নিজস্ব প্রতিবেদক
বেনাপোল দিয়ে ভারতে যেতে পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে যেন দুর্ভোগের শেষ নেই। সেখানকার কর্মকর্তাদের খামখেয়ালিপনা ও কাজে ধীরগতির কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন ভাল মানুষ। আর ওপারে পৌঁছানোর পরিবর্তে পরপারে চলে যাচ্ছেন অনেক অসুস্থ রোগী। সর্বশেষ শনিবার (৩০ মার্চ) দুপুরে যশোর শহরের বকচরের নূর ইসলাম নামে মেডিকেল ভিসার এক পাসপোর্ট যাত্রী ভারতে ঢোকার জন্য শূন্যরেখায় অপেক্ষা করতে করতে মারা গেছেন। দীর্ঘ লাইনে রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকে অসুস্থ নুর ইসলাম ঘটনাস্থলেই মারা যান। তার পাসপোর্ট নম্বর অ০১১৩১৭২৭। এমন ঘটনা এর আগেও অনেক হয়েছে। কিন্তু কোন প্রতিকার নেই পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে কর্মরতদের। এর আগে ২০২২ সালের ৮ নভেম্বর বেনাপোল সীমান্তে দীর্ঘলাইনে অসুস্থ হয়ে মারা যান বিপ্লবী দাস। তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ফুল বাগান এলাকার রবিতোষের স্ত্রী।
২০২১ সালের ১৯ সেপ্টম্বর বেনাপোল ইমিগ্রেশনে আব্দুর রহিম (৪৮) নামে এক বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রী হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। তিনি ঢাকার দক্ষিণ খান এলাকার মো. জহিরুল হকের ছেলে।
২০১৯ সালের ২ মে বেনাপোল চেকপোস্টে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে দেবেন্দ্র চন্দ্র দাস (৫০) নামে এক পাসপোর্টধারী যাত্রী মারা যান। দেবেন্দ্র চন্দ্র দাস নারায়ণগঞ্জ জেলার ৪২৫/৯ ডিপি রোড এলাকার মৃত শশী চন্দ্র দাসের ছেলে।
বেনাপোল-পেট্রাপোল নো-ম্যানসল্যান্ডে একাধিক পাসপোর্টধারী যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়ার সময় বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের কার্যক্রম তাড়াতাড়ি সম্পন্ন হলেও ভারতীয় ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের কাজ সম্পন্ন হতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লেগে যায়। সে দেশের কাস্টমস ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তারা ইচ্ছামতো কাজ করেন। ইমিগ্রেশনে পর্যাপ্ত ডেস্ক থাকলেও অফিসার বসেন মাত্র কয়েকজন। অথচ বাংলাদেশ অংশের ইমিগ্রেশনে সব ডেস্কেই অফিসার বসেন। কাজও হয় দ্রুত। পাসপোর্টধারী যাত্রীদের কোনও ভোগান্তি হয় না।’
ভারত ভ্রমণে যাওয়া অন্য এক যাত্রী বলেন, ‘ভারতে গিয়ে বাংলাদেশি যাত্রীরা রীতিমতো ডলার খরচ করে থাকেন। কিন্তু ন্যূনতম সম্মান তাদের দেখানো হয় না। ভারত অংশে নো-ম্যান্সল্যান্ডে খোলা আকাশের নিচে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তাদের। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় মাঝে মাঝে একটু বেলাইন হলে সে দেশের বিএসএফ লাঠি নিয়ে মারতে আসে। চোখ গরম দিতে থাকে আর বলে, লাইন কোনোরকম নাড়াচাড়া হলে খবর আছে। পশুর মতো আচরণ করা হয় পাসপোর্টধারী যাত্রীদের সঙ্গে। এতে মানুষের মাঝে ভয়ভীতি কাজ করে থাকে। অনেকের সঙ্গে থাকা বাচ্চারা লাঠি দেখে চিৎকার করে কান্নাকাটি করতে থাকে। যে সমস্ত বাংলাদেশিরা ভিসা নিয়ে ভারতে যান তারা যে তাদের কাছে কত অসহায় তা বলে বোঝানো যাবে না।’
সর্বশেষ নুর ইসলামের মারা যাওয়ার বিষয়ে বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, ‘ওই যাত্রী মেডিকেল ভিসা নিয়ে চিকিৎসার জন্য ভারত যাচ্ছিলেন। আমাদের এখান থেকে দ্রুত ছাড় দেওয়া হলেও ওপারের ইমিগ্রেশনের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে তিনি সম্ভবত হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। ভারতের ইমিগ্রেশনে রোগীদের জন্য আলাদা কোনো কাউন্টার না থাকায় মেডিকেল ভিসা নিয়ে যাওয়া যাত্রীদের লম্বা লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এতে অসুস্থ হয়ে পড়েন।’
ভারতগামী ভুক্তভোগী পাসপোর্টধারীরা জানান, বেনাপোল ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম দ্রুত শেষ হলেও ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম সারতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয়। এসময় কেউ অসুস্থ হলেও বাইরে যাওয়ার সুযোগ থাকে না। এর আগেও অসুস্থ হয়ে অনেক পাসপোর্টধারীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।