নিজস্ব প্রতিবেদক
২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের টাকা জমা দেয়ার দশদিন পর এক শিক্ষার্থীকে প্রধান শিক্ষক বলেছেন ‘তুমি স্কুলের শিক্ষার্থীই নও, পড়তে হলে তোমাকে আবার নবম শ্রেণিতে ভর্তি হতে হবে।’ নিরুপায় হয়ে প্রতিকার চেয়ে ওই শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছে। যশোরের চৌগাছা সরকারি শাহাদৎ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ঘটনাটি ঘটেছে।
গত বৃহস্পতিবার ওই শিক্ষার্থী ও তার মা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে ডেকে এ বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
অভিযোগে রতন মাহমুদ নামে ওই শিক্ষার্থী বলেছে, সে একই বিদ্যালয় থেকে ২০২০ সালে জেএসসি পাশ করেছে। জেএসসিতে তার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ছিলো ২০১৩৬৫০০২২ এবং শ্রেণি রোল নম্বর-১০৮। লিখিত আবেদনে শিক্ষার্থী রতন আরো বলে, দশম শ্রেণিতে আমার শ্রেণি রোল নম্বর ১৫৩। সে জানায় একই বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষা পাশের পর ৯ম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হই। শ্রেণি রোল নম্বর ছিলো ১০৮। ২০২১ সালে ৯ম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করি। ১০ম শ্রেণিতে আমার রোল নম্বর হয় ১৫৩। একজন নিয়মিত ছাত্র হিসেবে বিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রমসহ শ্রেণি পরীক্ষা, অর্ধ-বার্ষিকী পরীক্ষা এবং ২০২২ সালের ১০ম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিই। ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের জন্য বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি এবং সকল বিষয়ে উত্তীর্ণ হই। এরপর আমার কাছ থেকে বোর্ডের ফরম পূরণের জন্য ২১ শ ১০ টাকা জমা নেয়া হয়। পরবর্তীতে রেজিস্ট্রেশন কার্ড বিতরণের সময় দায়িত্বপ্রাপ্তরা আমার কার্ড দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং বোর্ড ফির টাকা ফেরত প্রদান করেন। এরপর আমি বিষয়টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে জানালে তিনি বলেন, ‘তুমি এই বিদ্যালয়ের ছাত্র নও, পড়তে হলে তোমাকে এই বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণিতে ফের ভর্তি হতে হবে।’ অবশেষে নিরুপায় হয়ে এই আবেদন করছি। ছেলেটি আরো জানায় আমার বাবা ক্যান্সারে আক্রান্ত। আমার মা খুব কষ্ট করে (পরের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে) আমার লেখাপড়ার ব্যয়ভার বহন করেন। আমি লেখাপড়া শিখে বড় হতে চাই। ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে পারে সে বিষয়ে ইউএনওর স্যার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বলেছেন।
ছেলেটির মা ফুলতুলি বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ফরম পূরণের টাকা নিয়ে রেজিস্ট্রেশন কার্ড না দিয়ে স্যারেরা টাকা ফেরৎ দিয়ে বলেছেন ওকে আবার ক্লাস নাইনে ভর্তি হতে হবে। তাহলে ওর এই দুই/তিন বছর কে ফিরিয়ে দেবে। আর আমি বৃদ্ধ মানুষ, কিভাবে ওকে পড়াবো ?
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজুর রহমান বলেন, রেজিস্ট্রেশনের জন্য স্কুলের কয়েকজন শিক্ষককে দায়িত্ব দেয়া হয়। তারা আমাকে জানিয়েছেন রেজিস্ট্রেশনের সময় ছেলেটি এলাকায় ছিলো না। তার সাথে যোগাযোগও করা যায়নি। এজন্য এমন ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন ইউএনও স্যারের নির্দেশ অনুযায়ী এ বিষয়ে বোর্ডে যোগাযোগ করা হবে যেন ছেলেটি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা (ইউএনও) বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে বোর্ডে যোগাযোগ করে দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ছেলেটির শিক্ষাজীবন যেন বাধাগ্রস্থ না হয় সেজন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা চেষ্টা করা হবে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার একাধিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ছেলেটি বিদ্যালয়ের ৯ম ও ১০ম শ্রেণির সকল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। অথচ তার রেজিস্ট্রেশন হয়নি। এটা অবশ্যই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককের ব্যর্থতা। এধরনের ঘটনায় প্রধান শিক্ষক বোর্ড চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করলেই সমাধান হতো। তিনি দায়িত্বও নিতে চাননি, এটা নায্যতা নয়। ছেলেটি অসহায় পরিবারের বলে এ ধরনের উদাসীনতা কাম্য নয়।
তারা আরো বলেন, বিষয়টি নিয়ে প্রধান শিক্ষক নিজের ভুল স্বীকার করে বোর্ড চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করলেই সে ২০২৩ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারবে। অতীতে এমন ঘটনা এভাবেই সমাধান হয়েছে।
২ Comments
Pingback: স্কুল শিক্ষিকাকে লাথি মারা সেই ট্রেন পরিচালক বরখাস্ত
Pingback: বাজার মনিটরিং জোরদারের নির্দেশ যশোরের ডিসির