নিজস্ব প্রতিবেদক
একযুগ পর নিজ উপজেলার পৌর ভবনে গেলেন যশোরের শার্শা আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন। সাবেক মেয়র আশরাফুল আলম লিটনের সঙ্গে দলীয় কোন্দলের কারণে এতোদিন তিনি পৌরভবনে যাননি। তার অনুসারী হিসাবে পরিচিত নতুন মেয়র নাসির উদ্দিন নির্বাচিত হওয়ার পর রোববার দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে দীর্ঘ একযুগ পর পৌরসভাতে গেলেন। তবে আমন্ত্রিত করার পরেও দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ছিলেন না সাবেক মেয়র লিটন। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে নেতাকর্মীদের মাঝে। এমপি পক্ষদের দাবি মেয়র-সংসদের সমন্বয়ে তৈরি হবে আধুনিক পৌরসভা। আর লিটন পক্ষদের দাবি, ‘এতোদিন পৌরসভাতে কোন নজর ছিল না স্থানীয় সংসদের। পৌরসভাতে উন্নয়ন কর্মকা- অদৃশ্য বাধা ছিলো রাজনৈতিক কোন্দলে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, ‘২০১২ সাল পর্যন্ত শার্শা উপজেলাতে একক আধিপত্যে ছিলো স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিনের। তার অনুসারী হিসাবেই রাজনীতি করতেন সাবেক মেয়র আশরাফুল আলম লিটন। সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিনের অনুসারী থাকাকালীন ২০১১ সালের পৌর নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন লিটন। এর পর ২০১২ সালে বেনাপোল পৌরসভার উন্নয়ন কর্তত্ব নিয়ে আফিল লিটনের দ্বন্দ্ব-দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এই দূরত্ব থেকে শার্শা উপজেলা আওয়ামী লীগও কার্যত দুটি গ্রুপে বিভক্ত শুরু হয়। একটি অংশের নেতৃত্ব দেন শেখ আফিল উদ্দিন; অন্যটি জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম লিটন। দলীয় কোন্দলের মধ্যে লিটন পৌরসভার মেয়র দায়িত্ব থাকাকালীন প্রায় ১১ বছর পৌরসভাতে যাননি সংসদ সদস্য আফিল উদ্দিন। সর্বশেষ গত ১৭ জুলাই অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অংশ নেননি লিটন। দলীয় মনোনয়ন নিয়ে আফিলের অনুসারী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন বিজয়ী হন। রোববার বেলা ১১ টার দিকে বেনাপোল পৌরসভার প্রধান কার্যালয় নগর ভবনে দায়িত্ব গ্রহণ করেন নির্বাচিত মেয়র নাসির উদ্দীন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আফিল উদ্দিন। পৌরসভা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শার্শা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা ইসলামের কাছ থেকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝে নেন নাসির। দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পরেই এমপি আফিলের পা ছুঁয়ে দোয়া নিয়ে মেয়রের চেয়ারে বসেন নাসির।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে সাবেক মেয়রকে ইঙ্গিত করে বক্তব্য দেন এমপি আফিল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সেই একযুগ আগে এই পৌরসভাতে প্রবেশ করেছিলাম। আজ আবার আসলাম। কি উন্নয়ন হয়েছে সেটা পৌরবাসী জানে। এবার কি উন্নয়ন হবে সেটাও দেখবে পৌরবাসী। সরকারের উন্নয়নের প্রশংসা করে তিনি আবারও শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী বানাতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে নবনির্বাচিত কাউন্সিলর ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তবে ছিলেন না সাবেক মেয়র লিটনসহ তার অনুসারীরা।
পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক সুকুমার দাস বলেন, ২০১২ সালে বেনাপোল পৌর ভবনের ভিস্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে এসেছিলেন স্থানীয় সংসদ শেখ আফিল উদ্দিন। এরপর সাবেক মেয়র লিটন ও এমপি আফিল উদ্দিনের সঙ্গে দূরত্ব হয়। এই রাজনৈতিক দূরত্ব ও গ্রুপিংয়ে কারণে স্থানীয় সংসদ পৌরভবনে এতোদিন আসেনি। এমনকি সংসদ সদস্য অনুসারীরাও এতোদিন পৌরসভাতে ভেড়েনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংসদ ও মেয়র দ্বন্দ্বে পৌরসভাতে উন্নয়ন কর্মকা-ে অদৃশ্য বাধা ছিল। এখানে রাজনৈতিক বিরোধ যদি না থাকতো তাহলে পৌরবাসী আরো উন্নয়ন দেখতে পারতেন। তবে রাজনৈতিক কোন্দলে নয়, এতোদিন নানা ব্যস্ততার কারণে পৌরসভাতে যেতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন যশোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন। তিনি বলেন, কোন নির্দিষ্ট কোন কারণ ছিলো না। আগের মেয়র মনে করেছিলো আমার দরকার নাই, প্রয়োজন নেই, তাই যাওয়া হয়নি। রাজনৈতিক কোন কোন্দল না। এক যুগ পৌরসভাতে না গেলেও বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে আমার সুপারিশ বা ডিওলেটার লাগলে দিয়েছি। তিনি জানান, সংসদ সদস্য ও মেয়রের সমন্বয় থাকলে যেকোন উন্নয়ন তরান্বিত হয়। বর্তমান মেয়র ও আমি সবার পরামর্শে বেনাপোলকে আধুনিক পৌরসভায় পরিণত করবো। এই বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক মেয়র আশরাফুল আলম লিটনের মুঠোফোন বন্ধ থাকাতে তার মন্তব্য নেওয়া যায়নি।