নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরে দেশের প্রথম বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিশোধন কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) নির্বাহী পরিচালক সমীর কুমার খারে। প্রতিনিধিদল নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে তিনি যশোরের ঝুমঝুমপুরস্থ এই কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে তিনি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কোম্পানি ‘স্কেইট ওয়েস্টের’ উদ্ভাবনী পদ্ধতি ও উদ্যমের জন্য সাধুবাদ জানান।
এডিবির নির্বাহী পরিচালক সমীর কুমার খারে প্রতিনিধি দল নিয়ে দেশের প্রথম বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিশোধন কেন্দ্রে যান। এ সময় তিনি সেখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান স্কেইট ওয়েস্ট দ্বারা পরিচালিত অত্যাধুনিক ইন্টিগ্রেটেড ল্যান্ডফিল এবং রিসোর্স রিকোভারি ফ্যাসিলিটি (আইএল অ্যান্ড আরআরএফ) পরিদর্শন করেন। তার সাথে ছিলেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) প্রকল্প পরিচালক (সিআরডিপি-২) হামিদুল হক, এডিবির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) প্রতিনিধিগণ, যশোর পৌরসভার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
পরিদর্শনের পর দ্য স্কেইট লিমিটেডের চেয়ারম্যান নাহিদ আলম এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ হোসেন জাহাঙ্গীর এই উদ্যোগের তাৎপর্য তুলে ধরেন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।
অভিজ্ঞতা বিনিময় পর্বে স্কেইট ওয়েস্ট’র চেয়ারম্যান মো. নাহিদ আলম উল্লেখ করেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং একটি প্রক্রিয়া, এই প্রক্রিয়াকে লাভজনক ও সাসটেইনেবল করার জন্য প্রত্যেকের কার্যকরী অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা প্রয়োজন। আধুনিক প্রযুক্তি সংযোগ এবং সহযোগিতার মাধ্যমে প্ল্যান্টের উৎপাদন ও বর্জ্য পরিশোধনের পরিমাণ কয়েকগুণ বাড়িয়ে তোলা সম্ভব।
এডিবি’র নির্বাহী পরিচালক সমীর কুমার খারে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্কেইট ওয়েস্টের উদ্ভাবনী পদ্ধতি ও উদ্যমের জন্য সাধুবাদ জানান। তিনি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতার তাৎপর্যের ওপর জোর দেন এবং আইএল অ্যান্ড আরআরএফ’র বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির প্রশংসা করেন। এছাড়াও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সাথে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে গুরুত্বারোপ করে বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য এবং পরিবেশের জন্য বিরাট হুমকি। আমরা যদি এখানে মানুষের সরাসরি অংশগ্রহণ কমিয়ে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার মত আধুনিক প্রযুক্তির সংযোগ ঘটাতে পারি, তাহলে আমরা দ্রুত একটি কার্যকরী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা ও রোল মডেল গড়ে তুলতে পারব।
স্কেইট ওয়েস্ট’র চেয়ারম্যান নাহিদ আলম জানান, যশোরের ঝুমঝুমপুর নড়াইল-ঢাকা মহাসড়কের পাশে অবস্থিত উন্নত বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ ও ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্টটি বেসরকারি সংস্থা স্কেইট ওয়েস্ট দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, যেটি বাংলাদেশের প্রথম ও অগ্রণী উদ্যোগ। এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিশোধন কেন্দ্রটি ১৩ দশমিক ৯৭ একর জমির উপর অবস্থিত। ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রকল্পের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যা ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সমাপ্ত হয় এবং ২০১৯ সালের আগস্ট মাস থেকে বর্জ্য পরিশোধন ও প্রক্রিয়াকরণ কার্যক্রম শুরু হয়।
বর্তমানে এই প্ল্যান্টে যশোর শহরের পৌর বর্জ্য থেকে উন্নত মানের জৈব সার প্রস্তুত হচ্ছে। যা দেশের কৃষিখাতে এবং নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। পচনশীল বর্জ্য থেকে উৎপন্ন হচ্ছে নবায়নযোগ্য শক্তি বায়োগ্যাস ও ইলেক্ট্রিসিটি যা বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত মুজিব ক্লাইমেট প্রোসপারিটি প্ল্যান বাস্তবায়নে সহযোগী ভূমিকা পালন করছে। এছাড়াও দেশের একমাত্র পরিকল্পিত পরিবেশবান্ধব ল্যান্ডফিল এখানে অবস্থিত। এই প্লান্টে আরো রয়েছে পানি পরিশোধন ইউনিট ও পয়োবর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র।