নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, আওয়ামী লীগ শুধু মুখেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর মুদ্রা পাচারের চেতনা এক নয়। খুন করা গুম করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নয়। যদিও আপনারা (আওয়ামী লীগ) খুন গুমের চেতনায় বিশ্বাসী। শুক্রবার বিকালে যশোরে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে তিনি এসব মন্তব্য করেন। বিএনপির ৪৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শহরের ভোলাট্যাঙ্ক রোডস্থ রাসেল চত্বরে সমাবেশে তিনি এমন বক্তব্যে এমন কথা বলেন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ সমাবেশ ও শোভাযাত্রার আয়োজন করে যশোর জেলা বিএনপি।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আরও বলেন, কোন শক্তি শেখ হাসিনাকে আর ক্ষমতায় রাখতে পারবে না। জনগণের সামনে মাথানত তাকে করতেই হবে। জনগণের ভোটের অধিকার জনগণকে ফিরিয়ে দিতে হবে। জনযুদ্ধে জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন না। আপনার (শেখ হাসিনা) আশেপাশে লুটেরা, দুর্নীতিবাজরা। দুর্নীতিবাজরা শেখ হাসিনাকে ভাগা দেয়। ভাগা পান বলেই তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারেন না তিনি।
খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মুদ্রা পাচারকারী, নারী পাচারকারী। এখন বহু লোক বিদেশে চিকিৎসা করাতে যায় সেক্ষেত্রে বাধা নাই। খালেদা জিয়ার ব্যাপারে বাধা কিসের? এখনও সময় আছে খালেদা জিয়ার বাধা দ্রুত প্রত্যাহার করেন। বিএনপি প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। বিএনপি প্রতিশোধ নেয় না। খালেদা জিয়া প্রতিশোধ নেয় না। আবার প্রতিদিন মার খাবো এটাও সম্ভব না। এর জবাব দিতে যেদিন রাস্তায় দাঁড়াবো; সেই দিন কারোও পিঠে জায়গা হবে না। তাই সহজভাবে বলছি, গণতন্ত্রের পথে আসুন। গণতন্ত্রের পথে হাঁটুন। জনগণের উপর বিশ্বাস রাখেন। এতো উন্নয়ন করলেন ভোটটা পুলিশকে দিতে হয় কেন? জনগণকে দিতে দেন না কেন! আমরা গণন্ত্রের পথে আছি। আপনারাও আসুন। তারাই আপনাকে নিরাপত্তা দিয়ে শান্তিতে থাকতে ভূমিকা রাখবে।
পুলিশের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, মাছের রাজা ইলিশ আর দেশের রাজা পুলিশ। এখন বাংলাদেশে পাকিস্তানের বর্বরতাকে হার মানায়। কাল থেকে যদি জনগণ ট্যাক্স বন্ধ করে দেয়, খাজনা বন্ধ করে দেয়। তাহলে বাঁচার জন্য আপনাদের বেতন কি শেখ হাসিনা দিবে! শেখ হাসিনার ক্ষমতায় রাখার জন্য তার কথায় গুলি করবেন, গ্রেফতার করবেন। যে মানুষ পাঁচ বছর আগে কবরে গেছে তাকেও মামলার আসামি থেকে বাদ দিচ্ছেন না। জনযুদ্ধে জনগণের মুখোমুখি দাঁড়াবেন না। জনযুদ্ধে জনগণের সঙ্গে দাঁড়ান। জনগণের শাসন করার ক্ষমতা রাষ্ট্র সংবিধান আপনাদের দেয়নি।
সমাবেশে দলের খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের জনগণ পাকিস্তানী বাহিনীর যে বিভৎসতা দেখেছিল, আজ স্বাধীন দেশে প্রতিনিয়ত একই দৃশ্য দেখতে হয়। পুলিশ আজ দেশের রাজা হয়েছে। শেখ হাসিনার পকেট থেকে নয়, রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে তাদের বেতন ভাতা হয়। সংবিধান তাদের জনগণের সেবা করার ক্ষমতা দিয়েছে, শাসন করার ক্ষমতা দেয় নাই। অথচ সেই পুলিশ আজ শেখ হাসিনার অবৈধ ক্ষমতা রক্ষার জন্য কথায় কথায় বিএনপি কর্মীদের গুলি করে। মৃত মানুষের নামে পর্যন্ত মামলা করে। পুলিশ সদস্যদের জনগণের মুখোমুখি না হয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো আহ্বান জানান। জনগণের শক্তি হয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন দলের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সদস্য সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, ইঞ্জিনিয়ার টি এস আইয়ূব, জেলা যুবদলের সভাপতি এম তমাল আহমেদ, জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক মকবুল হোসেন, জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদিকা মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসী বেগম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি রবিউল ইসলাম, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান খান। সমাবেশ শেষে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রায় নেতাকর্মীরা জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকার পাশাপাশি রঙ বেরঙের ব্যানার- ফেস্টুন, দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ফেস্টুন নিয়ে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী শোভাযাত্রায় অংশ নেন। শোভাযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপির সদস্য গোলাম রেজা দুলু, আব্দুস সালাম আজাদ, এ কে শরফুদ্দৌলা ছোটলু, মারুফুল ইসলাম, মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, কাজী আজম, সিরাজুল ইসলাম, নগর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম চৌধুরী মুল্লুক চাঁদ, সাধারণ সম্পাদক এহসানুল হক সেতু, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুরুল হক খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, আশরাফুজ্জামান মিঠু, মণিরামপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাড. শহীদ ইকবাল হোসেন, অভয়নগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফারাজি মতিয়ার রহমান, ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোর্ত্তজা এলাহী টিপু, শার্শা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুজ্জামান মধু, চৌগাছা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জহুরুল ইসলাম, বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শামসুর রহমান, কেশবপুর পৌর বিএনপির সভাপতি আব্দুস সামাদ বিশ্বাস প্রমুখ।