নিজস্ব প্রতিবেদক
অধ্যাপক খোন্দকার কামাল হাসান ৩ মাস আগে হয়েছিলেন ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা)। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুবিধাভোগী হিসেবে চিহ্নিত এই অধ্যাপক ৩ মাসের মাথায় হলেন যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান। মঙ্গলবার তিনি নতুন কর্মস্থলে যোগদানও করেছেন। গত বছরের ২৪ অক্টোবর তিনি বগুড়া সরকারি আজিজুর হক কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে ওএসডি হন। তার বিরুদ্ধে ছিল তহবিল লোপাটের অভিযোগ। তাছাড়াও আজিজুল হক কলেজে যোগদানের পরপরই তিনি বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে দলীয় পরিচয় দেন। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালে তার কার্যালয়ের সামনেই ছাত্রদের উপর বোমা হামলা চালানো হয়। সে সময় তিনি ছাত্রলীগ (নিষিদ্ধ সংগঠন) কর্মীদের সাথেই ছিলেন বলে অভিযোগ।
মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে অধ্যাপক খোন্দকার কামাল হাসান যশোর শিক্ষা বোর্ডে চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন। ওএসডি হওয়া বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মর্জিনা আক্তারের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেন। বোর্ডের কর্মকর্তা কর্মচারীদের একাংশ তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়।
খোন্দকার কামাল হাসান ১৪তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) নিয়োগ পান ১৯৯৩ সালে। চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার বাসিন্দা এ কর্মকর্তার প্রথম কর্মস্থল মেহেরপুর সরকারি কলেজ। ১৯৯৪ সালের নভেম্বরে তিনি সরকারি আজিজুল হক কলেজে বদলি হন। ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি সেখানে অবস্থান করেন। ২০১১ সালে তিনি বগুড়ার গাবতলী সরকারি কলেজে উপাধ্যক্ষ হিসাবে নিয়োগ পান। ২০১৮ সালে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পান। ওই সময় মুজিবনগর সরকারি ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষ হিসাবে যোগদান করেন। ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে অধ্যক্ষ হিসেবে বদলি সরকারি আজিজুল হক কলেজ। মাত্র ১০ মাস অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন। এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে তহবিল তসরুপের অভিযোগ ওঠে।
২০২৪ সালের সেপেম্বর মাসে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য মতে, বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ থাকাকালে অতিরিক্ত কর্মচারী দেখিয়ে অত্যাবশ্যকীয় কর্মচারী তহবিলের টাকা উত্তোলন, ভুয়া ব্যয় দেখিয়ে বিভিন্ন তহবিলের টাকা লোপাট, ম্যাগাজিন প্রকাশ না করেই তহবিল থেকে টাকা উত্তোলন, বাস না চালিয়ে তেল খরচ দেখিয়ে তহবিল লোপাট ও অন্যান্য তহবিলে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। তার আগের অধ্যক্ষ শাহজাহান আলীর বিরুদ্ধে ১৫ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ দুদকে তদন্তাধীন রয়েছে। পূর্বসূরীর ধারাবাহিকতায় খোন্দকার কামাল হাসানও লুটপাট করেন বলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন। অবশ্য ওই সময় এসব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত ছাড়া কোনো অর্থ ব্যয় হয় না। বিভিন্ন খাতে ব্যয়ের জন্য আলাদা কমিটিও আছে। কলেজ তহবিল থেকে অর্থ লুটপাটের সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীদের থেকে আদায় করা ফি আইন ও বিধি মেনেই ব্যয় করা হয়।’
আওয়ামী লীগের প্রতি তার আনুগত্যের প্রমাণ সব সময় ছিল। ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর তিনি অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। ১৯ নভেম্বর দলীয় আনুগত্যের পরিচয় দিতে ছুটে যান বঙ্গবন্ধুর মাজারে। কলেজটির ওয়েবসাইটে তার সেই সময়ের ছবি এখনো আছে।
ছাত্র জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময়ও তার ভূমিকা ছিল বিতর্কিত। ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর ককটেল হামলা হয়। এতে কলেজের স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষের চার শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। প্রশাসন ভবনের সামনে আন্দোলনকারীদের মিছিলের উপর বোমা হামলা হয়। এ সময় প্রশাসন ভবনে ছিল ছাত্রলীগ (নিষিদ্ধ সংগঠন) নেতাকর্মীরা। তাদের সাথে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়। সে সময় কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক খোন্দকার কামাল হাসান সাংবাদিকদের জানান, কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করেন। এরপর প্রশাসন ভবনের সামনে সিটে বসে থাকা ছাত্রদের ওপর কে বা কারা ককটেল হামলা চালায়। এতে চার ছাত্র আহত হয়েছেন। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তার চেম্বারের সামনে ছিল।’ কারা ককটেল হামলা চালিয়েছে সে ব্যাপারে অধ্যক্ষ কিছু মন্তব্য করতে পারেননি তবে বলেন, ‘বিষয়টি প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা তথ্য সংগ্রহ করেছে। তারা হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে।’
বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর আওয়ামী লীগ সরকাররের কর্মকান্ডের সাথে সক্রিয় থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা। এ সময় বিতর্কিতদের বদলি করা হয়। আওয়ামী লীগের সহযোগী হিসেবে চিহ্নিতদের করা হয় ওএসডি। ২০২৪ সালের ২৪ অক্টোবর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে একযোগে ৩৯ জনকে বদলি ও পদায়ন করা হয়। সেই তালিকার ১নম্বর ক্রমিকেই নাম ছিল অধ্যাপক খোন্দকার কামাল হাসানের। ওই তালিকায় অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক পদ মর্যাদার ১০জনকে ‘অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি’ বা বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করা হয়।
তবে নিজেকে আওয়ামী বিরোধী প্রমাণ করতে তিনি নিজের পরিচয় লিপিতে উল্লেখ করেছেন, ‘২০২২ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারপন্থী শাহেদ-রেহানা প্যানেলের বিরুদ্ধে নোমানী-শওকত প্যানেল হতে নির্বাচন করে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন এবং পূর্ণমেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন।’
সর্বশেষ
- নারী বিভাগের ফাইনালে রিপন অটোস স্পোর্টস একাডেমি
- নেতাকর্মীর পদচারণায় মুখর যশোর বিএনপির কার্যালয়
- ঢাকাস্থ বৃহত্তর যশোর সমিতির নির্বাচনে মনোনয়নপত্র ক্রয়
- জিয়ার আদর্শ বিক্রি করে বিএনপি পাঁচবার দুনীর্তিতে চ্যাম্পিয়ন করেছে : যশোরে ফয়জুল করীম
- সব স্তরে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা প্রবর্তনের দাবিতে মানববন্ধন
- যশোরে কৃত্রিম সংকটের নামে বাড়তি দামে সার বিক্রি
- যশোরে অনূর্ধ্ব-১৫ বালক ও বালিকা সাঁতার প্রতিযোগিতা মঙ্গলবার
- যশোরে প্রথমবার ৩ এক্স ৩ বাস্কেটবল