সুনীল ঘোষ
যশোরাঞ্চলে দু’দিনের ব্যবধানে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ঘন কুয়াশার চাঁদরে ঢাকা পড়েছে দক্ষিণাঞ্চল। যেকারণে দৃষ্টি সীমা ১শ গজের নিচেই নেমে এসেছে। মঙ্গলবার রাত থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত যশোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় সকাল ৯টা পর্যন্ত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যশোরে বাতাসের আর্দ্রতা রেকর্ড করা হয় ৭৬ শতাংশ। তবে চুয়াডাঙ্গায় বাতাসের আর্দ্রতা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৯ শতাংশে। আর্দ্রতা বৃদ্ধি ও শৈতপ্রবাহ অব্যাহত থাকায় এবং সূর্য্যরে আলো না দেখা দেয়ায় শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। মঙ্গলবার ঘনকুয়াশার কারণে যশোরাঞ্চলে দেখা মেলেনি সূর্যের মুখ।
এদিক ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রেকর্ড সংখ্যক শিশু ও বৃদ্ধ ভর্তি হয়েছেন। একই সময়ে হেডলাইট জ¦ালিয়ে ও কমগতিতে গাড়ি চালানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সোমবার গভীর রাতে শহরের স্টেশন, আদালত চত্বর, শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানা ও চৌরাস্তাসহ বিভিন্ন ছিন্নমূল মানুষকে জবুথবু অবস্থায় রাত কাটাতে দেখা যায়। মঙ্গলবার সকালে দড়াটানা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় বেশ কয়েকজনকে ছিড়া-ময়লা বস্ত্রে বসে থাকতে দেখা যায়।
যশোর জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান জানান, শীতার্ত মানুষের জন্য কাজ করছে প্রশাসন। ইতিমধ্যে জেলার প্রত্যেকটি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কম্বল পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন স্থানে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে।
যশোর বিমান বাহিনীর মতিউর রহমান ঘাঁটি আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য মতে, মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বেলা ১১টার পর তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। সন্ধ্যা ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৭৬ শতাংশ। শৈত প্রবাহ অব্যাহত থাকায় শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে জানিয়ে আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয় রাত যত গভীর হবে; তাপমাত্রা কমে শীতের তীব্রতা ততই বাড়তে থাকবে। আগামী শুক্রবার থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হতে থাকবে বলে জানানো হয়।
এরআগে ৩০ ডিসেম্বর যশোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু তখন শৈতপ্রবাহ কম থাকায় শীতের তীব্রতা এতটা বেশি অনুভূত হয়নি। একই সময়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল চুয়াডাঙ্গা জেলায়। সেখানে তাপমাত্রা নেমেছিল ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার অফিসের ইনচার্জ রকিবুল হাসান জানান, দক্ষিণাঞ্চলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে। কিন্তু চুয়াডাঙ্গায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল সবচেয়ে বেশি ৯৯ শতাংশ। তাছাড়া হিমেল বাতাস শীতের তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে। ঘনকুয়াশার কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে যানবাহনে হেডলাইট জ¦ালিয়ে এবং একদম কমগতিতে গাড়ি চালানোর নির্দেশনা দিয়ে রেখেছে প্রশাসন।
যশোর ও চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, বৃহত্তর যশোরই নয়; গোটা দক্ষিণাঞ্চল কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে। দু’একটি স্থানে এক ঝলক সূর্যের মুখ গেছে।
যশোর জেনারেল হাসপাতাল সূত্রমতে, শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা। প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে। এরবাইরে বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে রোগী ভর্তির খবর পাওয়া গেছে।