নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর -৩ ( সদর) আসনের শহরের ভোট কেন্দ্রগুলোতে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোটার উপস্থিতি খুবই কম ছিল। ভোটের আগের রাত ও সকালে শহরের ১০টি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটায় আতঙ্কে ভোটার উপস্থিতি কম বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
নির্ধারিত সময় সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় ভোটগ্রহণ। গ্রাম পর্যায়ে কনকনে শীত উপেক্ষা করে ভোর থেকেই ভোট কেন্দ্রে কিছু ভোটার উপস্থিত হন। তবে শহরের আমিনিয়া আলিয়া মাদ্রাসা, আদর্শ বহুমুখী বকলিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সম্মিলনী ইনস্টিটিউট, আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজ, এমএম কলেজ,
জিলা স্কুল, কালেক্টরেট স্কুল, এমএসটিপি স্কুলসহ ১০টি কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি খুবই কম দেখা গেছে। এসব এলাকার কয়েকজন জানান, ভোট দেয়ার আগ্রহ কমে গেছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটেছে। তাই এক ধরণের আতংক সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে ভোটারের উপস্থিতি কমেছে। তবে দুপুর সাড়ে ১২টার পর ভোটার উপস্থিতির কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
যশোর আমিনিয়া আলিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে মোট ভোটার ২৯৬০। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৪৩৭ ভোট প্রদান করেন। এ তথ্য দিয়েছেন প্রিজাইডিং অফিসার সুদীপ কুমার ঘোষ।
যশোর আদর্শ বহুমুখী বকলিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার স্বরূপ কুমার দাস বলেন, এ কেন্দ্রের মোট ভোটার ২৮২৩। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ২৭০টি।
সম্মিলনী ইনস্টিটিউট কেন্দ্রে মোট ভোটার ২৫৭৪। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোট কাস্ট হয়েছে ৩৬৭। প্রিজাইডিং অফিসার মাকসুদ আল হাবীব এ তথ্য জানান।
শংকরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আব্দুর রহিম বলেন, সকাল থেকে কেন্দ্রটি স্বাভাবিক ছিলো। হঠাৎ করে ভোট শুরুর আধা ঘণ্টা আগে ককটেল বোমা বিস্ফোরণ করে দুবৃর্ত্তরা। এতে এক আনসার সদস্য আহত হয়েছে। তাকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, কেন্দ্রে ভোটারদের আতংক সৃষ্টির লক্ষ্যে দুবৃর্ত্তরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে এখন ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু রয়েছে।’
সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে শহরের শংকরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এখনো ভোট দেয়নি। ভোটের আগের রাতে ও ভোটের দিন সকালে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটেছে। এতে এলাকার ভোটারদের মাঝে আতংক সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই আসেনি ভোট দিতে। পরিবেশ ভালো হলে ভোট কেন্দ্রে যাবো।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, যশোর শহরের শংকরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ককটেল বোমা বিস্ফোরণ করেছে দুবৃর্ত্তরা। আজ রোববার ভোট শুরু হওয়ার আধা ঘণ্টা আগে এ ঘটনা ঘটে। এসময় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য মণিরামপুর উপজেলার এড়েন্দা গ্রামের মোতালেব হোসেনের ছেলে মারুফ হোসেন (২২) আহত হয়েছেন। এর আগে শনিবার রাত ৮টার দিকে যশোর শহরতলীর শংকরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে ককটেল বোমা বিস্ফোরণ করে দুর্বৃৃত্তরা। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ওই এলাকার সরকারি এনএম খান প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের পেছনে পরপর তিনটি ককটেল নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। এছাড়া এদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে যশোর শহরের বকচর এল মার্কেটসংলগ্ন এলাকায় যশোর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহিত কুমার নাথের (ঈগল) কার্যালয়ের সামনে ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় হাতেনাতে এক যুবককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে স্থানীয়। এর আগে নওয়াপাড়া ইউনিয়নে কিসমত নওয়াপাড়ার মেহগনি তলা কেন্দ্রে, রেল স্টেশন মাদরাসা রোডে, ঘোপ মাহামুদুর রহমান স্কুলের সামনে ককটেল নিক্ষেপ করে দুবৃর্ত্তরা।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোরের ৬টি সংসদীয় আসনে ভোটযুদ্ধে ৩২জন প্রার্থী লড়ছেন। নৌকার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র ৮ প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। ভোটে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে মূল লড়াইয়ের আভাস মিলছে। জেলায় ৮২৫টি ভোটকেন্দ্রে ৫ হাজার ২১৭টি ভোট কক্ষে ২৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫৫ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার হলেন ১১ লাখ ৭৬ হাজার ১০৫ জন নারী ১১ লাখ ৬২ হাজার ৯৩৫ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার হলেন ১৫ জন।
এদিকে জেলার ছয়টি আসনের ৮২৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২৭৫টিকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। যা মোট কেন্দ্রের প্রায় ৩৫ শতাংশ। এসব কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ নজরদারিতে রাখছে পুলিশ-প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থা। সাধারণ ভোটকেন্দ্রের তুলনায় গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে বলে জানান যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার। তিনি বলেন, দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনে নিরাপত্তা দিতে জেলায় ২৫০০ পুলিশ সদস্য, ১০ হাজার আনসার সদস্য, ৪৫০ বিজিবি সদস্য, সেনা সদস্য, ম্যাজিস্ট্রেটসহ গোয়েন্দা বাহিনীর ১৬ হাজার সদস্য নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়া সাদা পোশাকে গোয়েন্দাবাহিনী কাজ করছে। নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো রয়েছে যশোরের সকল কেন্দ্র।