এবারও অনিয়মের পথেই হাঁটছে যশোর শিক্ষা বোর্ড
নিজস্ব প্রতিবেদক
আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষার ওএমআর শিট ও খাতা ক্রয়ের ঠিকাদার নির্বাচনে এবারও অনিয়মের পথেই হাঁটছে যশোর শিক্ষা বোর্ড। ঠিকাদারের সাথে ‘নেগোশিয়েশন’ করে কর্মকর্তারা অতীতের মতো বেশি ব্যয়ে অর্থাৎ এবার ২৩ লাখ টাকা বাড়তি খরচ করে ওএমআর শিট ও খাতা ক্রয় করতে যাচ্ছেন। দুই-একদিনের মধ্যেই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি কার্যাদেশ পেতে পারে বলে শিক্ষা বোর্ডের একাধিক সূত্র দাবি করেছে।
সূত্রের দাবি, যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডর অধীনে এইচএসসি পরীক্ষার ওএমআর শিট ও খাতা ক্রয়ে সম্প্রতি ৩ কোটি টাকা টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এশিয়া বাংলাদেশ এসোসিয়েশন, এলিট প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিমিটেড, মাস্টার্স সিমেক্স পেপার লিমিটেড ও প্রিন্ট মাস্টার্স প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিমিটেড এই চারটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পেতে দরপত্র জমা দেয়। কিন্তু ৩ কোটি টাকার দরপত্রের অনুকূলে কোন প্রতিষ্ঠানই লোয়েস্ট রেট দেয়নি। সবাই ৩ কোটি টাকার উপরে রেট দিয়ে দরপত্র সবমিট করে। এরমধ্যে ৩ কোটি ২৩ লাখ ৪০ হাজার টাকায় কাজ পেতে দরপত্র জমা দেয় এশিয়া বাংলাদেশ এসোসিয়েশন।
সূত্র মতে, ইজিপির নিয়ম অনুযায়ী সর্বনিম্ন দরদাতা কার্যাদেশ পাবে। সেটা হতে হবে নির্ধারিত ৩ কোটি টাকার নিচেই। কিন্তু এশিয়া বাংলাদেশ এসোসিয়েশন ৩ কোটি ২৩ লাখ ৪০ হাজার টাকার দরপত্র জমা দিলেও তাদেরকে কার্যাদেশ দেওয়া হবে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ২৬ জুন এইচএসসি পরীক্ষা। টেন্ডার বাতিল করে রি-টেন্ডার করতে যে সময় দরকার সেটা শিক্ষা বোর্ডের হাতে নেই। ফলে যে চারটি প্রতিষ্ঠান টেন্ডারে অংশ নিয়েছে তাদের মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা এশিয়া বাংলাদেশ এসোসিয়েশনকেই কার্যাদেশ দেওয়ার সব আয়োজন সম্পন্ন করা হচ্ছে। আর এতে সরকারের বাড়তি গুনতে হবে অন্তত ২৩ লাখ টাকা।
সূত্র মতে, যশোর শিক্ষা বোর্ডের ওএমআর শিট ও খাতা সরবরাহে গত ১৭ বছর ধরেই হাতে গোনা ৩ থেকে ৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পেয়ে আসছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। অতীতের মতো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে টেন্ডার কমিটি ও বোর্ডের কর্মকর্তারা যোগসাজসে বাড়তি রেটে কার্যাদেশ দিতে যাচ্ছেন। বোর্ডে গুঞ্জন আছে বোর্ডের তিনজন কর্মকর্তা ঢাকার একটি দামি হোটেলে বসে মিউচ্যুয়াল করেছেন। এজন্য তারা পেয়েছেন ২৮ লাখ টাকা। তবে এসব তথ্য সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন টেন্ডার কমিটির সদস্য ও শিক্ষা বোর্ডের ডেপুটি কন্ট্রোলার নিয়ামত উল্লাহ। তিনি বলেছেন, ইজিপির সিস্টেম অনুযায়ীই দরপত্র আহ্বান, যাচাই ও কার্যাদেশ করা হচ্ছে। যেসব ঠিকাদার টেন্ডারে অংশ নিতে পারে না বা যারা কার্যাদেশ পায় না তারা ভুল তথ্য দেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিক্ষা বোর্ড চাইলে রি-টেন্ডার দিতে পারতো। কিন্তু ২৬ জুন পরীক্ষা। সময় বেশি নেই। এজন্য হয়ত সম্ভব হয়নি।
এদিকে, এশিয়া বাংলাদেশ এসোসিয়েশনের আব্দুল মান্নান বলেন, তারা এখনো কার্যাদেশ পায়নি। ওএমআর শিট ও খাতা সরবরাহে দেড় মাসের মতো সময় লাগে। কিন্তু এখনো অনুমতি না পাওয়ায় তারাও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। তিনি আরো বলেন, গতবারও তারা সর্বনিম্ন দরদাতা ছিল। কিন্তু কাজ দেয়নি। এবার কিভাবে সেটাও বুঝতে পারছি না। তবে কোন অনিয়ম করে কাজ নেবেন না বলে তিনি জানিয়েছেন।