নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর জেলা ছাত্রদল আয়োজিত ‘জুলাই-আগস্টের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে’ সকল শহীদের স্মরণে এক স্মরণসভা বুধবার (১৬ জুলাই) শহরের দড়াটানা ভৈরব চত্বরে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। তিনি ফ্যাসিবাদ বিরোধী শক্তির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির প্রবণতার তীব্র সমালোচনা করে বলেন, এই বিভেদই দেশে ফ্যাসিবাদকে জিইয়ে রাখছে।
অনিন্দ্য ইসলাম অমিত তার বক্তব্যে বলেন, কিছু কিছু রাজনৈতিক দল ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের কৃতিত্ব দাবি করতে গিয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী শক্তির মধ্যে বিভেদ রেখা টানতে চায়। তারা এটি করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ তথা ফ্যাসিজমের সুবিধা করে দিয়েছেন। হাসিনা পালিয়ে গেছে, কিন্তু আজও ফ্যাসিবাদ বাংলাদেশের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধে রয়ে গেছে।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রকামী শক্তির মধ্যে এই বিভেদ এবং যারা ফ্যাসিজমের শেকড় এখনও লালন করছে, এটি তাদের ষড়যন্ত্র। তিনি বিশ্বাস করেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান এটি বোঝেন, যা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেতারা বোঝেন না। তারা বুঝলে দেশের সংকট কেটে যেতো। নতুন সূর্যোদয়ের পাশাপাশি মানুষ তার গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেতো। ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়াই করতে না পারলে সহজে ফ্যাসিবাদকে উৎপাটন করা যাবে না।”
তিনি আরও যোগ করেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের এক বছর অতিক্রম করার আগেই কেন ঐক্যের মধ্যে বিভেদ? এই বিভেদের কারণে ‘জুলাই সনদ’ তৈরি হয়নি। আজকে সকলে সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে একমত হতে পারছি না। সেই সাথে জুলাই যোদ্ধাদের গোপালগঞ্জে হাসিনার সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা আক্রান্ত হতে হয়েছে। অমিত জোর দিয়ে বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের আন্দোলনের কৃতিত্ব একমাত্র বিএনপির দাবি করার সুযোগ থাকলেও তাদের নেতা তারেক রহমান সেটি করেননি। তিনি জনগণের সাথে পতনের কৃতিত্ব ভাগাভাগি করে নিয়েছিলেন, কারণ তিনি জানতেন, স্বাধীনতার পরবর্তী বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের সকল কৃতিত্ব দাবি করে জাতিকে খণ্ড-বিখণ্ড করেছিল, যার ফলে বাংলাদেশ কাক্সিক্ষত উন্নয়নের পথে ছুটতে পারেনি। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে তারেক রহমান এই ঐক্য আহ্বান করেছিলেন, যা তিনি ২০১৮ সালেও দিয়েছিলেন।
সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রসঙ্গে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, সংবিধান সংস্কার কমিশন হয়েছে, তারা প্রস্তাব দিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ভিন্নমত প্রকাশ করেছে। এইগুলো ঠিক করার জন্য ঐক্যমত কমিশন গঠন করা হয়েছে। সেখানে সকল রাজনৈতিক দল অনেক বিষয়ে একমত, আবার কিছু বিষয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করেছে। কিন্তু নতুন বিষয় অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের সকল বিষয়ে নাকি সকল রাজনৈতিক দলকে এক হতে হবে। এটি বাকশাল ফিরে যাওয়ার মতো। যে বাকশাল সকল রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করে একদলের শাসন কায়েম করেছিল। এটি তো গণতন্ত্রের ভাষা হতে পারে না।
ঢাকার মিটফোর্ডের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে তার দলের শীর্ষ নেতাকে কটূক্তি করার ঘটনা উলে¬খ করে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, সেটি কোনোভাবেই সহ্য করার বিষয় না। তারপরও বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কর্মীরা দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করেছেন।
তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ষড়যন্ত্রকারীদের কোনো পাতা ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। আমাদের শক্তির জায়গা দেশের জনগণ। তাদের সাথে আরও নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করতে হবে, যাতে করে জনগণ ষড়যন্ত্রকারীদের কথায় বিভ্রান্ত হতে না পারে।’
জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওমর ফারুক তারেকের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাপ্পি ও সাংগঠনিক সম্পাদক শাহনেওয়াজ ইমরানের পরিচালনায় এই স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম, জুলাই যোদ্ধা শহীদ মেহেদী হাসান আলিফের মা মোমেনা খাতুন ডলি, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মোস্তফা আমির ফয়সাল, সদস্য সচিব রাজিদুর রহমান সাগর, নগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুমন আহমেদ, সদস্য সচিব মাসুদ কায়সার ইস্তি, ছাত্রদল নেতা সবুজ খান, আজিজুর রহমান, ইসরাফিল হোসেন প্রমুখ।