন, সরকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে নানা প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছে। কিন্তু দৈনন্দিন দাপ্তরিক কাজ সামলাতে এক উপজেলায় এক পিআইওর যেখানে হিমশিম খেতে হচ্ছে, সেখানে এক পিআইও চালাচ্ছেন দুই উপজেলা।
অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা কেশবপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) শুভাগত বিশ্বাস বলেন, শিঘ্রই শুন্য পদগুলোতে পিআইও নিয়োগ প্রক্রিয়া হতে চলেছে বলে জানা গেছে। জেলা উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে আমি কেশবপুরে প্রকল্প পরিদর্শন ও ১১ টি ইউনিয়নের কাজ তদারকি করছি।
তথ্য মতে, সারা দেশে ১৫০ জনের মতো পিআইও পদ শুন্য রয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার পদে নিয়োগের বিষয়ে উচ্চ আদালতে রিট মামলা থাকায় বিপাকে রয়েছে সরকার। তবে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে বলেও জানা যায়।
কেশবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ইঞ্জিনিয়ার ও পিআইও খুব বেশি প্রয়োজন। অতিরিক্ত দায়িত্বের পিআইও দিয়ে সরকারি উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করতে অনেক কষ্ট। প্রতিনিয়ত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি।
এ বিষয়ে কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তুহিন হোসেন বলেন, সব উপজেলায় পিআইও নেই। এ উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে এখানে স্থায়ী একজন দেওয়ার কথা বলা হবে।
