নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরের ‘খাজুরা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়’র নাম পরিবর্তন করে ‘খাজুরা মাখনবালা মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন প্রতিষ্ঠানটির জমিদাতা ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলতাফ হোসেনের পরিবার। তাদের দাবি, স্থানীয় সংসদ সদস্য রণজিৎ কুমার রায় প্রভাব বিস্তার করে স্কুলটি তার মায়ের নামে করে নিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন ওই স্কুলের জমি দান করায় তার নামে প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করার দাবি জানিয়েছে তার পরিবার। শনিবার দুপুরে প্রেসক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলতাফ হোসেনের ছোট ছেলে মাসুম রেজা।
মাসুম রেজা বলেন, তার বাবা ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম ডা. আলতাফ হোসেন, যার লাল মুক্তিবার্তা নং- ০৪০৫০২০১২৪, বেসামরিক গেজেট-২০৬৮। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৬ সালের ২০ মে এবং মৃত্যুবরণ করেন ১৯৯৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর। ১৯৮৫ সালের ১১ অক্টোবর বৃহত্তর খাজুরা বাজারের শিক্ষিত ও সচেতন মানুষদের সাথে নিয়ে তিনি খাজুরা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠানটির জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধ আলতাফ হোসেন ৩৪ নং মথুরাপুর মৌজার ২৬ শতাংশ জমি দান করেন। কিন্তু তিনি তার নিজের নামে নামকরণ না করে বৃহত্তর খাজুরার নামে ‘খাজুরা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়’ নামকরণ করেন।
আরও পড়ুন: মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে চাঁদের হাটের চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন
মাসুম রেজা দাবি করেন, যশোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য রণজিৎ কুমার রায় প্রভাব বিস্তার করে ও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে স্কুলটি তার মায়ের নামে ‘খাজুরা মাখনবালা মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ করে নিয়েছেন। স্বয়ং সংসদ সদস্য এ ঘটনায় সম্পৃক্ত হওয়ায় পরিবারের পক্ষ থেকে এলাকায় প্রতিবাদ জানানোরও সুযোগ পাননি তারা। মাসুম রেজা আরও দাবি করেন, খাজুরা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশে টিপিএম অর্থাৎ তেলিধান্যপুড়া, পান্তাপাড়া, মথুরাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬৪ শতাংশ জমি তার বাবা দান করেছেন। এই স্কুলের দক্ষিণ পাশে খাজুরা কেন্দ্রীয় ঈদগাহে তিনি ৭ শতাংশ জমি দান করেন।
মাসুম রেজ আরও জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার পাশাপাশি এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও তার পিতা সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করায় তার বাবা আলতাফ হোসেন ছাড়াও মাস্টার আব্দুল হামিদ লস্করসহ মোট ৬ জন গ্রেফতার হন এবং পুলিশি নির্যাতনের শিকার হন। আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত অ্যাড. রওশন আলী পুলিশ হেফাজত থেকে তাদের ছাড়িয়ে আনেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের প্রচারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যশোতে আসেন। অ্যাডভোকেট রওশন আলীর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ওই বিষয়টি জানতে পারেন। ভাষা আন্দোলনে সাহসিকতার পরিচয় পেয়ে তাদের সাথে দেখা করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বাইসাইকেলযোগে খাজুরায় যান বলেও মাসুম রেজা দাবি করেন। এরপর থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ভালবেসে প্রত্যক্ষভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন ডা. আলতাফ হোসেন।
আরও পড়ুন:বেনাপোলে ভারতীয় ফেন্সিডিল সহ আটক ১
এরপর ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলনে বাঘারপাড়া থানার অন্যতম সংগঠক ছিলেন তিনি। ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন। ভারতে চাঁপাবাড়ির ক্যাম্পে মেডিকেল হিসেবে দীর্ঘ নয় মাস নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং বন্দবিলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে মাসুম রেজা একজন ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধান মন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন, ওই প্রতিষ্ঠানটি নাম ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলতাফ হোসেনের নামে নামকরণ করা হোক।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলতাফ হোসেনের ছেলে কামাল হোসেন, মেয়ে রওশন আরা, মঞ্জুয়ারা বেগম, ছালমা বেগম প্রমুখ। এদিকে, এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে যশোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য রণজিৎ কুমার রায় বলেন, স্কুলের নামকরণের ক্ষেত্রে নিয়ম নীতিমালা মেনেই করতে হয়। নির্ধারিত টাকা জমা দিয়ে নিয়ম মাফিক আবেদনের পর মন্ত্রণালয় নামকরণ করেছে। এবং সেটিও দশবছর আগের ঘটনা।
আরও পড়ুন: যশোর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে দুর্গন্ধে নাকাল রোগী ও স্বজনরা