নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর মেডিকেল কলেজ থেকে এসি ও প্রজেক্টর চুরির ঘটনায় তুমুল হইচই শুরু হয়েছে। থানায় অভিযোগ দেয়াসহ এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। থানা পুলিশ ও তদন্ত কমিটি পৃথকভাবে মেডিকেল কলেজের এনাটমি বিভাগের ডজনখানেক কর্মচারীকে এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। একজন শিক্ষকের কক্ষকে নৈশ প্রহরীদের বিশ্রাগাম করার অনুমতি দেয়ার ঘটনা চুরি ইস্যুতে যোগ হয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
থানায় দেয়া যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষের একটি অভিযোগ থেকে তথ্য মিলেছে, গত ১৬ আগস্ট রাতে যশোর মেডিকেল কলেজ থেকে দু’টি এসি, একটি প্রজেক্টর ও একটি ইলেকট্রনিক্স ঘড়ি চুরি হয়েছে। এনাটমি বিভাগের ক্লাস রুমের পেছনের গ্রিল কেটে রুমে ঢুকে এই চুরি হয়েছে।
তথ্য মিলেছে, এনাটমি বিভাগের ৪টি এসির মধ্যে দুটি ভাল আর দুটি নষ্ট ছিল। কিন্তু চোরেরা নষ্ট দুটি নেয়নি, ভাল দুটি এসিই নিয়েছে। কাজেই চোরদের কাছে আগাম তথ্য ছিল। মেডিকেল কলেজ সংশ্লিষ্ট কেউ এই তথ্য চোরদের দিয়েছেন, অথবা ওই চুরির সাথে তারা সম্পৃক্ত থাকতে পারে বলেও ধারনা করছেন মেডিকেল কলেজ সংশ্লিষ্ট অনেকে।
এদিকে চুরির ঘটনায় অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাক্তার আবু হাসানাত আহসান হাবীব থানায় অভিযোগ দেয়া ছাড়াও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। প্যাথলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ আযম সাকলায়েনকে সভাপতি, ফিজিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ আলাউদ্দীন আল মামুনকে সদস্যসচিব ও এনাটমি বিভাগের প্রভাষক ডাঃ সাইদুজ্জামান, স্টোর কিপার জুয়েল রানা, ক্যাশ সরকার মাসুদুর রহমানকে তদন্ত কমিটির সদস্য করা হয়। ওই কমিটির তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে, থানা পুলিশের তদন্তও চলছে।
মেডিকেল কলেজ সূত্র জানিয়েছে, গত ২৩ আগস্ট থেকে ২৫ আগস্ট মেডিকেল কলেজের ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্ত কমিটি। এরা হলেন, এনাটমি বিভাগের অফিস সহায়ক আলমগীর হোসেন, ডোম খোকন, হোস্টেল এ্যাটেনডেন্ট বিকাশ চন্দ্র সরকার, সিকিউরিটি গার্ড অমৃত পোদ্দার, আবুল কালাম আজাদ, তবিবর রহমান, রমজান আলী, শিমুল হোসেন, লিফট ম্যান আব্দুস সালাম, গার্ডেনার নুরুল হক ফুয়াদ, প্লাম্বার জসিম উদ্দীন, পরিচ্ছন্নতা কর্মী মাসুদ রানা। তবে চোর চক্রে ইমদাদুল হক ও সবুজ আহমেদ নামে মেডিকেল কলেজের দুইজন জড়িত থাকতে পারে বলেও ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট অনেকে।
উল্লেখ্য, এসি ও প্রজেক্টর চুরির ছুটির দিন শনি ও শুক্রবারে প্রশাসনিক ভবনে রাতের প্রহরী ছিলেন তবিবুর রহমান, মেইনগেটে দায়িত্বে ছিলেন রমজান, শিমুল, হোস্টেলের দায়িত্বে ছিলেন সালাম ও বিকাশ।
এদিকে তদন্ত কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডাক্তার আযম সাকলায়েন জানিয়েছেন, তদন্ত চলমান রয়েছে। এখনই পরিস্কার করে সব বলা যাচ্ছে না। এছাড়া শিক্ষকের কক্ষ নৈশ প্রহরীদের বিশ্রামাগার করা হয়নি। ওটা মালামাল রাখার জন্য দেয়া হয়েছে। বাকি তথ্য নিতে হলে অধ্যক্ষের সাথে কথা বলতে পারেন। এছাড়া প্রয়োজন হলে স্বশরীরে গিয়ে তথ্য নিতে হবে।
তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার আলাউদ্দীন আল মামুন জানিয়েছেন, স্বচ্ছতার সাথে তদন্ত এগুচ্ছে। সন্দেহভাজন অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বেধে দেয়া সময়ে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
যশোর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাক্তার আবু হাসানাত আহসান হাবীব জানিয়েছেন, চুরির ঘটনা জানার পর পুলিশ প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কলেজে অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটিও করা হয়েছে। ৭ কর্ম দিবসে ওই কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করবে। কলেজ সংশ্লিষ্ট কেউ জড়িত থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন: ভূতুড়ে শহরে রূপ নিচ্ছে যশোর