খবর রাখে না কৃষি বিভাগ
সালমান হাসান: যশোরের মণিরামপুর উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামে ওলের চাকি উৎপাদনে অর্থনীতিতে চলছে নিরব বিপ্লব। মৌসুম আসলে গ্রামের বেশির ভাগ চাষি ঝুঁকে পড়েন ওল চারার আবাদে। ফসলটির চাষাবাদে যুক্তরা গড়ে তুলেছে ওল কচুর বিশাল এক বাজার। হাটবার ছাড়াও বাজারের আড়তগুলোয় ফসলটির বিক্রি হয় প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকার। এক মৌসুমে কোটির টাকার ওপর ওলের চাকি বিক্রি হয়। যশোরের মণিরামপুরের বাসুদেবপুরে ফসলটির এবার মৌসুমের বেচাবিক্রি জমে উঠেছে পুরোদমে। ফলে ওল-চাকির বাণিজ্যিক চাষাবাদ ঘিরে গ্রামটির অর্থনীতির এখন চাঙ্গাভাব।
বাসুদেবপুর বাজারের প্রায় পঞ্চাশটির মত আড়ত থেকে প্রতিদিন একশ মণের ওপর ওলের চাকি বিক্রি হয়। ফসলটির উৎপাদকারীদের হাত ধরেই এই বাজার গড়ে উঠেছে। যশোরসহ আশপাশের জেলা থেকে ওলের চাকি নিতে আসেন ক্রেতারা। বাসুদেবপুরে প্রতি মৌসুমে কোটি টাকার ওলের চাকি উৎপাদন ও বিক্রি হয়, যার ৮০ ভাগ উৎপাদন হয় ওই গ্রামেই। বাকিটা বাইরে থেকে আনা হয়।
কৃষকদের বিপুল পরিমাণ আবাদ ঘিরে সেখানে ৫০টির মত আড়ত গড়ে উঠেছে। এসব আড়তে বাসুদেবপুরের জমিতে উৎপাদিত ওলের চাকি এনে বিক্রি হয়। আড়তগুলোতে গড়ে ৪০ থেকে ৫০ মণ ওলের চাকি বিক্রি হয় প্রতিদিন। তবে বাসুদেবপুরের এই কৃষি অর্থনীতির হিসেব জানে না জেলার কৃষি দপ্তর। ওল চাষাবাদের তথ্য থাকলেও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর অফিসের কাছে চাকির আবাদের কোন তথ্য নেই।
বাসুদেবপুরসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের শতাধিক বিঘা জমিতে ওলের চাকির উৎপাদন হলেও খবর রাখেনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর উপ-পরিচালকের কার্যালয়। কন্দ জাতীয় এই ফসল চারা নিয়ে আলাপচারিতায় ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক দীপঙ্কর দাশ বলেন, কুষ্টিয়ায় ওলের চাকির প্রচুর উৎপাদন হয়। বাসুদেবপুরে অনেকগুলো আড়ত আছে। কুষ্টিয়া থেকে তারা ওলের চাকি এনে বিক্রি করেন।
চাষিরা জানান, বাসুদেরপুরে একশ বিঘার ওপর ওলের চাকির আবাদ হয়। লাভজনক হওয়ায় বছরের পর বছর ধরে ফসলটির আবাদ চলে আসছে। প্রতিবছর এখানে ৭ থেকে ৮ হাজার মণ চাকির উৎপাদন ও বিক্রি হয়। ফাল্গুন থেকে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ এই তিন চার মাসের ওলের চাকির ব্যবসা ঘিরে চাঙ্গা হয়ে ওঠে বাসুদেবপুর বাজার। ওলের চাকির বেচাবিক্রি থেকে চাষিদের ঘরে এই সময়টায় পর্যাপ্ত সমাঘম ঘটে। তাই মৌসুমের এই ব্যবসা ঘিরে চাষিরা বছরভর অপেক্ষায় থাকেন আগ্রহভরে।
চাষিরা জানান, একেক বিঘা জমিতে ওলের চাকির ফলন হয় ৭০ থেকে ৮০ মণ। মানভেদে এসব চাকি ২৫০০ থেকে ৩০০০ হাজার কেজি মণ দরে বিক্রি হয়। আড়তগুলোতে কেজি দরে বিক্রি হয় এটি। ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম ওজন হলে এগুলো বাজারে তোলা হয়। পূর্ণাঙ্গরূপে বড় করে তরকারির হাটে-বাজারে বিক্রির জন্য কৃষকরা কিনে নিয়ে যান। চৈত্র মাসে জমিতে ওলের বীজ রোপণ করতে হয়। ওলের পূর্ণতা পেতে পুরো ছয় মাস সময় লাগে।
কৃষক মাহাবুবুর রহমান জানান, বাসুদেবপুর ছাড়াও আশপাশের গ্রামেও ওলের চাকির চাষবাদ হয়। লাভজনক হওয়ায় নিজের ছাড়াও বাড়তি জমি লিজ নিয়েও এটির চাষাবাদ করেন অনেকে। তিনি জানান, বিঘা প্রতি আবাদে ৭০ থেকে ৮০ মণ ফল আসে। এক্ষেত্রে আবাদ খরচ হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে আড়তে নিয়ে বিক্রি করেন।
সম্প্রতি বাসুদেবপুর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আড়তগুলোয় ক্রেতাদের ভিড়। দাড়িপাল্লা ধরে ক্রেতাদের ফরমায়েশ মোতাবেক চাকি মাপায় ব্যস্ত বিক্রেতারা। খুব সকাল করে ক্রেতারা ওলের চাকি কিনতে চলে আসছেন। আড়তে স্তুপ জমা করে রাখা থেকে পছন্দ মতন আকৃতির চাকি দরদাম করে কিনে ফিরে যাচ্ছেন। যশোরের বাইরে থেকেও ক্রেতারা আসছেন।
কাদের নার্সারির সত্বাধিকারীদের একজন আব্দুর গফফার জানান, এমনও অনেক দিন যায় যেদিন একেকটি আড়তে ৩ থেকে ৪ মণ ওলের চাকি বিক্রি হয়। এটির ব্যবসা মূলত ‘সিজনাল’ (মৌসুমি) ফাল্গুন থেকে চৈত্র-বৈশাখ পর্যন্ত চলে।